লাইভ স্ট্রিমিং হবে না, মিনিটস লেখাতেই সন্তুষ্ট হবেন জুনিয়র ডাক্তাররা?
Mamata Banerjee Junior Doctor Meeting: আগের মতোই পাঁচ দফা দাবি নিয়ে তাঁরা সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করতে চান বলে জানান ডাক্তাররা।
তিনি নবান্নে অপেক্ষা করেছিলেন। তিনি ধর্নামঞ্চে এসেছিলেন। তিনি বাড়িতেও ডেকেছিলেন। বাড়িতে মুখোমুখি হয়েও শেষ অবধি ভেস্তে যায় বৈঠক। তারপর সোমবার শেষ মেল এসেছিল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালীঘাটের বাড়িতে সোমবার বিকাল ৫টায় আবার জুনিয়র ডাক্তারদের ডাকা হয়। জানা গিয়েছে, অবশেষে শর্ত মেনেছে রাজ্য সরকার। তবে লাইভ স্ট্রিমিং নয়, লেখা হবে মিনিটস। এবারের বৈঠকে যোগ দিতে যাবেন বলেই জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। লাইভ স্ট্রিমিং না হওয়ার কথা কেন এবার মেনে নিলেন আন্দোলনরত ডাক্তাররা?
আন্দোলনকারীরা বলছেন, মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বাড়িতে যখন ডাকা হয়েছিল গতবার, যে বৈঠকে চা খেয়ে যাওয়ার আর্জি জানানো ছাড়া বিশেষ প্রাপ্তি কিছুই হয়নি, সেইদিনের পর আরজি করে ঘটনাপ্রবাহে বিশেষ কিছু বাঁকবদল ঘটেছে। আরজি কর হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে দুর্নীতির অভিযোগে তো গ্রেফতার করা হয়েছিলই। সেদিন ধর্ষণ ও হত্যার মামলাতেও তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। টালা থানার ওসিকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। ফলে আরজি কর কাণ্ডের তদন্ত যে এগোচ্ছে এই নিয়ে জুনিয়র ডাক্তাররা খানিক যে সন্তুষ্ট তা বোঝাই যাচ্ছে। তারপরেও অবশ্য দু’পক্ষই এই বৈঠকে ভিডিও করুক বলে দাবি জানিয়ে এসেছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। তবে একান্তই দ্বিপাক্ষিক ভিডিও না হলে সরকারপক্ষ ভিডিও করুক সেই দাবিও জুড়েছেন চিকিৎসকরা। সেই ভিডিও বৈঠক শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের হাতে দেওয়া হোক বলেও দাবি করেছিলেন তারা। সেটাও সম্ভব না হলে দু’পক্ষই বৈঠকের কার্যবিবরণী লিখবে বলে জানান আন্দোলনকারীরা। আগের মতোই পাঁচ দফা দাবি নিয়ে তাঁরা সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করতে চান বলে জানান ডাক্তাররা।
আরও পড়ুন- দু’দফা দাবি নিয়ে আপস নয়, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের আগেই স্পষ্ট বার্তা জুনিয়র ডাক্তারদের
অবশেষে জানা যায়, শর্ত মেনে নিয়েছে সরকারপক্ষ। মিনিটস লেখা হবে ওই বৈঠকের এবং তা দুই পক্ষের কাছেই থাকবে। উল্লেখ্য, স্বাস্থ্য ভবনের কাছে গত সাতদিন ধরে অবস্থান করছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। প্রবল বৃষ্টি মাথায় ভিজে ভিজে অবস্থা বিক্ষোভ চালিয়ে গিয়েছেন তারা। প্রথম ১০ সেপ্টেম্বর নবান্নে আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিদের মেল করে ডাকা হয়েছিল। তবে ওই মেলের ভাষা ‘অবমাননাকর’ বলে দাবি করে বৈঠকে যোগ দিতে যাননি জুনিয়র ডাক্তারেরা। মেল করেছিলেন স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম। যে স্বাস্থ্যসচিবের তারা পদত্যাগ চাইছেন, সেই তিনিই মেল করায় আরই ক্ষুব্ধ হন আন্দোলনকারীরা। এরপর ১২ সেপ্টেম্বর তাঁদের নবান্নে বৈঠকে ডাকা হয়। মুখ্যমন্ত্রী অপেক্ষা করলেও সেদিন বৈঠক হয়নি কারণ সরকার এই বৈঠকের সরাসরি সম্প্রচারে রাজি হয়নি।
তারপর গত শনিবার সকালে স্বাস্থ্য ভবনের কাছে জুনিয়র ডাক্তারদের ধর্নাস্থলে হাজির হন মুখ্যমন্ত্রী। সন্ধেয় কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে আন্দোলনকারী ডাক্তারদের ডাকা হয় বৈঠকের জন্য। সেখানেও লাইভ স্ট্রিমিং বা ভিডিও করার দাবিতে অনড় ছিলেন ডাক্তাররা। ফলে সেদিনও ভেস্তে গিয়েছিল বৈঠক। ১৬ সেপ্টেম্বর সোমবার অবশেষে, দ্বিপাক্ষিক শর্ত মেনে বৈঠকের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। যদিও রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ জানিয়েছেন, মিটিংয়ের মিনিটসে দুই পক্ষের সই থাকবে ঠিকই তবে আন্দোলনকারীরা নিজেদের মিনিটস লেখার যে প্রতিনিধি রাখার শর্ত দিয়েছিলেন, তা নিয়ে সরকার কিছুই জানায়নি। ইমেলে জানানো হয়েছিল, সরকারের তরফ থেকে এটিই ‘পঞ্চম এবং শেষতম চেষ্টা’।
ইমেলে মুখ্যসচিব লিখেছেন, ‘‘গত ৯ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, ১০ সেপ্টেম্বর বিকাল ৫টা থেকে জুনিয়র ডাক্তারদের কাজে ফিরতে হবে। নাগরিক হিসাবে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ পালন করা আমাদের কর্তব্য। তাই এটা আপনাদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক করানোর জন্য আমাদের তরফে পঞ্চম এবং শেষতম চেষ্টা। খোলা মনে আলোচনার জন্য কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রী বাড়িতে আপনাদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। আমরা বিশ্বাস করি, সুচিন্তার জয় হবেই।’’