কংগ্রেসের শোচনীয় হারের পর ইন্ডিয়ার বৈঠক, কেন যাচ্ছেন না মমতা?

Mamata Banerjee Skips INDIA meeting : মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, কংগ্রেসের নির্বাচনে একা লড়াই করার সিদ্ধান্তের ফলেই 'ভোটের বিভাজন' হয়েছে।

সদ্য হেরেছে কংগ্রেস, হেরেছে বিজেপি বিরোধী শক্তি। লোকসভা ভোটের আগে ইন্ডিয়া নামে বিজেপি বিরোধী জোট গড়ে বিকল্প শক্তি হিসেবে উঠে আসতে চেয়েছিল বিরোধীরা। ফাইনালের ঢের আগে, সেমিফাইনালেই এই পরাজয়কে 'ইন্ডিয়া' জোটের আগাম হার হিসেবেই দেখছেন অনেকে। এই অবস্থায়, বুধবার ইন্ডিয়া জোটের সমন্বয় সভা ডাকা হয়েছে। খুবই কঠিন সময়ে জরুরি বৈঠক! অথচ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বৈঠকে যাবেন না। মমতা তিন রাজ্যে কংগ্রেসের হারের পর বলেছিলেন, কংগ্রেস ইন্ডিয়া জোটের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির ব্যবস্থা করতে পারেনি বলেই বিধানসভা নির্বাচনে হেরেছে। তা বলে কেন ইন্ডিয়া জোটের এত গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ে যাবেন না মমতা?

এই দিন উত্তরবঙ্গে পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি রেখেছে তৃণমূল কংগ্রেস। মমতা বলছেন, "আমি এই মিটিং সম্পর্কে অবগত নই। সেজন্য আমি ইতিমধ্যেই উত্তরবঙ্গে একটি কর্মসূচি নির্ধারণ করেছি। সেখানে আমার সাত দিনের কর্মসূচি রয়েছে। আমি জানলে কি এই কর্মসূচি রাখতাম? আমি নিশ্চয়ই যেতে পারতাম। কিন্তু আমাদের কাছে কোনও তথ্য না থাকায় আমি উত্তরবঙ্গ সফরে যাচ্ছি।" মমতা না হয় যাবেন না, দলের কেউ কি উপস্থিত থাকবেন না ইন্ডিয়ার মিটিংয়ে? সূত্র বলছে, তৃণমূল কংগ্রেসও এই বৈঠক এড়িয়ে যেতে পারে। কিন্তু এত বড় বৈঠক মমতা জানেন না কেন? তাঁকে জানানো হয়নিই বা কেন?

কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়রাম রমেশ বলেছেন, এই বৈঠকটি 'অনানুষ্ঠানিক' ছিল। কংগ্রেস প্রধান মল্লিকার্জুন খড়গে বিরোধী জোটের পরবর্তী বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছিলেন। এর মাঝে তিনটি রাজ্যে বিজেপির কাছে বড় হার বৈঠকটিকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। গত ৩১ অগাস্ট ও ১ সেপ্টেম্বর মুম্বইয়ে বৈঠক হওয়ার পর তিন মাসের ব্যবধানে ফের ইন্ডিয়া জোটের বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই বৈঠকে আগামী বছরের লোকসভা নির্বাচনের পরিকল্পনা তৈরি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন- মোদীকে অপয়া বলে ভোটে জেতা যায়?

বিজেপি মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান এবং ছত্তিশগড়ে দাপিয়ে ভোট কেড়েছে। মধ্যভারতের হিন্দি বলয় বিজেপি নিজের হাতে রেখেছে। কংগ্রেস কেবল তেলঙ্গানায় জিতেছে, তাও সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর পদ নিয়ে অন্তর্দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে। কংগ্রেস তেলঙ্গানার বিধানসভা নির্বাচনে ভারত রাষ্ট্র সমিতিকে (BRS) ক্ষমতাচ্যুত করেছে। কিন্তু বাকি রাজ্যে বিজেপি বিরোধীদের হার শোচনীয়। কংগ্রেস রাজ্য নির্বাচনকে পাখির চোখ করায় বিরোধী জোট অদ্ভুত অচলাবস্থায় পড়ে। ইন্ডিয়া জোটের অন্য দলগুলি এই নিয়ে কংগ্রেসের সমালোচনাও করে। একসঙ্গে নির্বাচন না লড়ার সিদ্ধান্তকেই এই হারের পিছনে দায়ী করেছে অনেক বিরোধী দলই। এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেন, কংগ্রেসের নির্বাচনে একা লড়াই করার সিদ্ধান্তের ফলেই 'ভোটের বিভাজন' হয়েছে।

"কংগ্রেস তেলঙ্গানা জিতেছে। তারা মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় এবং রাজস্থানেও জিতত। কিছু ভোট ইন্ডিয়ার দলগুলোই কেটে দিয়েছে। এটাই সত্য। আমরা আসন ভাগাভাগির ব্যবস্থা করার পরামর্শ দিয়েছিলাম। ভোটের বিভাজনের কারণেই কংগ্রেস হেরেছে,” বিধানসভায় দাঁড়িয়ে বলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লাহও কংগ্রেসকে কটাক্ষ করেছেন। হারের পরে কংগ্রেস জানায় রাজস্থান, ছত্তিশগড় এবং মধ্যপ্রদেশে কেন হার, কোথায় দলের ভুল তা খতিয়ে দেখবে কংগ্রেস।

মল্লিকার্জুন খাড়্গে বলেছেন, "ভুল হয়েছে এবং আমরা অবশ্যই তা সংশোধন করব"। কিন্তু সংশোধন করার জন্য অন্য বিরোধী দলগুলিকে কি সঙ্গে নেবে কংগ্রেস? অনেক বিরোধী নেতা বলছেন, ৩ রাজ্যে কংগ্রেসের হারে ইন্ডিয়া জোট প্রভাবিত হবে না। তবে লোকসভা নির্বাচনের জন্য আরও কঠোর পরিশ্রম করতে হবে জোটকে।

সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব বলেছেন, "যেখানে আমরা শুরু করেছিলাম, ইন্ডিয়াকে সেখানেই ফিরে যেতে হবে। আমরা এই ভেবেই শুরু করেছিলাম যে আমাদের সেই দলগুলোকে সমর্থন করতে হবে যে অঞ্চলে তারা শক্তিশালী। তবেই ২০২৪ সালের নির্বাচন ঐতিহাসিক হবে। পরিবর্তন আসবে।" কিন্তু মুখে বললেও, ইন্ডিয়া জোট কি আদৌ একজোট? মমতা এত বড় বৈঠকে যাবেন না, কংগ্রেস নিজের মতো পর্যালোচনা করবে। ২০২৪ সালের লড়াই নিয়ে নিজেদের মধ্যে কি আগে জোট বাঁধতে পেরেছে বিজেপি বিরোধীরা? প্রশ্ন ভাবাচ্ছে দেশকে।

More Articles