বাংলা ভাষা বাঁচাতে বাংলাপক্ষ আদৌ প্রয়োজনীয়?

Bangla Paksha : ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ভারতে বাঙালির জাতীয় সংগঠন বাংলা পক্ষ যা আজ নিপীড়িত, লুণ্ঠিত, প্রতারিত বাঙালির পেশি ও কণ্ঠস্বর।

"যে জাতির দল নাই, সে জাতির বল নাই"

                                       - গুরুচাঁদ ঠাকুর

ভারত তথা এশিয়া তথা বিশ্বে সকল জাতির নিজস্ব জাতীয় সংগঠন আছে। একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল ভারতে বাঙালি জাতি। এই অস্বাভাবিক শূন্যতাকে পূর্ণ করতে ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ভারতে বাঙালির জাতীয় সংগঠন বাংলা পক্ষ যা আজ নিপীড়িত, লুণ্ঠিত, প্রতারিত বাঙালির পেশি ও কণ্ঠস্বর।

ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র নানা রাজ্যের সমাহার কিন্তু এই যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে ধ্বংস করে রাজ্যের অধিকার কেড়ে নিয়ে হিন্দি সাম্রাজ্যবাদ বাংলা ও বাঙালির বিরুদ্ধে বৈষম্য চালাচ্ছে, আমাদের শেষ করে দিচ্ছে অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে, ধ্বংস করছে পশ্চিমবঙ্গে বাঙালি জাতির অধিকার, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের অধিকার। এই ফন্দিকে অসফল করতে চায় বাংলা পক্ষ। ভারতীয় সংবিধানের মূলনীতি রক্ষা করতে, এই আক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে রক্ষা করে আরও সুদৃঢ় করতে সমানাধিকার ও সম্মানের ভিত্তিতে বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যসাধনের জন্য দরকার একটি সত্যিকারের যুক্তরাষ্ট্রীয় বা ফেডারেল ব্যবস্থা। সত্যিকারের ফেডারেল ব্যবস্থা সেটাই, যেখানে মুদ্রানীতি (অর্থাৎ রিজার্ভ ব্যাঙ্ক), রেল, অন্য রাষ্ট্রের থেকে প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র ছাড়া অন্য সকল ক্ষেত্র সম্পূর্ণভাবে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের হাতে ন্যস্ত করতে হবে। এটাই বাংলা পক্ষর চূড়ান্ত লক্ষ্য। যতদিন এই চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জিত না হয়, ততদিন বাংলা পক্ষ ৩০টি স্পষ্ট দাবি পূরণের জন্য আন্দোলন করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

১। পশ্চিমবঙ্গের সকল বেসরকারি কাজে ৯০% ভূমিপুত্র সংরক্ষণ করতে হবে। এক্ষেত্রে ভূমিপুত্র বলতে ন্যূনতম ১৫ বছর পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী বাসিন্দা এবং কাজ বলতে অন পে রোল, অফ পে রোল, পার্মানেন্ট, কন্ট্র্যাকচুয়াল, পার্ট টাইম, ফুল টাইম সকল কাজ।

২। সর্বভারতীয় সকল পরীক্ষার সকল স্তরে বাংলা ভাষায় পরীক্ষা দেওয়ার অধিকার থাকতে হবে।

৩। পশ্চিমবঙ্গকে ভাগ করার কোনও অধিকার কেন্দ্রের থাকবে না। ১৯৫১ সালের জনগণনা অনুযায়ী বাংলাভাষী সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকা প্রতিটি থানা এলাকা যেগুলি পশ্চিমবঙ্গ সংলগ্ন সেগুলিকে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। পশ্চিমবঙ্গের কোনও এলাকা কোনও পররাষ্ট্রকে দিয়ে দেওয়া যাবে না।

