'নেতা নয়, কংগ্রেস দল চালাচ্ছে আরবান নকশালেরা'- কেন বলছেন মোদি?

Narendra Modi: কংগ্রেস নেতারা নাকি মুখে রূপোর চামচ নিয়ে জন্মেছেন। গরিবদের জন্য কংগ্রেসের মনে কোনও রকম সহানুভূতি নেই, তোপ মোদির।

'আরবান নকশাল' বা 'শহুরে নকশাল। শব্দটা খুব একটা অচেনা নয়। এতদিন কবি, সাহিত্যিক, আইনজীবী থেকে শুরু করে সাংবাদিক বা সমাজকর্মীদের নামের আগে প্রায়শই এই শব্দবন্ধ বসে যেতে দেখেছি আমরা। যার জন্য বিনাদোষে বছরের পর বছর ধরে জেলে পচেছেন সমাজের সেই সব বিশিষ্ট মানুষ। কবি ভারভারা রাও থেকে শুরু করে আউনজীবী সুধা ভরদ্বাজ, সমাজকর্মী অরুণ ফেরেরা, সাংবাদিক গৌতম নভলখা- এমন অসংখ্য নাম রয়েছে সেই তালিকায়। যাদের নামের আগে অবলীলায় বসিয়ে দেওয়া হয়েছে শহুরে নকশালের তকমা। তবে এবার আর ব্যক্তিবিশেষকে নয়, গোটা কংগ্রেস দলকেই আরবান নকশাল বলে দেগে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সোমবার ভোপালের সভায় এমনই আক্রমণ শোনা গেল প্রধানমন্ত্রীর মুখে।

আজ বলে নয়, যখনই সময় পেয়েছেন কংগ্রেসের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন নরেন্দ্র মোদি। তা রাজনীতির আঙিনায় সেটা কোনও নতুন ব্যাপার নয়। আক্রমণ-প্রতিআক্রমণ লেগেই থাকে বিভিন্ন দলের মধ্যে। এই মূহূর্তে দাঁড়িয়ে বিজেপির সবচেয়ে বড় বিরোধী একক দল যদি কেউ থেকে থাকে, তা হল কংগ্রেস। দেশ জুড়ে বিজেপিকে রুখতে একজোট হয়েছে দেশের সমস্ত বিরোধী দল। সেই ইন্ডিয়া স্বাভাবিক ভাবেই এখন মস্ত মাথাব্যথার কারণ বিজেপির কাছে। আর সেই জোটেও মুখ্য ভূমিকায় রয়েছে কংগ্রেস। ফলে ভোটমুখী দেশে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে যে বিষোদ্গার করবেই বিজেপি, তাতে আর আশ্চর্য কি!

আরও পড়ুন: অভিজ্ঞতাই পুঁজি! ভারতের সব জেলায় একরাত থেকেছেন, দাবি নরেন্দ্র মোদির

সোমবার ভোপালের একটি সভায় গিয়ে কংগ্রেসের উপর এক হাত নিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কংগ্রেস দলটা নাকি আর নেতারা চালান না। চালায় আদতে আরবান নকশালেরা। এখানেই শেষ নয়, মোদির কথায়, কংগ্রেসের সমস্ত ইচ্ছাশক্তি হারিয়ে গিয়েছে। যাঁরা কংগ্রেস দলটির তৃণমূল স্তরের নেতা, তাঁরা সকলে মুখ বন্ধ করে বসে আছেন। প্রথমে কংগ্রেস নষ্ট হয়েছে, তার পর দেউলিয়া হয়েছে, আর এখন সেই দল চালানোর কনট্র্যাক্ট অন্য কাউকে দেওয়া হয়েছে। দলটা আর দলের নেতারা চালান না। বরং সমস্তটাই হয় বাইরে থেকে। স্লোগান থেকে শুরু করে দলের নীতি, সবটাই নির্ধারণ করছে শহুরে নকশালরা। ভোপালের কার্যকর্তা মহাকুম্ভে গিয়ে এমনটাই দাবি করলেন এবার প্রধানমন্ত্রী।

