কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বনাম মহিলা সাংসদ! আড়াআড়ি ভাঙছে তৃণমূল?

Kalyan Banerjee Vs Mahua Moitra: হোয়াটস্যাপ চ্যাটে কল্যাণ মহিলা সাংসদকে 'ভার্সাটাইল ইন্টারন্যাশনাল লেডি' বলে উল্লেখ করেছেন।

দু'জনেই তৃণমূলের দাপুটে নেতা। দু'জনেই সাংসদ। একজন লড়াকু, অন্যজন 'কু কথা'-র জন্য শিরোনামে আসেন হামেশাই। একই দলের দুই সাংসদই যুযুধান। আর এই সুযোগে মোক্ষম বোমা ফাটিয়েছেন বিজেপি নেতা অমিত মালব্য। এই দুই নেতার মধ্যে একজন শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ তথা আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্যজনের পরিচয় অমিত মালব্যর টুইটে পোস্ট করা একটি হোয়াটস্যাপ চ্যাটের স্ক্রিনশট থেকে সহজেই অনুমেয়। ওই চ্যাটে দেখা গেছে, নিজেরই দলের সাংসদ নেত্রীকে যথেচ্ছ অপমান করছেন, চ্যালেঞ্জ করছেন কল্যাণ। জানা গিয়েছে, নির্বাচন কমিশনের দফতরে তৃণমূলের এই দুই সাংসদের মধ্যে তুমুল ঝগড়া হয়। সেই ঝগড়ার সূত্র ধরেই কল্যাণকে গ্রেফতার করার কথাও বলেন মহিলা সাংসদ। অমিত মালব্য যে স্ক্রিনশটটি পোস্ট করেছেন, তাতে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের আরেক সাংসদ কীর্তি আজাদের কথোপকথন দেখা যাচ্ছে। ওই হোয়াটস্যাপ চ্যাটে কল্যাণ মহিলা সাংসদকে 'ভার্সাটাইল ইন্টারন্যাশনাল লেডি' বলে উল্লেখ করেছেন।

কল্যাণ উল্লেখ করেছেন, ওই মহিলা সাংসদের কোনও 'বয়ফ্রেন্ড' তাঁর পাশে ছিল না। যাঁকে তিনি এখন অ্যারেস্ট করাতে চাইছেন সেই কল্যাণই সমর্থনে দাঁড়িয়েছিলেন ওই সাংসদের। কোথাও নামোল্লেখ করা হয়নি এই দ্বিতীয় সাংসদের, তবে খুব স্পষ্ট ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে তাঁর পরিচয়ের। চ্যাটে, উত্তেজিত কল্যাণকে শান্ত করতে আসরে নেমেছিলেন দুর্গাপুরের সাংসদ কীর্তি আজাদ। তাঁকেও একহাত নিয়েছেন কল্যাণ, সাফ বলেছেন, “আমাকে উপদেশ দিও না কীর্তি। অভ্যন্তরীণ রাজনীতি করার জন্যই তোমাকে বিজেপি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল... তোমার এমন ক্ষমতা যে ক্রিকেটের নির্বাচনে হেরে যাও তুমি! তোমার বন্ধুর হয়ে আমাকে গ্রেফতার করিয়ে দেখাও দেখি কত বড় ক্ষমতা তোমার! চিন্তা করো না, দুর্গাপুরে গিয়ে তোমার মুখোশ খুলে দেব।" তৃণমূলের সাংসদদের এই বিতর্কিত চ্যাট হাতে এসেছে বিজেপির। স্বাভাবিকভাবেই তার যোগ্য ব্যবহার করেছেন অমিত মালব্য। কিন্তু কেনই বা ওই মহিলা সাংসদ কল্যাণকে গ্রেফতার করাতে চাইলেন, কী নিয়ে ঝামেলা?