৪ । পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত খনিজ সম্পদ এবং প্রাকৃতিক, প্রাণিজ ও বন সম্পদের মালিকানা এবং নিয়ন্ত্রণ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হাতে থাকতে হবে। বাংলার ৮৬% গুদামঘর, ভেড়ি, পাখি ও পশু খামার, চালকল, চটকল, চা বাগানের মালিকানা বাঙালিকে হস্তান্তর করতে হবে। যে কোনও খাদ্যশস্য বা অর্থকরী শস্য অর্থাৎ যে কোনও কৃষিজাত পণ্য উৎপাদন হওয়া থেকে নানা রূপে বাজারজাত হওয়া পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে ৮৬% বাঙালির মালিকানা সুনিশ্চিত করতে হবে।

৫। পশ্চিমবঙ্গের ভূমিজ জাতি ছাড়া কেউ পশ্চিমবঙ্গে কোনও কৃষিজমি, জঙ্গল, জলাভূমি কিনতে পারবে না, জমি চরিত্র বদল করেও কেনা নিষিদ্ধ করতে হবে। পশ্চিমবঙ্গের ভূমিপুত্র ছাড়া অন্য কেউ বসবাসের উদ্দেশ্যে কোনও স্থাবর সম্পত্তি কিনলে সম্পত্তির সরকার নির্ধারিত মূল্যের ১০০% পঞ্জীকরণ মাশুল (স্ট্যাম্প ডিউটি) হিসেবে দিতে হবে।

৬। পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সীমান্তে বৈদ্যুতিন বেড়া দিতে হবে। ভারতের অন্যান্য রাজ্য ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ রাষ্ট্র থেকে নিপীড়িত হয়ে পশ্চিমবঙ্গে আসা সকল বাঙালিকে তৎক্ষণাৎ পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী বাসিন্দা ও নাগরিকের সকল অধিকার দিতে হবে।

আরও পড়ুন- দুই বাংলার বানান-ভাবনা: মিল ও অমিল

৭। ভারতীয় সেনার অধীনে বাঙালি রেজিমেন্ট গঠন করতে হবে। সেই রেজিমেন্টে ৮৫% পদ সংরক্ষিত হবে পশ্চিমবঙ্গের ভূমিপুত্রদের জন্য। এই রেজিমেন্টের ভিতরের সকল কাজ পরিচালিত হবে বাংলায়। পশ্চিমবঙ্গের সকল পুলিশের সকল প্রশিক্ষণ ও অভিবাদন বাংলা ভাষায় হতে হবে। বাংলা ভাষা লিখতে, পড়তে ও বলতে না জানলে আরপিএফ, বিএসএফ, সিআরপিএফ, সিআইএসএফ, এসএসবি, আইটিবিপির কোনও কর্মীকে পশ্চিমবঙ্গে পোস্টিং দেওয়া যাবে না।

৮। পশ্চিমবঙ্গে রিকশা, টোটো, অটো, ভ্যান, নৌকো, বাস, ট্রাক, অ্যাপ ভিত্তিক যানবাহন সহ সকল পরিবহন সংক্রান্ত পারমিট ও কাজের ৯০% বাংলা ভাষা জানা ভূমিপুত্রের হতে হবে। পশ্চিমবঙ্গে বিমান, রেল, জাহাজ, সড়ক সহ যে কোনও পরিবহন ব্যবস্থায় সকল ঘোষণাগুলি বাংলাতে করতে হবে।

৯। পশ্চিমবঙ্গে ১০০ দিনের কাজের জন্য অন্য কোনও রাজ্যের থেকে কম মজুরি দেওয়া যাবে না।

১০। পশ্চিমবঙ্গের সকল ডাক্তারি, নার্সিং ও প্যারামেডিকেল আসনগুলি এবং রাজ্য সরকারের ইঞ্জিনিয়ারিং আসনগুলির ১০০% পশ্চিমবঙ্গের ভূমিপুত্রদের জন্য সংরক্ষিত হতে হবে এবং সেগুলি জেলাগুলির জনসংখ্যার অনুপাতে বন্টন করতে হবে। বাংলার ভূমিপুত্র ছাড়া কেউ বাংলার স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় কোনও ভর্তুকি পাবে না। বেসরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সকল পরিষেবার ২৫% বাংলার ভূমিপুত্রদের বিনামূল্যে দিতে হবে।

