মরা ইঁদুর মুখে কৃষক-বিক্ষোভ থেকে রাজ্য-বনধ! কোন পথে মিটবে দু'রাজ্যের কাবেরী-জলবণ্টন বিবাদ?

Cauvery Water Dispute: কর্ণাটকের ছবিটা যেখানে বনধের, সেখানে তামিলনাড়ুতে দেখা গেল অন্য ছবি। এদিন সেখানে মরা ইঁদুর মুখে নিয়ে বিক্ষোভ দেখায় একদল কৃষক।

পাশাপাশি দুই পড়শি রাজ্য কর্ণাটক ও তামিলনাড়ু। আবহাওয়ার মিল, জলবায়ুর মিল। আর সবচেয়ে বড় মিল বোধহয় দুই রাজ্যের মধ্যে দিয়ে বয়ে চলা কাবেরী নদী। তবে যতটা না মিল, তার চেয়েও ঢের বেশি দু'রাজ্যের মধ্যে দ্বন্দ্ববিবাদের কারণ ওই নদী। দুই পড়শি রাজ্যের চাষবাসই ওই নদীর জলের উপরেই নির্ভরশীল। অনাবৃষ্টি, খরার মরসুমে ওই নদীর জলই বেঁচে থাকার ভরসা দু'রাজ্যের মানুষের। সেই নদীর জলে কার অধিকার কতটা, সে নিয়েই কয়েক দশক ধরে অশান্তি চলে আসেছে দক্ষিণের এই দুই রাজ্যের মধ্যে। আর এইবার সেই অশান্তি ফের একবার চরমে পৌঁছেছে।

সাম্প্রতিক এই অশান্তির নেপথ্যে অবশ্য রয়েছে আবেদন। দু'রাজ্যের জলবণ্টন নিয়ে অশান্তি আজকের নয়। জনবণ্টন নিয়ে এই টানাপোড়েনও চলছে অনেক দিন ধরেই। প্রাথমিক ভাবে ১২ হাজার ৫০০ কিউসেক জলের দাবি করেছিল তামিলনাড়ু কর্ণাটকের কাছে। কর্ণাটক জানায়, তিন হাজার কিউসেকের বেশি জল ছাড়া সম্ভব নয় তাদের পক্ষে। এর মধ্যে অনেক জল বয়ে গিয়েছে কাবেরী নদীতে। মামলা পৌঁছেছে সুপ্রিম কোর্টে। প্রতিদিন সাত হাজার কিউসেক করে জল ছাড়ার আবেদন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল তামিলনাড়ু সরকার। সুপ্রিম কোর্ট অবশ্য দু-দেশের এই জলবণ্টন অশান্তিতে হস্তক্ষেপ করতে অস্বীকার করে। সেই সিদ্ধান্ত কাবেরী ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট অথোরিটি (সিডব্লিউএমএ)-র বলে দায়িত্ব এড়ায় শীর্ষ আদালত। শেষপর্যন্ত জলবণ্টন কমিটি ও সিডব্লিউএমএ-র মধ্যস্থতার দু-পক্ষ ৫ হাজার কিউসেক জলবণ্টনে রফা করে। সেই নিয়ে চুক্তিও সই হয়।

আরও পড়ুন: সুযোগের সদ্ব্যবহার, মূল্যবৃদ্ধির মরসুমে টমেটো বেচে কোটিপতি কৃষক

আর এই সিদ্ধান্ত নিয়ে খুশি নয় কর্ণাটকের কৃষক সম্প্রদায়। কাবেরীর জলের বড় অংশ তামিলনাড়ুকে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে তারা। ইতিমধ্যে জোড়া ধর্মঘটেরও ডাক দিয়েছে সে রাজ্যের কৃষক সংগঠনগুলি। মঙ্গল ও শুক্রবার কর্ণাটকে ডাকা হয়েছে সারাদিনের ধর্মঘট। কর্ণাটকের কৃষকদের দাবি, এই বিপুল পরিমাণ জল তামিলনাড়ুকে দিয়ে দিলে সে রাজ্যের চাষবাস ব্যাহতত হবে। এ নিয়ে গত অগস্ট মাস থেকেই অশান্তি চলছে কর্ণাটকে। উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল মান্ড্য জেলা। রাতভর সেখানে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন কৃষকেরা।