 

কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, কমিশনের দফতরে জমা দেওয়া স্মারকলিপিতে সই না থাকায় প্রশ্ন তোলেন ওই মহিলা সাংসদ। কল্যাণ সাংবাআদিকদের বলেছেন, এই অভিযোগ শুনে কল্যাণ বলেছিলেন, “নাম নেই তো আমি কী করব। নির্দেশ মতো আমি কাজ করেছি।” সেই থেকেই শুরু ঝগড়া। কল্যাণের অভিযোগ, ওই মহিলা সাংসদ কর্তব্যরত বিএসএফ কর্মীদের ডেকে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করতে বলেন। কল্যাণ এক সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, "আমার মতো লোককে বলছে অ্যারেস্ট হিম! এরা কারা! আমি সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়ে আসা নেতা।” কল্যাণ আরও বলছেন, “ওই মহিলা সাংসদ আমাকে ছোটলোক বলেছে।” সেই অপমানের আঁচ কল্যাণকে কতখানি তাতিয়ে দিয়েছে তার প্রমাণ হোয়াটস্যাপ চ্যাটেই মেলে। জানা যাচ্ছে, ওই মহিলা সাংসদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সমগ্র বিষয়টি জানিয়ে চিঠি লিখেছেন, দলেরই সাংসদের এমন অপমানের বিহিত চেয়েছেন। কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বরবারই অশ্লীল মন্তব্যের জন্য শিরোনামে আসেন। কিছুকাল আগে, সিপিএমের সাংসদ পদপ্রার্থী দীপ্সিতা ধরের বিরুদ্ধেও অশালীন মন্তব্য করেছিলেন কল্যাণ। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কল্যাণের দাবি অনুযায়ী ওই মহিলা সাংসদই কল্যাণকে গ্রেফতার করানোর হুমকি দেন। শুরুটা তিনিই করেন। ওই সাংসদ হোয়াটস্যাপ গ্রুপ থেকেও বেরিয়ে গেছেন। তাহলে কীসের বিহিত চাইছেন তিনি? এত জটিল কেন হলো পরিস্থিতি যে দুই দক্ষ সাংসদ নিজেরা মিটমাট না করে ফেলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে গেলেন। তৃণমূলের সাংসদদের হোয়াটস্যাপ গ্রুপের চ্যাট কেই বা পাঠালেন বিজেপিকে? সত্যিই কি একটি সই নিয়ে এত ঝামেলা?

 

তৃণমূল অন্দরের খবর, এই গৃহযুদ্ধের নেপথ্যে আছে একটি মিষ্টির দোকান! সাংসদদের জন্য যে ক্যান্টিন রয়েছে, সেখানে দিল্লির চিত্তরঞ্জন পার্কের একটি পরিচিত মিষ্টির দোকানের শাখা খুলতে চেয়ে স্পিকারকে একটি চিঠি লেখেন ওই মহিলা সাংসদ, তাতে বেশ কয়েকজন তৃণমূল সাংসদকে সই করতেও অনুরোধ করেন। বিষয়টি কানে যেতেই কল্যাণ তাতে বাধা দেন, বিষয়টি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানান এবং কাউকে ওই চিঠিতে সই না করার নির্দেশ জারি করেন। কল্যাণের বক্তব্য ছিল কোনও বেসরকারি সংস্থার দোকান খোলা বা এই জাতীয় বিষয়ে তৃণমূল উদ্যোগ নিতে পারে না। তখন থেকেই ঝামেলার শুরু।

মিষ্টির দোকান থেকে গড়িয়ে এখন সোজা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোর্টে বল। কল্যাণ স্পষ্ট করে দিয়েছেন, কাউকে ছেড়ে দেওয়ার পাত্র তিনি নন। এদিকে ওই মহিলা সাংসদও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আস্থাভাজন, তৃণমূলের খুব অভিজাত মুখ। তার মধ্যে কল্যাণ কীর্তি আজাদের সঙ্গেও উত্তপ্ত বাক্য মিনিময়ে অপমান করে ফেলেছেন। আর সব নথি গুছিয়ে রেখেছে বিজেপি। ওই চ্যাট থেকে অন্তত এটুকু প্রমাণ হয়, সব সাংসদের মধ্যে সদ্ভাব নেই। এই ফাটল কি দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব আরও বাড়াচ্ছে না? কার পক্ষ নেবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়?

More Articles