১১। পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে অবস্থিত স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের প্রতিটি সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য উচ্চমাধ্যমিক বোর্ডের ছাত্রছাত্রীদের জন্য ৮৫% আসন সংরক্ষণ করতে হবে। পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত সকল স্কুলে ইতিহাস ও ভূগোল বিষয়ের পাঠ্যক্রম অন্তত ৫০% বাংলা সম্বন্ধীয় হতে হবে।

১২। পশ্চিমবঙ্গে প্রতিটি (রাজ্য, কেন্দ্র ও রাজ্য/কেন্দ্র অধীন সংস্থা) সরকারি চাকরিতে যোগদান করতে হলে বাংলা লিখতে, বলতে ও পড়তে জানা আবশ্যিক হতে হবে। মূল লিখিত পরীক্ষার অংশ হিসেবে তা লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ধারিত হতে হবে। এই ধরনের ১০০% পদ পশ্চিমবঙ্গের ভূমিপুত্রদের জন্য সংরক্ষিত হতে হবে। সারা ভারতে কেন্দ্রীয় সরকার বা কেন্দ্রীয় সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত সকল চাকরি ও টেন্ডারের ক্ষেত্রে ৮% সংরক্ষণ থাকতে হবে পশ্চিমবঙ্গের অধিবাসীদের। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত সব প্রতিষ্ঠানে চাকরির ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি জেলায় সেই জেলার ন্যূনতম ১৫ বছরের স্থায়ী বাসিন্দাদের জন্য ২৫% জেলাভিত্তিক সংরক্ষণ থাকতে হবে।

১৩। পশ্চিমবঙ্গের ৯০% দোকানের লাইসেন্স ও ৯০% হকারি স্পট পশ্চিমবঙ্গের ভূমিপুত্রদের দিতে হবে।

১৪। ১৯৪৩ সালে চালের মজুতদারি ও কালোবাজারি করে ৬০ লক্ষ বাঙালিকে খুন করায় জড়িত খুনিদের উত্তরসূরিদের সকল স্থাবর - অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হাতে তুলে দিতে হবে। ১৯৪৭-এর পর থেকে কেন্দ্র বাংলা থেকে যা যা কর তুলেছে, তার যে অংশ বাংলাকে ফেরত দেয়নি, তা বর্তমান মূল্য অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারকে ফেরত দিতে হবে। মাশুল সমীকরণ নীতির ফলে পশ্চিমবঙ্গের যে শিল্প ও রাজস্বের ক্ষতি হয়েছে, তা নির্ণয় করে, বর্তমান মূল্যে সেই টাকার অঙ্ক ক্ষতিপূরণ হিসেবে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারকে ফেরত দিতে হবে।

১৫। পশ্চিমবঙ্গে শিল্প-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান স্থাপনের জন্য সকল ছাড়পত্র দেওয়ার এক্তিয়ার পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হাতে থাকতে হবে। পশ্চিমবঙ্গে কোনও কাজের কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত সংস্থার বরাত ও টেন্ডারের ১০০% পশ্চিমবঙ্গে পঞ্জিকৃত সংস্থা বা পশ্চিমবঙ্গের ভোটার কোনও ব্যক্তিকে দিতে হবে। পশ্চিমবঙ্গে কোনও সংস্থা বা ব্যক্তি পাওয়া না গেলে তবেই নতুন টেন্ডার ডেকে পশ্চিমবঙ্গের বাইরের সংস্থা বা ব্যক্তিকে নতুন টেন্ডারে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া যাবে।

