ভাটনগরে বাংলার নাম উজ্জ্বল করেছেন, চেনেন এই চার বাঙালিকে?
Shanti Swarup Bhatnagar Prize: প্রতিবছরই ২৬ সেপ্টেম্বর, কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চের প্রতিষ্ঠা দিবসের দিন ঘোষণা করা হয় শান্তিস্বরূপ ভাটনগর পুরস্কার। এই বছরটা ছিল ব্যাতিক্রম। সোমবার সিএসআইআর-...
কৃতি বাঙালি। দুই শব্দের এই সহবাসে যে ভুল নেই কোনও, তা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে বারবার। এই যে চাঁদের মাটি শেষমেশ ছুঁয়েই ফেলল ভারত। সেই গোটা কর্মকাণ্ডের নেপথ্যে ছিল যে সংস্থা, সেই ইসরোর ইঞ্জিনিয়ার ও বিজ্ঞানীদের মধ্যে ছিলেন একদল বাঙালি। শিক্ষক দিবসের দিন রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পুরস্কার নিলেন খড়্গপুর আইআইটির এক অধ্যাপক। কোভিডের সময় তিনি বানিয়ে ফেলেছিলেন সস্তায় কোভিড পরীক্ষার যন্ত্র। তাতেই মিলেছে স্বীকৃতি। ঘটনাচক্রে তিনিও বাঙালি। এবার ঘোষণা হল ভাটনগর পুরস্কার বিজয়ীদের নাম। আর তাতেও যে আসন আলো করে বাঙালির নাম থাকবে, তাতে আর আশ্চর্য কী! আর সেই প্রত্যাশা মতোই ২০২২ সালের শান্তিস্বরূপ ভাটনগর পুরস্কার প্রাপকদের তালিকায় রয়েছে চার বাঙালি।
পুরস্কারটি অবশ্য গত বছরের, তবে তার ঘোষণা হয়েছে সদ্যই। দেখা গিয়েছে সাতটি বিভাগে মোট ১২ জন পেয়েছেন ওই পুরস্কার, যার মধ্যে চার জনই জন্মসূত্রে বাঙালি। কর্মসূত্রে অবশ্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছেন তাঁরা। তবে সেই যাত্রার শুরুটা কিন্তু হয়েছিল এই বাংলা থেকেই। কে কে রয়েছেন তালিকায়? রসায়নে পুরস্কার জিতে নিয়েছেন আইআইটি বম্বের দেবব্রত মাইতি, পদার্থবিদ্যায় বাংলা পেয়েছে জোড়া বিজয়ী। বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সের (আইআইএসসি) অনিন্দ্য দাস এবং টাটা ইনস্টিটিউট অব ফান্ডামেন্টাল রিসার্চের বাসুদেব দাশগুপ্ত, দুজনেই জিতেছেন ওই শাখায় পুরস্কার। এবং চিকিৎসাবিজ্ঞানে পুরস্কারটি জিতেছেন কলকাতার ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব কেমিক্যাল বায়োলজির দীপ্যমান গঙ্গোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন: কোভিড যাচাই যন্ত্রে কিস্তিমাত, জাতীয় শিক্ষকের শিরোপা পাচ্ছেন যে বাঙালি
দীর্ঘদিন ধরে ইমিউনোলজি বা অনাক্রম্যতা বিষয়ে গবেষণা করে আসছেন দীপ্যমান গঙ্গোপাধ্যায়। অবশেষে মিলল স্বীকৃতি। তার বিশেষ কাজ ছিল অটোইমিউন ডিজিজ নিয়ে। করোনাকালে এই অনাক্রম্যতা বা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার উপরে কী প্রভাব ফেলেছিল ভাইরাসটি, কাজ করেছেন তা নিয়েও। এমনকী কোভিডের সময়ে প্লাজমা থেরাপি নিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে গবেষণাও করেন দীপ্য়মান। আর সেই কাজেরই মিলেছে স্বীকৃতি। ভারত সরকারের কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চের (সিএসআইআর) প্রথম ডিরেক্টর জেনারেল শান্তিস্বরূপ ভাটনগর। তাঁরই নামাঙ্কিত এই পুরস্কার। চিকিৎসাক্ষেত্রে এই পুরস্কার অনেকদিন পরে এল বাংলায়। অনেকদিন পরে কোনও বাঙালি চিকিৎসক এই পুরস্কার পেলেন। স্বাভাবিক ভাবেই এই স্বীকৃতি শুধু দীপ্যমানের জন্য নয়, গোটা বাংলার জন্যই অত্যন্ত গর্বের।
