বাজিতে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও দীপাবলিতেই দূষণ-তাণ্ডব, দিওয়ালিতে কী হবে দিল্লির?
Delhi Pollution: বৃহস্পতিবার সারাদিনই ধোঁয়াশায় ঢাকা ছিল দিল্লির বাতাস। শুক্রবার সকালেও সেই স্মগের হাত থেকে রেহাই পেল না রাজধানী। একাধিক জায়গায় কালো ধোঁয়ার চাদর ঘিরে ধরল দিল্লিকে।
দীপাবলির পরের দিন সকালেই বিষাক্ত ধোঁয়ায় জেগে উঠল দিল্লি। আতশবাজির উপর কড়া নিষেধাজ্ঞা, নানা পদক্ষেপ কাজে এল না কোনও কিছুই। কার্যত আরও খারাপ হল বাতাসের গুণগতমান। গত কয়েক দিন ধরেই তলানিতে ঠেকেছিল দিল্লির বাতাসের গুণগতমান (AQI)। বৃহস্পতিবার তা খারাপতমের মাত্রা ছুয়ে ফেলল। দীপাবলিতেই এই অবস্থা হলে দিওয়ালির রাতের পর দিল্লির বায়ুর অবস্থা কী দাঁড়াবে, সেই দুশ্চিন্তাতেই ঘুম ছুটেছে প্রশাসনের।
দূষণ ঠেকাতে বজ্র আঁটুনি প্রতিবছরই থাকে রাজধানী শহর জুড়ে। তবে তার মধ্যে থেকেই দূষণের ধোঁয়ায় ঢাকে দিল্লি। দীপাবলি ও দিওয়ালির দিন দূষণের মাত্রা যাতে শেষ সীমায় না পৌঁছয়, সে দিকে খেয়াল রাখা হয় প্রশাসনের তরফে। চলে বিশেষ নজরদারি। শব্দবাজি থেকে শুরু করে আতশবাজি বিক্রি, মজুত এবং বানানোর উপরেও জারি করা হয়েছিল নিষেধাজ্ঞা। শুধু দিওয়ালিতেই নয়, ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি অবধিই বাজির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে দিল্লি দূষণ নিয়ন্ত্রণ কমিটি। বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছিল অনলাইনে বাজি বিক্রির উপরেও। তবে সবুজ বাজি সেই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েনি। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছিল, দীপাবলির দিন সন্ধে আটটা থেকে দশটা পর্যন্ত সবুজ বাজি পোড়ানোর অনুমতি দেওয়া হবে। দীপাবলির আগে আগেই দিল্লির পরিবেশমন্ত্রী গোপাল রাই ঘোষণা করছিলেন, রাজধানী জুড়ে আতশবাজি নিষিদ্ধ করার জন্য ৩৭৭টি দল গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি জেলায় আতশবাজির রমরমা বন্ধ করতে মোতায়েন করা হয়েছে তাদের।
আরও পড়ুন: বাতাসে শ্বাস নেওয়া ভার, নদীতে বিষ! কোন পথে দূষণ-রাক্ষসকে রুখবে রাজধানী দিল্লি?
দীপাবলির দিন সকাল থেকেই দিল্লির বাতাসের গুণগতমান ছিল খারাপের দিকেই। সকালে দিল্লির AQI ছিল ৩২৮। যা খুব খারাপ পর্যায়ে পড়ে। সিস্টেম অফ এয়ার কোয়ালিটি অ্যান্ড ওয়েদার ফোরকাস্টিং অ্যান্ড রিসার্চ (সফর)-এর তথ্য বলছে, বৃহস্পতিবার আনন্দ বিহারে বাতাসের গুণগত মান ভয়ানক পর্যায়ে পৌঁছেছে। সেখানে একিউআই ৪১৯। আনন্দ বিহারের পাশাপাশি, আলিপুর, অশোর বিহার, আয়া নগর, বাওয়ানা, বুরাড়ী, দ্বারকা এবং বিমানবন্দর এলাকায় বাতাসের গুণগত মান খুবই খারাপ।এ ছাড়াও জাহাঙ্গিরপুরী, মুন্দকা, নারেলা, ওখলা, প্রতাপগঞ্জ, পাঞ্জাবি বাগ, রোহিণী, আর কে পুরম, বিবেক বিহার, ওয়াজ়িরপুরেও বাতাসের গুণগত মান অনেকটাই নেমেছে বলে জানাচ্ছে সফর-এর তথ্য।
