ভয়ংকর বন্দুক ধরা হাতের ভরসা এখন লাঠি! দাউদ ইব্রাহিমের জীবন কি সত্যিই সংকটে?
Dawood Ibrahim D-Company : এই মুহূর্তে সেই সতেজ শরীর আর নেই দাউদের। বেশ খানিকটা দুর্বল হয়ে গিয়েছে। কী হয়েছে দাউদের?
তাঁর পরিচয় দেওয়া যায় কেবলমাত্র একটি অক্ষরে – ‘ডি’। ডি মানে? ডেডলি, দুশমন, ডন… এবং, দাউদ। একটা সময় কেবল মুম্বই নয়, গোটা ভারতের ত্রাস ছিল দাউদ ইব্রাহিম (Dawood Ibrahim)। মহারাষ্ট্রের মধ্যবিত্ত পরিবার, মুম্বই পুলিসের হেড কনস্টেবল ইব্রাহিম কালসকারের ছেলে এখন বিশ্বের অন্যতম ‘ওয়ান্টেড ক্রিমিনাল’-এর তালিকায়। কেবল ১৯৯৩ সালে মুম্বইয়ের বোমা বিস্ফোরণ নয়; মাফিয়া সাম্রাজ্যের বাদশা দাউদ ইব্রাহিমের অপরাধের তালিকা অনেক দীর্ঘ। মাফিয়া লড়াই, খুন, ডাকাতি, ক্রিকেট বেটিং – সব জায়গায় তার উপস্থিতি। দাউদের একটা ইশারায় সন্ত্রাস তৈরি হতো আকখা মুম্বইয়ে। সক্রিয় হয়ে উঠত তার ডি-কোম্পানি।
সেই দাউদ এখন কোথায়? ভারতের প্রতিটি মানুষের অন্যতম প্রধান প্রশ্ন এটি। বহুদিন তাকে সামনে দেখাজায়নি। কিন্তু ইন্দ্রজিতের মতো আড়ালে থেকে যাবতীয় কাজ করে যাচ্ছে দাউদ – তারও প্রমাণ মিলেছে। ভারত সরকারের অবশ্য দাবি, পাকিস্তানের করাচিতে বহাল তবিয়তেই রয়েছে অপরাধ জগতের কিংপিন। আর তাকে সাহায্য করছে খোদ পাকিস্তান সরকার এবং পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই (ISI)।
যুক্তি, পাল্টা যুক্তির ওপারে গিয়ে দাউদ ইব্রাহিম ফের খবরের শিরোনামে। এবার অবশ্য কোনও অপরাধ নয়। আন্ডারওয়ার্ল্ডের বাদশা ডন দাউদ ইব্রাহিমের জীবন নাকি সংকটে! একটা সময় ওই দুই হাতে ঘুরে বেড়াত রিভলবার, একে-৪৭। ডি-কোম্পানিতে যখনই কোনও সমস্যা হতো, সটান চলে যেত দাউদ। আর এখন আন্তর্জাতিক মাফিয়া ও অপরাধী সে দাউদের হাতেই উঠে এসেছে লাঠি! হাঁটতে চলতে গেলে সেই লাঠিই এখন সর্বক্ষণের ভরসা। কী হয়েছে দাউদের?
বেশ কয়েক বছর আগে ডি কোম্পানির বেশ কয়েকজন সদস্য পুলিসের হাতে ধরা পড়ে। তাদের মাধ্যমেই নতুন একটি তথ্য জানতে পারে মুম্বই পুলিস। প্রবল প্রতাপশালী দাউদ ইব্রাহিম নাকি গ্যাংগ্রিনে আক্রান্ত! তার পায়ে প্রবলভাবে ছড়িয়ে পড়েছে এই রোগটি। ছোটা শাকিল অবশ্য এই তথ্যটি অস্বীকার করলেও, সাম্প্রতিক বেশকিছু সূত্র মারফৎ জানা গিয়েছে, এই খবর সত্যি। এই মুহূর্তে সেই সতেজ শরীর আর নেই দাউদের। বরং বেশ খানিকটা দুর্বল হয়ে গিয়েছে।
পায়ের গ্যাংগ্রিন যাতে অন্যান্য জায়গায় ছড়িয়ে না পড়ে, তার জন্য নাকি মাস কয়েক আগে চিকিৎসাও করা হয়েছে। মুম্বই পুলিস ও গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, পাকিস্তানের করাচিতেই আইএসআইয়ের তত্ত্বাবধানে অপারেশন হয়েছে দাউদ ইব্রাহিমের। সেখানে তার দুটো পায়েরই আঙুল কেটে বাদ দেওয়া হয়েছে! সেজন্য এখন হাঁটতে চলতেও অসুবিধা হয় কুখ্যাত এই মাফিয়া ডনের। ভরসা কেবল একটা লাঠি; সেটা দিয়েই আস্তে আস্তে হাঁটাচলা করে। শরীর দুর্বল হয়ে পড়ায় জন্মদিনের অনুষ্ঠানও নাকি একেবারে সাদামাটা করা হয়েছে। কিন্তু শরীর ক্রমশ ক্ষয়ে গেলে কী হবে, দাউদ এখনও নিজের মেজাজেই রয়েছে। তবে দুর্বল স্বাস্থ্যের জন্য ডি কোম্পানির দায়িত্ব একটু একটু করে অন্যের হাতে ছেড়ে দিচ্ছেন। ভাই আনিস ইব্রাহিম ও সহযোগী ছোটা শাকিলই বকলমে এখন ডি কোম্পানির তখতে।
দাউদের এমন বিতর্কের মাঝেই উঠে এসেছে পাকিস্তানের এক বিখ্যাত অভিনেত্রীর নাম। তিনি মেহউইশ হায়াত (Mehwish Hayat)। পাকিস্তানের এই মডেল ও অভিনেত্রীকে মার্ভেল সিনেম্যাটিক ইউনিভার্সের (Marvel MCU) সিরিজ ‘মিস মার্ভেল’-এ (Ms Marvel) দেখা গিয়েছিল। পাকিস্তানের অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্তা মেজর আদিল রাজা দাবি করেছেন, বেশ কয়েকজন পাক অভিনেত্রীকে হানি ট্র্যাপের কাজে ব্যবহার করে সেনাবাহিনী। তার মধ্যে অন্যতম নাকি মেহউইশ হায়াত!
যদিও নিজের সোশ্যাল মিডিয়ায় এই সম্পূর্ণ দাবি নস্যাৎ করেন অভিনেত্রী। কিন্তু তাঁর নাম এর আগেও এমন জায়গায় উঠে এসেছিল। আর তার সূত্র ছিল দাউদ ইব্রাহিম। বলা হয়, দাউদের ঘনিষ্ঠ বান্ধবীদের তালিকায় রয়েছেন মেহউইশ হায়াত। ২০১৯ সাল থেকে নাকি এই আলাপচারিতার সূত্রপাত। যদিও এই পুরো বিষয়টি সত্যি কিনা, তা বলা যায় না। আবার ভারত ও পাকিস্তান – দুই দেশেরই সিনেমা জগতের সঙ্গে এই মাফিয়া কিংপিনের সম্পর্ক একেবারেই অজানা নয়। সব মিলিয়ে, আড়ালে থেকেও ফের চর্চার কেন্দ্রে ডি কোম্পানির অধীশ্বর দাউদ ইব্রাহিম।