করোনার পর কোন ভাইরাস? অতিমারীর ভয়াল দিন ফেরাচ্ছে জলবায়ুর ভোলবদল?
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আশঙ্কা থাকছে অনেক মানুষের গৃহহীন হওয়ার। সেই সংখ্যার মধ্যে অনেকেই জলবায়ু উদ্বাস্তুতে পরিনত হবেন, বাধ্য হবেন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাস করতে।
জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আজকাল অনেক জায়গাতেই অনেক লেখালিখি হচ্ছে। অনেককিছু সামনে আসছে, যা আমাদের মনে যথেষ্ট ভীতির সঞ্চার করছে, বেশিরভাগেরই করছে না যদিও। পৃথিবীতে প্রাণের স্পন্দন মুছে ফেলার মতো তীব্র জায়গায় যাওয়ার অপেক্ষা করতে হবে না আমাদের। তাপমাত্রার সামান্য বৃদ্ধিও ডেকে আনবে মহাবিপদ। সত্যি বলতে, তা ইতিমধ্যেই আনছে। যেমন সম্প্রতি বিজ্ঞানীদের গবেষণায় উঠে এসেছে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যে-কোনও ধরনের সংক্রামক রোগ এবং তার ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে ৫৮ শতাংশ। তা সাধারণ জলবাহিত রোগ হোক, বা প্লেগের মতো মারণ রোগ।
একদল পরিবেশ-বিজ্ঞানী এবং স্বাস্থ্যবিদ এক দশকেরও বেশি প্যাথোজেন-সংক্রান্ত গবেষণাপত্র পড়েছেন এবং সেইখান থেকেই পাওয়া তথ্যের ম্যাপই এই ভয়াবহ সম্ভাবনার কথা জানাচ্ছে। গবেষণা বলছে, ৩৭৫টি সংক্রামক রোগের মধ্যে ২১৮টিই আরও বেশি তীব্র রূপ ধারণ করতে চলেছে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে।
যেমন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বন্যার প্রকোপ বাড়বে, সেই সঙ্গে বৃদ্ধি পাবে জলবাহিত রোগের সংখ্যা। যেমন, হেপাটাইটিস। ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা বাড়াবে মশার বংশবৃদ্ধি। ডেঙ্গি থেকে শুরু করে প্রকোপ বাড়বে ম্যালেরিয়ার। সেই সঙ্গে বাড়বে খরা এবং বৃদ্ধি পাবে ইঁদুরের বাড়বাড়ন্ত, কারণ তারা আরও বেশি করে খাদ্যের খোঁজে গেরস্থালিতে প্রবেশ করবে, সেই সঙ্গে বয়ে আনবে বিভিন্ন রোগ। বাড়বে হান্তাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা।
আরও পড়ুন: কলকাতার বাতাসে বিষ! উদাসীন থেকে কত বড় বিপদ ডেকে আনছে শহরবাসী
মোট কথা, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই ধরনের সংক্রমণের সংখ্যা এবং সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে বহু গুণ। এমতাবস্থায় কোনওভাবেই আশা করা যায় না যে, সমাজ এই প্রতিকূল অবস্থার সঙ্গে মানিয়ে নেবে। সমাধান একটাই। গ্রিনহাউস গ্যাস যাতে কম নিঃসরণ হয়, সেই ব্যবস্থা করতে হবে।
সেই সঙ্গে এই সংক্রমণ রুখতে প্রয়োজন পরিকল্পনা, যা এখন থেকেই করা প্রয়োজন। প্রয়োজন সমস্তরকম সংক্রমণের সম্ভাব্য পথের মানচিত্র তৈরি রাখা। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যেসব ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের বাড়বাড়ন্ত হবে, তাঁদের সম্পর্কেও সম্যক ধারণা রাখা প্রয়োজন।
এই গবেষকরা মূলত দশটি বিষয়ের ওপর জোর দিয়েছেন, যা গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের সঙ্গে সম্পর্কিত। বায়ুমন্ডলীয় তাপমাত্রা বৃদ্ধি, তাপপ্রবাহ, খরা, দাবানল, অতি বৃষ্টি, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধি, সমুদ্রের তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং জমির চরিত্র পরিবর্তন। সেই সঙ্গে এই দশটি বিষয় কীভাবে বিভিন্ন রোগকে প্রভাবিত করে, তার তুলনামূলক এক অধ্যয়ন করেছেন। ৭৭,০০০ গবেষণাপত্র তাঁরা ঘেঁটেছেন। তারপরেই এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন তারা।
দেখা যাচ্ছে, সবথেকে বেশি বৃদ্ধি পাবে মশা এবং মশাবাহিত রোগ, বাদুড়বাহিত রোগ এবং ইঁদুরবাহিত রোগ, এবং এর নেপথ্যে সবথেকে বেশি দায় থাকবে বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া, অতি বৃষ্টি এবং তার কারণে হওয়া বন্যা।
এছাড়াও আশঙ্কা থাকছে ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়াগুলির চরিত্রবদলের, আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠার। যেমন তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে ভাইরাসগুলির প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়া যত বেশি অনিশ্চিত হবে, তত বেশি করে ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়াগুলির বংশবিস্তারের সুবিধে হবে। সেই সঙ্গে প্রথাগত চিকিৎসা এই রোগগুলিকে নিরাময় করতে ব্যর্থ হবে।
একদিকে ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়াগুলি যত শক্তিশালী হবে, তত বেশি মানুষের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমবে। একেই জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আশঙ্কা থাকছে অনেক মানুষের গৃহহীন হওয়ার। সেই সংখ্যার মধ্যে অনেকেই জলবায়ু উদ্বাস্তুতে পরিনত হবেন, বাধ্য হবেন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাস করতে। সেই পরিবেশে আরও বেশি রোগ ছড়াবে, এবং মহামারীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পাবে।
এখন উপায় একটাই। জলবায়ু পরিবর্তনকে সৎভাবে, সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করা। না হলে আমাদের সামনে অপেক্ষা করছে মহাবিপদ।