রসায়নে এ বছর ভাটনগর সম্মান জিতেছেন দেবব্রত। দেবব্রতের কাজের বিষয় কার্বন এবং হাইড্রোজেন পরমাণুর পারস্পরিক রাসায়নিক বন্ধন। সন্ধিগত মৌলের অনুঘটন ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে তৈরি হতে পারে জীবনদায়ী ওষুধ থেকে় কীটনাশকও। আর সেপথেই দিশা দেখিয়েছে দেবব্রতের গবেষণা। বেলুড়ের রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যামন্দির থেকে স্নাতক পাশ করার পরে বম্বে আইআইটি থেকে স্নাতকোত্তর পাশ করেন দেবব্রত। আমেরিকার জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় এবং ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিট অব টেকনোলজিতে সেরেছেন গবেষণার কাজ। তবে ২০১১ সালে বম্বে আইআইটি-তে ফিরে অধ্যাপনা শুরু করেন তিনি।
শুধু দেবব্রতই নয়, আরেক ভাটনগরবিজয়ী অনিন্দ্য দাসও পড়াশোবা করেছেন বেলুড় রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যামন্দির থেকেই। বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সের পদার্থবিদ্যা বিভাগে শিক্ষকতা তো করেনই অনিন্দ্য, তার পাশাপাশি সেখানেরই কোয়ান্টাম ট্রান্সপোর্ট ল্যাবরেটরির প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর পদেও রয়েছেন তিনি।
পদার্থবিদ্যায় দ্বিতীয় বাঙালি পুরস্কার প্রাপক মুম্বইয়ের টাটা ইনস্টিটিউট অব ফান্ডামেন্টাল রিসার্চের (টিআইএফআর) বাসুদেব দাশগুপ্ত। শুধু চন্দ্রযান ৩-এর সাফল্যের সঙ্গেই নয়, ভাটনগর সম্মানের সঙ্গেও জড়িয়ে রয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম। ২০০০ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়েরই পড়ুয়া ছিলেন বাসুদেব। পদার্থবিদ্যাতেই স্নাতক পাশ করেন তিনি। পরে টিআইএফআর থেকে স্নাতকোত্তর পাশ করে গবেষণা শুরু করেন। তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যার গবেষক বাসুদেরের গবেষণার বিষয় ছিল নিউট্রিনো কণা এবং ডার্ক ম্যাটার।
তবে এই চার বাঙালির সঙ্গেই এবারের ভাটনগর বিজয়ীদের তালিকায় নাম রয়েছে একগুচ্ছ গুণীর। রয়েছেন চণ্ডীগড়ের ইনস্টিটিউট অব মাইক্রোবিয়াল টেকনোলজির অশ্বিনী কুমার ও হায়দরাবাদের সেন্টার ফর ডিএনএ ফিঙ্গারপ্রিন্টিং ডায়গনস্টিকসের মদ্দিকা সুব্বা রেড্ডি। তাঁরা দু'জনেই পুরস্কার পেয়েছেন জীববিদ্যায়। অন্যদিকে পদার্থবিদ্যায় দেবব্রতের সঙ্গে পুরস্কার পেয়েছেন বেঙ্গালুরুর আইআইএসসি-র অক্কট্টু টি বিজু। ভূবিজ্ঞানে পুরস্কার পেয়েছেন গান্ধীনগর আইআইটির বিমল মিশ্র। ২০০৫ সালে খড়্গপুর আইআইটি থেকে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতকোত্তর পাশ করেন তিনি। প্রকৌশল বিজ্ঞানে পুরস্কার পেয়েছেন দিল্লি আইআইটির দীপ্তিরঞ্জন সাহু এবং মাদ্রাজ আইআইটির রজনীশ কুমার। গণিতে পুরস্কার পেয়েছেন বেঙ্গালুরু আইআইএসসির অপূর্ব খরে এবং বেঙ্গালুরুর মাইক্রোসফট রিসার্চ ল্যাবরেটরির নীরজ কয়াল। অসমের গুয়াহাটিতেই নীরজের বড় হওয়া এবং পড়াশোনা।
আরও পড়ুন: পুরস্কারের লজ্জা! নোবেল পায়নি জগদীশ বসু, মেঘনাদ সাহাদের
প্রতিবছরই ২৬ সেপ্টেম্বর, কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চের প্রতিষ্ঠা দিবসের দিনই ঘোষণা করা হয় শান্তিস্বরূপ ভাটনগর পুরস্কার। তবে এই বছরটা ছিল যেন ব্যাতিক্রম। সোমবার সিএসআইআর-এর একটি কর্মসূচির অনুষ্ঠানে হঠাৎ করেই ঘোষণা করে দেওয়া হয় ভাটনগর বিজয়ীদের নাম। সেখানে অবশ্য উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ ও প্রতিষ্ঠানের অধিকর্তা এন কালাইসেলভি। সেখানেই অন্যান্য বিজয়ীদের সঙ্গে নাম ঘোষণা করা হয় ওই চার বাঙালি রত্নের।