‘Congress with urban Naxalites, party run like a company’: PM Modi in Bhopal

এদিন প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতার সিংহভাগ জুড়েই ছিল কংগ্রেস বিরোধিতা। কংগ্রেস নেতারা নাকি মুখে রূপোর চামচ নিয়ে জন্মেছেন। গরিবদের জন্য কংগ্রেসের মনে কোনও রকম সহানুভূতি নেই বলেও তোপ দেগেছেন মোদি। সে কারণেই গরিব মানুষের বস্তি কংগ্রেস নেতাদের ফটোশুটের জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলেই ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তিনি। দিন কয়েক আগেই কুলিদের সঙ্গে কুলিদের মতো পোশাক পরে ছবি দিয়েছিলেন রাহুল গান্ধী। সেই ছবি ভাইরাল হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। নিন্দুকেরা অনেকেই সে ছবি দেখে 'যেমন খুশি সাজো' বলে আওয়াজ দিয়েছেন। এদিনের বক্তৃতায় নাম না করে সেই ব্যাপারটি নিয়েই কংগ্রেসকে কোণঠাসা করছেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি তাঁর বক্তব্য, বিজেপি সরকার দেশের উন্নতি করে চলেছেন ক্রমাগত, পাশাপাশি বিশ্বের সামনে ভারতকে বড় মুখ করে তোলার চেষ্টাতেও কোনও ফাঁক রাখছে না তারা। তিনি জানান, তাঁর কাছে দেশের মানুষের উপরে আর কিছুই নয়। তাদের যাতে কোনও রকম অসুবিধা না হয়, তা দেখাই কাজ বিজেপি সরকারের।

আরও পড়ুন: মোদিকে ছাপিয়ে যাবেন আদিত্যনাথ? জনপ্রিয়তায় কোথায় দাঁড়িয়ে যোগী?

এদিন বিজেপি কর্মীদের নিয়ে ওই বৈঠকে দলের সমস্ত কর্মীকে নিজেদের একশো শতাংশ দেওয়ার অনুরোধ করেন প্রধানমন্ত্রী। মধ্য়প্রদেশের বিধানসভা ভোটে যেন মধ্যপ্রদেশের একটিও আসন হাতছাড়া না হয়, তার জন্য জানপ্রাণ লড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি কর্মীদের। আগামী পাঁচ বছরও যাতে মধ্যপ্রদেশে বিজেপি-রাজত্ব কায়েম থাকে, তা নিশ্চিত করতে আগেভাগেই ময়দানে নেমেছেন প্রধানমন্ত্রী। এ বছরই মধ্যপ্রদেশ-সহ আরও চার রাজ্যে ভোট। গত ভোটে বিজেপি নিজেদের আসন ধরে রাখতে পারেনি। নিরঙ্কুষ জয় পেয়েছিল কংগ্রেস। ফলে চিরচেনা সেই বিধায়ক কেনাবেচার খেলা খেলে তবে ক্ষমতা নিজেদের হাতে নিতে পেরেছে বিজেপি। ভোটে জিতে সে সময় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন কমলনাথ। সেই সময় ঘোড়া কেনাবেচা করে বিস্তর খেটে মধ্যপ্রদেশে নিজেদের ক্ষমতা কায়েম করেছিল বিজেপি। তবে এখন হাওয়া বদলেছে। ইন্ডিয়া জোটের মাধ্যমে কংগ্রেস ক্রমশ আরও বাহুবলী হচ্ছে। সেই জোট, যা কার্যত ঘুম কেড়েছে বিজেপির। এত সব ঝামেলার মধ্যে ওই সব বিধায়ক কেনাবেচার গোলযোগে না ঢুকে সরাসরি জয় চাইছে মোদি সরকার। আর সেই জন্য গা গরমের প্রথম পর্বটা এবার ভোটমুখী ভূপাল থেকেই শুরু করে দিলেন প্রধানমন্ত্রী।

More Articles