মিথ্যে বলেছিল যোগী প্রশাসন? কুম্ভে মৃতের সংখ্যা অন্তত ৮২!

Maha Kumbh : বিবিসি হিন্দি এমন ২৬টি পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেছে যারা ৫ লক্ষ টাকার ক্ষতিপূরণ পেয়েছে। কিন্তু দেখা গেছে সেই নিহতদেরও নাম প্রকাশ করে মৃত্যুর সংখ্যা আপডেট করা হয়নি। 

২৯ জানুয়ারি মৌনি অমাবস্যার দিন অত্যধিক ভক্তদের ভিড়ে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয় মহাকুম্ভে। পদপিষ্ট হয়ে বহু দর্শনার্থীর মৃত্যু হয়। পুলিশ জানায়, ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে এই ঘটনায়। এই সংখ্যা আর আপডেট করা হয়নি। মহাকুম্ভে পদপিষ্ট হয়ে মোট মৃতের সংখ্যা পুলিশ না জানালেও নিহতদের পরিবারকে ২৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে বিবিসি হিন্দির একটি তদন্তধর্মী প্রতিবেদনে সামনে এসেছে, ওই দিন মহাকুম্ভে অন্তত ৮২ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

বিবিসি-র এই তদন্ত ধর্মী রিপোর্ট তৈরি হয়েছে ১১ টি রাজ্যের ৫০টিরও বেশি জেলা ঘুরে ১০০টি পরিবারের সঙ্গে কথা বলে। সেখানেই বলা হচ্ছে, অন্তত ৮২ জনের মৃত্যু হয়েছিল কুম্ভে। উত্তরাখণ্ড, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, কর্নাটক, বিহার, ঝাড়খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ এবং আসামের মতো রাজ্যে ঘুরে এই এই রিপোর্ট সামনে এনেছে বিবিসি। বিবিসি ২৬টি পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেছে যারা ৫ লক্ষ টাকার ক্ষতিপূরণ পেয়েছে। কিন্তু দেখা গেছে পরিবার ক্ষতিপূরণ পেলেও তালিকায় সেই নিহতের নাম নেই।

বিবিসি হিন্দি মহাকুম্ভে পদপিষ্ট হয়ে নিহতদের তিন ভাগে ভাগ করেছে-

১) যাঁদের মৃত্যু উত্তরপ্রদেশ সরকার স্বীকার করেছে এবং ২৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েছে,

২) যাঁদের মৃত্যুর সরকারি স্বীকৃতি মেলেনি কিন্তু মৃতদের পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা ক্যাশ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে,

৩) যেসব নিহতদের পরিবারকে কোনো আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়নি। সংখ্যাটা ১৯।

বিবিসির রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, উত্তরপ্রদেশে ১৮টি বিহারে ৫, ঝাড়খণ্ডে ১টি এবং পশ্চিমবঙ্গে ২টি পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা করে নগদ দেওয়া হয়েছে। পাঁচ লাখ টাকা নগদ পাওয়া বেশিরভাগ পরিবারের দাবি, উত্তরপ্রদেশ পুলিশ বাড়িতে এসে এমন কাগজে হস্তাক্ষর বা আঙুল ছাপ নিয়েছে, যেখানে পদপিষ্টের ঘটনার পরিবর্তে লেখা রয়েছে হঠাৎ শরীর খারাপ হওয়ার কারণে মৃত্যু হয়েছে। বিহারের একটি পরিবার এমন কাগজে সাক্ষর করতে অস্বীকার করে এবং টাকা নিতেও অস্বীকার করে।

 

২৬ পরিবারকে দেওয়া ১কোটি ৩০ লাখ টাকা কোথা থেকে এল?

১৯ ফেব্রুয়ারির, মহাকুম্ভের শেষের দিকে মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ রাজ্য বিধানসভায় পদদলিত হওয়ার বিষয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছিলেন। সেখানে ৩০ জনের মৃত্যু এবং ২৯টি মৃতদেহ শনাক্ত করার কথা স্বীকার করেছিলেন। তিনি কিছু স্থানকে 'প্রেসার পয়েন্ট' বলে উল্লেখ করেছিলেন এবং বলেছিলেন যে সেখানে কিছু সমস্যার জন্য এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। বিবিসি-র তদন্তে দেখা গিয়েছে এই  'প্রেসার পয়েন্ট' বলে উল্লেখ করা স্থানটিতে চার জনের মৃত্যু হয়েছে।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি এলাহাবাদ হাইকোর্ট কুম্ভমেলায় নিহতদের মোট সংখ্যা প্রকাশ করতে বলেছে। কেন্দ্রীয় সরকার এবং উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্যনাথ সরকার দাবি করেছিল, ৪৫ দিনের মহাকুম্ভে মোট ৬৬ কোটি মানুষ এসেছিলেন। এই জনসমাগমকে তারা বিশাল সাফল্য বলে উল্লেখ করেছিল। ২০২৫ সালের মহাকুম্ভে ৭,০০০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে সরকার, ভিআইপিদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা ছিল। বারবার প্রশ্ন উঠছে, কুম্ভ দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা লুকোনো হচ্ছে কেন? কেন আসল ঘটনা চেপে যাওয়া হচ্ছে? বিবিসি-র প্রতিবেদন আরও একবার সেই ধাপাচাপা দেওয়ার চেষ্টাকেই তুলে ধরল।

More Articles