Dead Rats In Mouth, Farmers Protest Over Cauvery Issue In Tamil Nadu and Karnataka

 

এদিনও বেঙ্গালুরু জুড়ে দেখা গেল স্বতস্ফূর্ত বনধের ছবি। বাসিন্দারা ঘর থেকে কম বেরিয়েছেন। স্কুল, কলেজও ছিল বন্ধের দিকেই। তবে যানবাহন চলেছে রোজের মতোই। পার্থক্য, এদিন যাত্রী ছিল অন্যদিনের চেয়ে কম। বেশ কিছু জায়গায় অবশ্য ছবিটা ছিল অন্যরকম। টাউন হল, মহীশূর ব্যাঙ্ক সার্কেল, জ্ঞানভারতীতে বিক্ষোভ দেখায় একাংশ। বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে আটকও করে পুলিশ। জয়ানগরের উদুপী হাব হোটেল জোর করে বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। কর্ণাটকের বেশ কিছু জায়গায় মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী। বিমানবন্দরও এদিন অন্যদিনের তুলনায় ফাঁকা ছিল।

Dead Rats In Mouth, Farmers Protest Over Cauvery Issue In Tamil Nadu and Karnataka

কর্ণাটকের ছবিটা যেখানে বনধের, সেখানে তামিলনাড়ুতে দেখা গেল অন্য ছবি। কাবেরীর জলবণ্টন নিয়ে কর্ণাটকের এই রাজনীতির তীব্র নিন্দা করেছে তামিলনাড়ু। এদিন সেখানে মরা ইঁদুর মুখে নিয়ে বিক্ষোভ দেখায় একদল কৃষক। কার্যত তাঁরা বুঝিয়ে দিয়েছে, কাবেরীর জল না পেলে ধানচাষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যা দুর্বিসহ দারিদ্রের দিকেই ঠেলে দেবে ফের তাঁদের। হয়তো মরা ইঁদুর খাওয়াটাই হয়ে দাঁড়াবে ভবিতব্য। ভয়ঙ্কর সেই ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। কয়েক ঘণ্টায় প্রায় ১ লক্ষ মানুষ দেখে ফেলেছেন ভিডিওটি।

আরও পড়ুন: নিঃশব্দে কোটি কোটি কৃষকের কাঁধে যে জোয়াল চাপিয়ে দেওয়া হল

সম্প্রতি কর্ণাটকের উপর চাপিয়ে দেওয়া জনবণ্টনের এই চাপ নিয়ে মুখ খুলেছেন সেখানকার ভূমিপুত্র কিচ্চা সুদীপ। কার্যত তাঁর গলায় ফেটে পড়েছে ক্ষোভ। তাঁর মতে, কাবেরী কর্ণাটকবাসীর অধিকার। সেই ভূমি, জল, ভাষা সংরক্ষণে রাজ্যবাসীর মতামতের গুরুত্ব আছে বলেই মনে করছেন তিনি। সব মিলিয়ে কাবেরীর জল-অধিকার নিয়ে চরমে পৌঁছেছে দুই রাজ্যের সংঘাত। আসলে কর্ণাটকের দাবি, সে রাজ্যে ইতিমধ্যেই চাষবাসের কাজে জলঘাটতি রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে তামিলনাড়ুকে জল দিলে বিপাকে পড়তে পারে সে রাজ্যের চাষবাস। সত্যিই কি এই সমস্যার সমাধান মিলবে এত সহজে, সেটাই ভাবাচ্ছে দু'রাজ্যের সরকারকে।

More Articles