বৃহস্পতিবার সারাদিনই ধোঁয়াশায় ঢাকা ছিল দিল্লির বাতাস। শুক্রবার সকালেও সেই স্মগের হাত থেকে রেহাই পেল না রাজধানী। একাধিক জায়গায় কালো ধোঁয়ার চাদর ঘিরে ধরল দিল্লিকে। পরিবেশবিদদের আশঙ্কা, পাঞ্জাব-হরিয়ানায় ফসলের গোড়া পোড়ানো নিয়ন্ত্রণে না আসা, দিল্লির মানুষের দেদার বাজি ফাটানো, গাড়ির ধোঁয়া আর প্রতিকূল আবহাওয়া আগামী দিনে আরও বিপদ বাড়াতে চলেছে দিল্লিবাসীর। শুক্রবার সকালে দিল্লির চল্লিশটি মনিটরিং স্টেশনের বেশিরভাগেরই AQI ছিল বেশ বিপদজ্জনক। এদিন সকালে আনন্দ বিহারের বাতাসের গুণগত মান ছিল ৩৯৫। অশোক বিহারে ৩২৪। বুরারি ক্রশিং-এ ছিল ৩৯৪ । চাঁদনী চকে ৩৩৬। দ্বারকাতে সেক্টর ৮-এ ৩৭৫। আইজিআই এয়ারপোর্টে ৩৭৫। জাহাঙ্গীরপুরিতে ৩৮৭। মুণ্ডকাতে ৩৭০, আরকে পুরামে বাতাসের গুণগতমান ছিল ৩৯৫। যা খুবই খারাপ।
আবহবিদদের অবশ্য দাবি, দীপাবলির পরের দিন এমনটাই হওয়ার ছিল রাজধানীতে। শুক্রবার দিওয়ালির পরে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে বলেই আশঙ্কা করছেন তাঁরা। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ট্রপিক্যাল মেটিওরোলজি (IITM), পুনে জানিয়েছে,শুক্রবার জাতীয় রাজধানীতে বাতাসের গুণমান "খুব খারাপ" (AQI ৩০০ থেকে ৪০০) বিভাগে পৌঁছে যেতে পারে৷
আরও পড়ুন:৫২.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস! দিল্লিতে ভারতের সর্বকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার কারণ কী?
গত বছর দীপাবলিতে বাতাসের গড় গুণগতমান ছিল ২১৮। সেই মাত্রা এবার আগে ভাগেই ছাড়িয়ে গিয়েছে দিল্লি। অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে ফসল তুলে নেওয়ার পর প্রতিবছর জমি পরিষ্কার করতে নাড়া পোড়া, খামারে আগুনের মতো পদক্ষেপ নেন কৃষকেরা। আর রাজধানী এলাকার ভয়াবহ দূষণের নেপথ্যে এই নাড়া পোড়ানোর সমস্যাকেই দায়ী করেছেন পরিবেশবিদেরা। তার উপর যমুনা দূষণ যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, তাতে গোটা দিল্লি জুড়ে জলের সঙ্কট দেখা গিয়েছে। বেশ কিছু দিন ধরেই ভয়াবহ অ্যামোনিয়া দূষণে বিপর্যস্ত নদী যমুনা। যে কারণে দিল্লি জুড়ে তৈরি হয়েছে জলসঙ্কটও। দিল্লিতে ক্ষমতাসীন আপ সরকার অবশ্য যমুনা দূষণের জন্য হরিয়ানার শিল্প বর্জ্যকেই দূষেছে। সোনিয়া বিহার ও ভগীরথীতে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট যমুনা নদীর এই অ্যামোনিয়া দূষণের সঙ্গে লড়ার সর্বৈব চেষ্টা করছে। তবে এই দূষণের প্রভাবে রাজধানী দিল্লিতে জল সরবরাহে টান পড়েছে। দিল্লি জল বোর্ডের তরফে জানানো হয়েছে, যমুনা নদীর ভয়ঙ্কর অ্যামোনিয়া দূষণের কারণে ১ নভেম্বর পর্যন্ত দিল্লির বহু জায়গায় জলের ঘাটতি দেখা যাবে। কারণ এই দূষণের কারণে জল উৎপাদন অন্তত ২৫-৩০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। যার ফল ভুগতে হচ্ছে দিল্লির বাসিন্দাদের। যার জন্য আপ অবশ্য বিজেপি শাসিত হরিয়ানা সরকারকেই দায়ী করেছে। ওই রাজ্য থেকে শিল্পবর্জ্য নদীতে ফেলার কারণেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতি বলে দাবি করা হয়েছে আম আদমী পার্টির তরফে। অবস্থা যেদিকে যাচ্ছে, তাতে দিল্লি কতদিন বসবাসকারীদের বাসের যোগ্য থাকবে, তা নিয়েই বড়সড় প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। দীপাবলির পরেই দিল্লির দিকে তাকানো মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে, শুক্রবার দিওয়ালির পরবর্তী ভোর দিল্লিবাসীর জন্য ঠিক কেমন হতে চলেছে, তা নিয়ে যথেষ্ট দুশ্চিন্তায় পরিবেশবিদেরা।