যিশুর জন্মের দুহাজার বছর আগেই জন্ম চকলেটের, চমকে দেবে সেই ইতিহাস
চকলেট বয়সের সীমানা পেরিয়েছে বহুদিন। না, শুধুমাত্র মনোহরণ নয় কখনও কখনও দুরারোগ্য ব্যাধির সঞ্জীবনী মন্ত্র হিসেবেও কাজ করে চলেছে আমার-আপনার সবার প্রিয় চকলেট।
চকলেট- আট থেকে আশি সকলের প্রিয়। বিশ্বজুড়ে চকলেটের জনপ্রিয়তা প্রশ্নাতীত। নানা ভাবে, ভঙ্গিতে, স্বাদে চকলেট মন জিতেছে মানুষের। যদি ভাবা হয়, চকলেটের উৎপাদন শুরু হয়েছে হালে, তাহলে কিন্তু একদমই ভুল ভাবা হবে। আবার যদি চকলেটের ইতিহাস ঘাঁটতে বসা হয়, তাহলেও কিন্তু আমাদের অবাক হতেই হবে। হ্যাঁ, চকলেটেরও রয়েছে সুপ্রাচীন এক ইতিহাস। অবশ্য রকমারি চকলেটের স্বাদগ্রহণে ব্যস্ত আমরা অধিকাংশই সেই ইতিহাস সম্পর্কে বিন্দুমাত্র অবগত নয়। আজকের এই চকলেট কিন্তু একদিনে আসেনি, আধুনিক চকলেটকে পেরিয়ে আসতে হয়েছে বহু চড়াই-উতরাই পথ। আজকে আমরা শুনে নেব চকলেটের সেই গল্প।
প্রথমেই ইতিহাসের পাতা উলটে পিছিয়ে যাওয়া যাক যিশুখ্রিস্টের জন্মের প্রায় দুই হাজার বছর পিছনে। হ্যাঁ, চকলেটের জন্মকথা লুকিয়ে আছে সেই সময়ের গভীরেই। আর সেদিনের চকলেটের জন্মকথার সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে মায়া-আজটেক সভ্যতার মানুষের গল্প। কিন্তু কী এমন করল মায়া-আজটেক সভ্যতার মানুষ, যে আজকের আধুনিক চকলেটের পিছনে তাদের অবদানের কথা স্বীকার করতেই হয়? কারণ সেই সময়ই মায়া-আজটেক সভ্যতায় মানুষ কোকো বিনসের ব্যবহার জানত, অর্থাৎ যা কিনা চকলেট তৈরির মূল উপাদান। এই প্রসঙ্গে বলে রাখা যায়, এই মায়া বা আজটেক সভ্যতার মধ্যেও প্রচলিত ছিল একপ্রকার বিনিময় প্রথা। এই বিনিময় প্রথার প্রধান মাধ্যম ছিল কোকো বিনস। এমনকী, কোকো বিনসকে নিয়ে অন্ধবিশ্বাসও প্রচলিত ছিল মায়া-আজটেক সভ্যতার মানুষের মনে। জন্ম থেকে মৃত্যু, কোকো বিনস ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকত তাদের সঙ্গে।
কিন্তু ইউরোপের বুকে কোন দেশে এই কোকো বিনসের প্রথম দেখা মিলল? উত্তরটা হলো, স্পেন। স্পেনে এই কোকো বিন আমদানি করা হয় সম্রাটদের উপহারস্বরূপ। ১৫০০ সাল নাগাদ স্পেনে প্রথম দেখা মিলল এই কোকো বিনসের। ইউরোপের বুকে কোকো বিনসের খ্যাতি এরপর ছড়িয়ে পড়া ছিল শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু এক বালতি দুধে একফোঁটা গোমূত্র পড়লে যেমন গোটা দুধটা নষ্ট, ঠিক তেমনই কোকো বিনসের মধ্যে ছিল বেশ কিছুটা তেতো ভাব। আর তাতেই তার জনপ্রিয়তায় ঘাটতি দেখা দিচ্ছিল। তবে ১৮২৮ সাল নাগাদ কোকো বিনসের কলঙ্কমুক্তি ঘটল। এক ডাচ রসায়নবিদ বিশেষ কিছু প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কোকো বিনসের তেতো স্বাদ দূর করে দিলেন। বাজারে কিছুদিনের মধ্যেই চলে এল ডাচ চকলেট। কিছুদিনের মধ্যেই ডাচ চকলেট অর্জন করল প্রবল জনপ্রিয়তা।
আরও পড়ুন: ১১ বছরের খুদের আবিষ্কারে মজেছিল গোটা বিশ্ব, যেভাবে এসেছিল কাঠি আইসক্রিম
এরপর চলে যাওয়া যাক ১৮৪৭ সালে। ১৮৪৭ সাল নাগাদ জোসেফ ব্রাইকে আবিষ্কার করলেন চকলেট বার। কী কী উপকরণ লাগত এই চকলেট বার প্রস্তুত করতে? কোকো পেস্ট আর কোকো বাটার ছিল এর মূল উপকরণ।
১৮৪৭-এর পরে প্রায় কুড়ি বছরের অপেক্ষা। ১৮৬৮ সালে আত্মপ্রকাশ করল ক্যাডবেরি নামক একটি সংস্থা। এই ক্যাডবেরি প্রথমে বাজারে আনল চকলেট বার। এমনকী, এই চকলেট প্রবল জনপ্রিয় হয়েছিল আমেরিকান আর্মিদের মধ্যেও। ভারতকে ব্রিটিশরা দেড়শো বছর ধরে পদানত রাখলেও চকোলেটের আমদানিতে ইংরেজদের অবদান অনস্বীকার্য। আর এই ইংরেজ শাসনকালেই কর্নাটক, কেরলের মতো দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে বিপ্লব আসে কোকো চাষের। আর তারপর ধীরে ধীরে চকলেট পেয়েছে আজকের জৌলুস।
২০০৯ সাল নাগাদ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে শুরু হয় 'চকলেট দিবস' পালন। তবে আমাদের মন ভালো রাখতে কিন্তু চকলেটের জুড়ি নেই। হ্যাঁ, চকলেটের ট্রিপটোফেন একটি উপাদান শরীরে ডোপামিন নিঃসরণ বৃদ্ধি করে। যা পক্ষান্তরে ট্রেস হরমোন নিঃসরণকে নিয়ন্ত্রণ করে। এমনকী, ক্যানসার রোধে সহায়তা করে চকলেট।
সুতরাং, মায়া-আজটেক সভ্যতার বাহন আজকের দিনেও একইরকমভাবে সমাদৃত ছোট থেকে বড় সকলের কাছে। "আট থেকে আশি খেতে ভালবাসি"- চকলেট বয়সের সীমানা পেরিয়েছে বহুদিন। না, শুধুমাত্র মনোহরণ নয় কখনও কখনও দুরারোগ্য ব্যাধির সঞ্জীবনী মন্ত্র হিসেবেও কাজ করে চলেছে আমার-আপনার সবার প্রিয় চকলেট।
তথ্য সূত্র:
শুকতারা।