ডাকাতরা না থাকলে জন্মই হত না কেকের? বড়দিনে কেক কাটার যে কারণ অনেকেরই অজানা...
Christmas 2022: কোচি শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার ভেতরে গেলেই রয়েছে ম্যাটানচেরি নামে এক অদ্ভুত শহর।
জন্মদিন থেকে শুরু করে বিবাহ বার্ষিকী, আজকাল কেক ছাড়া যেন সবটাই অসম্পূর্ণ। বাঙালির প্রিয় পায়েসকেও ছাপিয়ে গেছে বার্থডে কেকের স্বাদ। আসলে ব্রিটিশ শাসনের সময় থেকে ধীরে ধীরে এই দেশেও পাশ্চাত্য রীতিনীতি প্রবেশ করতে থাকে মানুষের অস্থিমজ্জায়। তবে ব্রিটিশরা চলে যায় ঠিকই কিন্তু রেখে দিয়ে যায় তাদের ভাবধারা। ১৮৩০ সালে সাহেব ডেভিড উইলসন একটি হোটেলের উদ্বোধনের জন্য প্রথম বাংলায় কেক তৈরি করেন। কলকাতার দ্য গ্রেট ইস্টার্ন হোটেলে আজও পাওয়া যায় নানারকম সুস্বাদু কেক। এরপরই ১৯০২ সালে এক ইহুদি কলকাতার হগ মার্কেটে তৈরি করেন একটি বেকারি শপ। আজও কলকাতা শহরের এই চত্বরে গেলে সেই পুরনো বেকারি দোকানের সামনে ভিড় চোখে পড়ে।
বড়দিনে কেক কাটার ঐতিহ্য ছিল মূলত ইংরেজদের। বড়দিনের আগের দিন উপবাস করে থাকতে হতো এবং পরের দিন কেক কাটার মধ্য দিয়েই ভাঙা হত উপবাস। তবে আজ এর নাম কেক হলেও তখন তা ‘পাম পরিস’ নামেই পরিচিত ছিল। তাহলে এই জনপ্রিয় 'কেক' শব্দটি এল কোথা থেকে? শুনলে অবাক হতে হয়! স্ক্যান্ডিনেভিয়ার এক ডাকাত দলের নাম ছিল ভাইকিং। আর সেই ডাকাত দলের থেকেই আসে কেক নামটি। প্রথমে ‘কাকা' শব্দটির উৎপত্তি হয়, সুইডিশ ভাষায় যার অর্থ জমাট ‘মিষ্টি'। আর সেখান থেকেই চলে আসে বহু প্রচলিত কেক শব্দটি।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের জনপ্রিয় কিছু কেকের গল্প
ম্যাটানচেরি স্পাইস প্ল্যাম কেক
কোচি শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার ভেতরে গেলেই রয়েছে ম্যাটানচেরি নামে এক অদ্ভুত শহর। এর রাস্তা থেকে শুরু করে বাড়ি ঘর সবটাই যেন ইতিহাসে ঘেরা। কুড়ি শতকের একটি জনপ্রিয় মশলার বাণিজ্য কেন্দ্র এই অঞ্চল। শহরের সব গল্পই প্রায় কোনও না কোনও ভাবে খাবারের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। এই অঞ্চলের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ জুড়ে রয়েছে ইহুদিরা। তাই প্রতি বছর ম্যাটানচেরিতে বড় করে বড়দিনের উৎসব উদযাপন করা হয়। আর সেই উপলক্ষ্যেই আসে নানা রকম সুস্বাদু খাবার এবং অসংখ্য পরিমাণে সুস্বাদু কেক। নানা রকম সুস্বাদু খাবারের মধ্যে সবথেকে জনপ্রিয় হল ম্যাটানচেরি স্পাইস প্লাম কেক। গত চার দশক ধরে এই কেক ক্রিসমাস উৎসবের মরশুমকে যেন দ্বিগুণ করে তুলেছে। কোচির পান্ধাল কেক শপেই একমাত্র কোনওরকম ভেজাল ছাড়া এই প্লাম কেক পাওয়া যায়। নানা রকম ফলকে মধুর সঙ্গে মিশিয়ে কয়েক মাস রেখে দেওয়া হয় কেকের উপকরণ হিসেবে। তারপরে এখানকার আইকনিক মশলার মাধ্যমে কেকটিকে বেক করা হয় বাদামী রং না হওয়া পর্যন্ত। গত তিন দশক ধরে পান্ধাল ক্যাফে নিজের শিল্পগুণে এভাবেই সমৃদ্ধ করে চলেছে কোচি শহরকে।