১৬। কেন্দ্র বা রাজ্যের টাকায় পশ্চিমবঙ্গে হিন্দি/উর্দু শেখানো বা হিন্দি/উর্দু শেখার জন্য পয়সা দেওয়া চলবে না। পশ্চিমবঙ্গে কোনও চাকরি বা তথ্য বা পরিষেবার ক্ষেত্রেই হিন্দি ও উর্দু বাধ্যতামূলক করা চলবে না।

১৭। ভারতের অন্য নানা রাজ্যের মতোই পশ্চিমবঙ্গেও ইনার লাইন পার্মিট অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশের অনুমতিপত্র চালু করতে হবে। পশ্চিমবঙ্গের পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলো থেকে চিকিৎসাজনিত এমারজেন্সি ছাড়া অন্য যে কোনও কারণে পশ্চিমবঙ্গে ঢুকতে হলে স্থানীয় থানায় নাম, ঠিকানা, সনাক্তকরণ তথ্য, প্রবেশের কারণ সহ বিস্তারিত বিবরণ নথিভুক্ত করতে হবে।

১৮। পশ্চিমবঙ্গে সব উচ্চ প্রশাসনিক/পুলিশ পদে ডাবলুবিসিএস/ডাবলুবিপিএস থাকতে হবে, আইএএস/আইপিএস নয়। পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত কেন্দ্র/রাজ্য সরকারি সকল প্রশাসনিক পদের পদোন্নতি নির্ধারণ করবে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী বাসিন্দা ছাড়া অন্য কাউকে পশ্চিমবঙ্গে আইএএস, আইপিএস হিসেবে পোস্টিং দেওয়া যাবে না।

১৯। পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও তার অধীন সকল সংস্থার সকল প্রশাসনিক কাজ বাংলা ভাষায় হতে হবে। ভারত রাষ্ট্র হিন্দিকে সাংবিধানিকভাবে যে মান্যতা ও অধিকার দেয়, বাংলা ভাষাকে সেই একই অধিকার দিতে হবে। পশ্চিমবঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকার ও তার অধীন সকল সংস্থার সকল প্রশাসনিক কাজ বাংলায় হতে হবে। পশ্চিমবঙ্গে সকল রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারি (যেমন টেন্ডার, সরকারি বা সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত দফতর, ব্যাঙ্ক, বিমা, ডাকঘর, টেলিকম, রাস্তা, ইত্যাদি) ও বেসরকারি ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গে সকল তথ্য ও পরিষেবা প্রদান আবশ্যিক ভাবে বাংলায় করতে হবে।

২০। পশ্চিমবঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ স্থাপন করতে হবে। কলকাতা হাইকোর্টে বাংলা ভাষাকে সেই অধিকার দিতে হবে যা এলাহাবাদ হাইকোর্টে হিন্দির আছে।

২১। ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি কর্মে, যেমন জনগণমন ও বন্দেমাতরম গাওয়া বা বাংলায় সরকার বা সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত কোনও সংস্থা কর্তৃক ছাপা কিছুতে বাংলা ভাষাকে বিকৃত করলে কর্মে গাফিলতির জন্য শাস্তির বিধান থাকতে হবে।

আরও পড়ুন- শুধুই কি ঘৃণা? মাছে-ভাতে বাঙালিকে যেভাবে রোহিঙ্গা-বাংলাদেশি করে তুললেন পরেশ

২২। ভারত যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্টে তথা ভারত সরকারের সকল ফর্ম ও ওয়েবসাইটে বাংলায় সকল তথ্য থাকা ও তথ্য জমা দেওয়ার অধিকার বাধ্যতামূলক ভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

২৩। প্রতিরক্ষা ও রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা ছাড়া যে কোনও বিষয়ে বিশ্বের যে কোনও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বা রাজ্যের সংস্থার ঋণ গ্রহণ সহ যে কোনও চুক্তি সম্পাদনের সম্পূর্ণ স্বাধিকার থাকতে হবে।

