অবসরের মুখে ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, কে হতে পারেন দেশের পরবর্তী প্রধান বিচারপতি?
CJI DY Chandrachud: সুপ্রিম কোর্টের কলোজিয়ামের নিয়ম অনুযায়ী, প্রত্য়েক প্রধান বিচারপতি অবসর গ্রহণের আগে নিজের উত্তরসূরীর নাম সুপারিশ করে যান। আর তেমনটাই করলেন এবার প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়।
দেখতে দেখতে শেষ হতে চলল দেশের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের মেয়াদ। রীতি অনুযায়ী, তাঁর থেকে তাঁর উত্তরসূরী তথা পরবর্তী সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির নাম সুপারিশ করে যাওয়ার কথা তাঁর। তবে তাঁর সুপারিশই চূড়ান্ত নয়। সেই নাম প্রস্তাবে কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদন মেলার পরেই স্থির হবে পরবর্তী প্রধানবিচারপতি। তবে ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের সুপারিশ অনুযায়ী, দেশের পরবর্তী বিচারপতি হতে চলেছেন বিচারপতি সঞ্জীব খান্না।
প্রধান বিচারপতি হিসেবে ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ১০ নভেম্বর। কেন্দ্রের অনুমোদন মিললে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র মোস্ট বিচারপতি হিসেবে সঞ্জীব খান্নার কাছে যেতে চলেছে প্রধান বিচারপতির চেয়ার। দেশের ৫১তম প্রধান বিচারপতি হবেন তিনি। তবে খুব বেশিদিনের জন্য নয়। মাত্র ছ'মাসের জন্য ওই চেয়ারে বসবেন তিনি। কারণ ২০২৫ সালের ১৩ মে অবসর নেওয়ার কথা বিচারপতি সঞ্জীব খান্নারও। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, তিনিই দেশের প্রথম সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হতে চলেছেন, যার এর আগে কোনও হাইকোর্টে প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব সামলানোর অভিজ্ঞতা নেই।
সুপ্রিম কোর্টের কলোজিয়ামের নিয়ম অনুযায়ী, প্রত্য়েক প্রধান বিচারপতি অবসর গ্রহণের আগে নিজের উত্তরসূরীর নাম সুপারিশ করে যান। ধনঞ্জয় যশবন্ত চন্দ্রচূড়ের আগে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ছিলেন ইউ ইউ ললিত। তিনি চন্দ্রচূড়ের নাম সুপারিশ করে যান। যাতে সিলমোহর দিয়েছিল কেন্দ্র। ২০১৬ সালের ১৩ মে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিযুক্ত হন তিনি। ২০২২ সালের নভেম্বরে দেশের প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন চন্দ্রচূড়। সুপ্রিম কোর্টের নিয়ম অনুযায়ী, ৬৫ বছর বয়সে অবসর নিয়ে থাকেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি। সেই মতোই আগামী ১০ নভেম্বর অবসর নিচ্ছেন ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়। আর তার আগে পালা ছিল উত্তরসূরীর নাম ঘোষণার। যেখানে তিনি সুপারিশ করলেন বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার নাম। ইতিমধ্যেই সেই সুপারিশ কেন্দ্র সরকারের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন: ইলেক্টোরাল বন্ড অসাংবিধানিক! মোদি সরকারের প্রকল্প খারিজ সুপ্রিম কোর্টে
১৯৭৭ সালে নয়া দিল্লির মডার্ন স্কুল থেকে পড়াশোনা শেষ করে ১৯৮০ সাল নাগাদ দিল্লির সেন্ট স্টিফেন কলেজ থেকে স্নাতক হন বিচারপতি সঞ্জীব খান্না। এরপর দিল্লি বিশ্ববিদ্যাসয়ের আইন অনুষদের ক্যাম্পাস ল সেন্টার থেকে আইন নিয়ে পড়াশোনা করেন। পারিবারিক ভাবেই দীর্ঘদিন ধরে আইনের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন বিচারপতি সঞ্জীব খান্না। তাঁর মামা বিখ্যাত বিচারপতি হান্স রাজ খান্না, যিনি ১৯৭৩ সালে মৌলিক কাঠামো মতবাদের প্রস্তাব করেন। এডিএম জবলপুর বনাম শিব কান্ত শুক্লা মামলায় ভিন্ন রায় দিয়ে চর্চায় আসেন। তাঁর বাবা ছিলেন বিচারপতি দেব রাজ খান্না। ১৯৮৫ সালে তিনি দিল্লি হাইকোর্ট থেকে বিচারপতি হিসেবে অবসর নেন। সঞ্জীবের মা সরোজ খান্না ছিলেন দিল্লির লেডি শ্রী রাম কলেজের হিন্দির লেকচারার।