আরও পড়ুন- কেক বানাতে পারেন? শখ পেশা হলে উপার্জন লাখে, কীভাবে জানুন
ওয়ালনাট/ আখরোট কেক
কলকাতা শহরে কেকের রকমফেরের তালিকা বিরাট লম্বা। ক্রিম কেক থেকে শুরু করে ফ্রুট কেক সবেতেই এই শহরের বেকারিগুলি সবসময় ভরপুর। তবে এই এত ফুট কেকের মধ্যে সবথেকে উল্লেখযোগ্য ওয়ালনাট বা আখরোটের তৈরি কেক। এই কেক তৈরির পদ্ধতি বেশ অনেকটাই আলাদা হওয়ার জন্য সব বেকারিতে ওয়ালনাট কেক পাওয়াও যায় না। নরম তুলতুলে এবং অভিনব টেক্সচারের এই কেক শুধুমাত্র দেশে নয় সারা বিশ্বেও ভীষণভাবে বিখ্যাত। ১৯৩০ সালে উভেলিনা সালদানহা এবং তার স্বামী ইগ্নেসিয়াস প্রথম তাঁদের বেকারিতে এই ওয়ালনাট কেক তৈরি শুরু করেন। তারপরেই ধীরে ধীরে মানুষের স্বাদগ্রন্থিতে জায়গা করে নিতে থাকে এই কেক। তাঁদের তৈরি আরও কিছু উল্লেখযোগ্য কেক হল নারকেল ম্যাকারুন, ব্রিটিশ টি টাইম কেক, আমন্ড আইজড ক্রিসমাস লগ, এছাড়াও রয়েছে ব্লুবেরি, লেমন মাফিন সহ আরও অন্যান্য সুস্বাদু কেক।
করমচা কেক
কলকাতার আরও একটি বিখ্যাত কেক হল করমচা কেক। আসলে এই কেকের মূল উপাদানই হলো করমচা। অনেকটা লাল চেরির মতো দেখতে হওয়ায় এটিকে কলকাতা চেরি নামেও চেনা হয়। করমচা, কালো কিসমিস এবং নানা রকম ফলকে এক সপ্তাহের জন্য ভালো করে রোদে শুকাতে দেওয়া হয়। তারপর অন্যান্য উপকরণ যেমন কাজুবাদাম, আখরোট, আদা, অল্প গরম মশলা ইত্যাদি মিশিয়ে তৈরি করা হয় করমচা কেক।
আরও পড়ুন-বড়দিনের মিষ্টিমুখ, ৯০ পেরিয়ে আজও নবীন সালদানহা, রইল তিন নারীর অসাধ্যসাধনের গল্প
হানি কেক
বেঙ্গালুরুর আরেকটি জনপ্রিয় কেক হলো হানি কেক। নাইডু অ্যান্ড সন্স বেকারি হল সেখানকারই একটি বহু পুরনো খাবারের দোকান যা মূলত ১৮৮৮ সাল থেকেই শহরে ব্যবসা নিয়ে জাঁকিয়ে বসেছে। বহু পুরনো এই বেকারিতে পাওয়া যায় হানি কেক এবং মশলা বিস্কুট জাতীয় নানারকম সুস্বাদু খাবার। এক সময় একটি ব্রিটিশ পরিবার থেকেই রুটি তৈরি করা শিখেছিলেন নাইডুর স্ত্রী এবং এই শিল্প শিখিয়েছিলেন তাঁর স্বামীকেও। তারপরেই স্টেশনে রুটি বিক্রি করা থেকে শুরু করেন যাত্রা। রুটি বিক্রির সঙ্গে সঙ্গে নতুন রেসিপিও শিখতে শুরু করেন এবং একটা সময় পর নিজেদের সঞ্চয়ে তৈরি করে ফেলেন এই বেকারি। যদিও ১৯৮৫ সালে এটি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তবে নাইডুর প্রপৌত্র ২০১৮ সালের নতুন নামে এই বেকারি আবারও চালু করেন।