২৪। পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে লব্ধ বা উৎপাদিত সব পণ্যের উপর পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সেস বসানোর অধিকার থাকতে হবে। পররাষ্ট্রে ব্যয় ছাড়া কেন্দ্রীয় সরকারের দ্বারা পশ্চিমবঙ্গ থেকে তোলা সকল সম্পদ ও রাজস্বের ১০০% পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং পশ্চিমবঙ্গের অধিবাসীদের ফেরত দিতে হবে।

২৫। পশ্চিমবঙ্গে উৎপাদিত ফসল ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া কত দামে কিনবে, তা পশ্চিমবঙ্গের বাস্তবতা অনুযায়ী নির্ধারণ করবে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার। চালের ক্ষেত্রে রেশন ব্যবস্থার মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গের অধিবাসীদের সম্পূর্ণ চাহিদাপূরণ নিশ্চিত করার পর তবেই বাকি চাল পশ্চিমবঙ্গের বাইরে নেওয়া যাবে, তার আগে নয়।

২৬। পশ্চিমবঙ্গে দেওয়া সকল বিজ্ঞাপনের বাংলা সংস্করণ সবচেয়ে বহুল প্রচারিত সংস্করণ হতে হবে। এই বিজ্ঞাপন বাংলার সংস্থার দ্বারা উৎপাদিত হতে হবে। পশ্চিমবঙ্গে বিক্রি হওয়া সমস্ত প্যাকেটজাত পণ্যের সকল তথ্য বাংলা হরফে সবচেয়ে বড় আকারে থাকতে হবে।

২৭। পশ্চিমবঙ্গে তৈরি হওয়া বাংলা ছাড়া অন্য ভাষার সিনেমা পশ্চিমবঙ্গের প্রেক্ষাগৃহে বাংলা সাবটাইটেল সহ প্রচারিত হতে হবে এবং পশ্চিমবঙ্গের বাইরে তৈরি হওয়া সিনেমা পশ্চিমবঙ্গের প্রেক্ষাগৃহে বাংলা ডাবিং সহ প্রচারিত হতে হবে, তা না হলে তা পশ্চিমবঙ্গে প্রচারিত হওয়ার ছাড়পত্র দেওয়া যাবে না। পশ্চিমবঙ্গে যে সিনেমা প্রচারিত হবে, তার ছাড়পত্র দেবার অধিকার থাকবে একমাত্র রাজ্যের নিজস্ব সিনেমা সার্টিফিকেশন বোর্ডের। বাংলা সিনেমার উপর জিএসটি বাতিল করতে হবে। পশ্চিমবঙ্গে তৈরি পশ্চিমবঙ্গের ভূমিজ ভাষার বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান তথা প্রকাশনায় বিশেষ কর ছাড়ের ব্যবস্থা করতে হবে।

২৮। ভারতে বাংলা ভাষার সকল রূপকে সমান উৎসাহ ও মর্যাদা দিতে হবে।

২৯। পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে যে কোনও রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকারি বাহিনীর কোনও কর্মীর বিরুদ্ধে অন ডিউটি বা অফ ডিউটি অবস্থায় কোনও ভারতীয় নাগরিকের উপর খুন, ধর্ষণ সহ কোনও অপরাধের অভিযোগ উঠলে অন্যান্য ভারতীয় নাগরিকের মতোই তার বিচার পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ আদালতে হবে। নির্বাচিত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের অনুমতি ছাড়া সীমান্ত ও ব্যারাক ব্যতীত রাজ্যে কোথাও কোনও কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকতে পারবে না।

৩০। সংবিধানের ৩৫৬ ধারা বিলোপ করতে হবে। পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার অধিকার থাকবে শুধু পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের। কোনও জরুরি অবস্থা বা অন্য কোনও অছিলায় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের কোনও অধিকার কেন্দ্রীয় সরকার বা আর কেউ খর্ব করতে পারবে না।

More Articles