কাঁটায় ভরা সরু রড, একবার ছুঁড়লেই দু'ফালা হবে মানুষ! যে বীভৎস অস্ত্র কিনছে চিন

China buys Cold weapons: শোনা যাচ্ছে, পিএলএ এই ধরনের ২,৬০০টি ম্যাসেস কেনার অর্ডার দিয়েছে।

ভারতে আক্রমণ করতে কি বদ্ধপরিকর চিন? ভারত আর চিনের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক আসলে যাচ্ছে কোনদিকে? এসব নীতিগত প্রশ্নের তোয়াক্কা করে না কোনও রাষ্ট্রই। চিন ভারতের সঙ্গে সীমান্ত সমস্যা বিষয়টি নিয়ে বাইরে যাই বলুক না কেন, অন্দরের খবর বেশ অন্যরকম। সামরিক শক্তিকে আরও শক্তিশালী করতে ব্যস্ত বেইজিং। নয়াদিল্লিতে গত সপ্তাহেই G20 বৈঠকের ফাঁকে ভারত ও চিনের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের শান্ত দিকটি যতই তুলে আনা হোক না কেন, যতই সমঝোতার বার্তা দেওয়া হোক না কেন, সূত্র বলছে গালওয়ানের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে। নাহলে এত বিপুল আর ভয়ঙ্কর অস্ত্রশস্ত্র কেন কিনছে চিন?

২০২০ সালের মারাত্মক গালওয়ান সংঘর্ষের সময় ব্যবহৃত অস্ত্রের চেয়েও কঠিন ও মারাত্মক অস্ত্র কিনতে ব্যস্ত চিন। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এই অস্ত্রগুলি লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোলে ভারতীয় সেনাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হতে পারে। সূত্র বলছে, চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) 'কম্বাইন্ড ম্যাসেস' কিনেছে। এই অস্ত্রগুলিকে 'ঠান্ডা অস্ত্র' বলেই ডাকা হয় যা ২০২০ সালে গালওয়ান উপত্যকার সংঘর্ষেও ব্যবহৃত হয়েছিল, যাতে ২০ জন ভারতীয় সেনা নিহত হন। এই কম্বাইন্ড ম্যাসেস হচ্ছে স্পাইক বা সূঁচালো, তীক্ষ্ণ প্রান্তওয়ালা একটি অস্ত্র।

এই মাসের শুরুতেই ভারত ও চিনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে, সীমান্ত সমস্যাটিকে 'যথাযথ জায়গায়' রাখা এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সীমান্তে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে একসঙ্গে কাজ করা উচিত বলেই চিনের বিদেশমন্ত্রী কিন গ্যাং জানিয়েছিলেন ভারতীয় বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে। আর চিনের সেনাবাহিনী ঠিক এই বছরের জানুয়ারিতেই স্পাইকড ম্যাসেস কেনার জন্য টেন্ডার ডাকে। ফেব্রুয়ারিতেই এই অস্ত্র কেনাকাটা চলতে থাকে। মিলিটারি প্রকিউরমেন্ট নেটওয়ার্কের তথ্য বলছে, পিএলএ দু'টি অস্ত্র কেনার দিকে এগিয়েছে। একটি স্রেফ ম্যাসেস, অন্যটি কম্বাইন্ড ম্যাসেস। ভারত এবং চিনের মধ্যে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় এই অস্ত্রগুলিই এখন দুই দেশের কূটনৈতিক অবস্থানের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে।

আরও পড়ুন- ২৭ বছর পর রহস্য উদঘাটন! পুরুলিয়ায় অস্ত্রবর্ষণ ঘটনায় আসলে দায় ছিল কার?

কিছু কিছু প্রতিবেদন অনুযায়ী, এর আগে তিয়ানজিনের পিপলস আর্মড পুলিশ টহল দেওয়ার সময় অপরাধীদের ধরতে এই ম্যাসেস ব্যবহার করত। পিএলএ নিজের সৈন্যদের যুদ্ধে এই ম্যাসেস ব্যবহারের প্রশিক্ষণও দিয়েছে। শোনা যাচ্ছে, পিএলএ এই ধরনের ২,৬০০টি ম্যাসেস কেনার অর্ডার দিয়েছে।

চিন আসলে ঠিক কী কিনছে?

সূত্র বলছে, এই ম্যাসেসের দৈর্ঘ্য প্রায় ১.৮ মিটার। এটি তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত - হাতুড়িওয়ালা মাথা, রড বডি এবং রড ড্রিল। হাতুড়ির মাথাটি প্রায় ৫০ সেমি। এর দুই প্রান্তেই সূক্ষ্ম স্টিলের স্পাইক এবং সূঁচালো কোণ রয়েছে। রড বডিটি জিঙ্ক স্টিলের পাইপ দিয়ে তৈরি।

লম্বা লাঠির মাথাটি লম্বা কাঁটা দিয়ে আবৃত এবং অস্ত্রটি দেখতেই বেশ উগ্র ও মারাত্মক। এই অস্ত্রের একবারের আঘাতে ডামি ম্যানিকুইন কেটে দু'ফাঁক হয়ে যায়।

আরও পড়ুন- আচমকা ভয়াবহ যুদ্ধ সীমান্তে! কোন পথে এগোচ্ছে ভারত-চিন সংঘাত

অস্ত্র কিনতে কোন কোন বিষয়ে জোর দিচ্ছে চিন?

অস্ত্র ক্রয়ের আদেশে দু'টি বিশেষ প্রয়োজনীয়তার উল্লেখ রয়েছে। প্রথমটি হচ্ছে, এই ম্যাসেস স্বাভাবিকের চেয়ে দীর্ঘ হতে হবে। চিনের সোশ্যাল মিডিয়ার গুঞ্জন অনুযায়ী, এই ম্যাসেসগুলি দূর থেকে প্রতিপক্ষকে আঘাত করার জন্য ব্যবহার করা হবে।

দ্বিতীয় যে বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে তা হলো, অস্ত্রটি কম্বাইন্ড ম্যাসেস হতে হবে এবং এটি যেন আলাদাভাবে বহন করা যায়। মানে, প্রয়োজন পড়লে যাতে রড থেকে স্পাইকগুলি আলাদা করা যেতে পারে।

চিনের বিদেশ বিশেষজ্ঞ সুয়াশ দেশাইয়ের মতে, ম্যাসেস এবং কম্বাইন্ড ম্যাসেস আগে মুষ্টিযুদ্ধের জন্য ব্যবহৃত অস্ত্র। পিএলএ'র ওয়েবসাইটে এর উল্লেখ রয়েছে। এগুলি আসলে যে ভারত-চিন সীমান্তেই ব্যবহার করা হবে এ বিষয় কোনও দ্বিমত নেই। এই ধরনের অস্ত্রের কেনাকাটা সাফ বুঝিয়ে দিচ্ছে সীমান্ত সমস্যা বাড়তে চলেছে।

চিনের সোশ্যাল মিডিয়া কী বলছে?

চিনের সোশ্যাল মিডিয়াতে চিনের কিছু নেটিজেন অবশ্য ভয় প্রকাশ করে জানিয়েছেন, তাঁদের অনুমান পিএলএ সাধারণ মানুষের উপরেই এই অস্ত্র ব্যবহার করবে। তবে, ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বিশেষজ্ঞ মনোজ কেওয়ালরামানির মতে, পিএলএ ভারতীয় সেনাবাহিনীকে রুখতে বৈদ্যুতিক শক অস্ত্র তৈরি করছে, নিজেদের অভ্যন্তরীণ কোনও উদ্দেশ্যে নয়।

More Articles