বিগত চার দশকেরও বেশি সময় ধরে আইনি পেশার সঙ্গে যুক্ত বিচারপতি সঞ্জীব খান্না। ১৯৮৩ সালে দিল্লির বার কাউন্সিলে আইনজীবী হিসেবে নথিভুক্ত হন তিনি। প্রাথমিক ভাবে তাঁর প্র্যাকটিস শুরু হয় দিল্লির তিস হাজারি কোর্টে। তবে বেশিদিন নয়। এর পরেই তিনি প্র্যাকটিস শুরু করেন দিল্লি হাইকোর্টে। এর মধ্যে আয়কর বিভাগের সিনিয়র স্ট্যান্ডিং কাউন্সিল হিসেবে কাজ করেছেন। ২০০৪ সালে তিনি দিল্লির স্ট্যান্ডিং কাউন্সিল (সিভিল) হিসেবে নিযুক্ত হন। ২০০৫ সালে দিল্লি হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতির পদে নিযুক্ত হন বিচারপতি খান্না। কোনও হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি হওয়ার আগেই ২০১৯ সালে ১৮ জানুয়ারি তাঁকে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। কোনও হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি হওয়ার আগেই ২০১৯ সালে ১৮ জানুয়ারি তাঁকে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। এরপর ২০২৯ সাল নাগাদ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিযুক্ত হন সঞ্জীব খান্না। বিচারপতি খন্না বর্তমানে ন্যাশনাল লিগাল সার্ভিসেস অথরিটির এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান এবং ভোপালের ন্যাশনাল জুডিশিয়াল অ্যাকাডেমির গর্ভনিং কাউন্সিলের সদস্য। ২০২৩ সালের জুন থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের লিগ্যাল সার্ভিস কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন বিচারপতি খান্না।
আরও পড়ুন:ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের গণেশপুজোয় মোদি! ভারতের প্রধান বিচারপতি আদৌ নিরপেক্ষ?
একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায়ের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন বিচারপতি সঞ্জীব খান্না। নির্বাচনী বন্ড মামলা থেকে শুরু করে কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বিলোপ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ মামলার নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে অন্যতম বিচারপতি ছিলেন তিনি। ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল করে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা অবলুপ্তির সিদ্ধান্ত যে অসংবিধানিক নয়, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ এই রায় দিয়েছিলেন। আর সেই বেঞ্চের অন্যতম সদস্য ছিলেন বিচারপতি সঞ্জীব খান্না। নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত মামলাতেও সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ইভিএমের সঙ্গে ১০০ শতাংশ ভিভিপ্যাট মিলিয়ে দেখার মামলা খারিজ করা, প্রধান বিচারপতির দপ্তরকে RTI-এর অধীনে আনার নির্দেশ দেওয়া— এই সব মামলারও অন্যতম বিচারপতি ছিলেন তিনিই।
এই মুহূর্তে বয়সের দিক থেকে তিনি সুপ্রিম কোর্টের দ্বিতীয় বরিষ্ঠ বিচারপতি। সাধারণত দেশের কোনও একটি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি হওয়ার পর তাঁরা সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হন ৷ তবে সেদিক থেকে বিচারপতি খান্না ব্যতিক্রম। তিনিই প্রথম দেশের প্রধান বিচারপতি হতে চলেছেন, যিনি আগে কোনও হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি হননি। সেদিক থেকে দেখতে গেলে একটি নয়া নজির গড়তে চলেছেন বিচারপতি সঞ্জীব খান্না।