স্বাধীন বাংলাদেশের মতো স্বাধীন বালুচিস্তানকে স্বীকৃতি দিতে পারবে ভারত?
Balochistan: এগিয়ে এসে বালুচিস্তানকে 'স্বাধীন' ঘোষণা করা কঠিন। কারণ এতে ভূ-রাজনৈতিক, কূটনৈতিক এবং আইনি জটিলতা রয়েছে। বালুচিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি জটিল।
সম্প্রতি বালুচিস্তানের নেতারা নয়াদিল্লি এবং জাতিসংঘের কাছে বালুচিস্তানকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এর পর থেকে ভারত একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক অস্বস্তিতে পড়েছে। বালুচিস্তানকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হলে ভারতের পররাষ্ট্র নীতির জন্য বিপদ হতে পারে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। কেন বালুচিস্তানকে আলাদা দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া ভারতের জন্য কঠিন?
এগিয়ে এসে বালুচিস্তানকে 'স্বাধীন' ঘোষণা করা কঠিন। কারণ এতে ভূ-রাজনৈতিক, কূটনৈতিক এবং আইনি জটিলতা রয়েছে। বালুচিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি জটিল। তাই ভারত এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে কিছু বলেনি। তবে নতুন দেশকে স্বীকৃতি দিতে পারে ভারত, যেমনটা হয়েছিল ১৯৭১ সালে, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে।
১৯৩৩ সালের মন্টেভিডিও কনভেনশন অনুসারে, একটি অঞ্চলকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট কিছু মানদণ্ড পূরণ করতে হয়। এর মধ্যে রয়েছে- স্থায়ী জনসংখ্যা, নির্ধারিত অঞ্চল, নির্বাচিত সরকার এবং অন্যান্য দেশের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষমতা। বালুচিস্তান স্বাধীনতা পেলেও বর্তমানে এটি কোনও দেশ বা জাতিসংঘের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পায়নি। অনেক পররাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বালুচিস্তানকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি পাকিস্তানের সার্বভৌমত্বের প্রতি সরাসরি চ্যালেঞ্জ। যা গুরুতর কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে।
১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের জোরপূর্বক বালুচিস্তান দখল এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন দমন- এই অঞ্চলকে আলাদা দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়াকে জটিল করে তুলেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বালুচিস্তানকে স্বীকৃতি দেওয়া নিয়ে ভারতের যে কোনো পদক্ষেপকে পাকিস্তান উস্কানি হিসেবে দেখতে পারে। বিশেষ করে পহেলগাঁও সন্ত্রাসী হামলা এবং অপারেশন সিঁদুরের পর এতে উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পাবে। বেশ কয়েকজন পররাষ্ট্র নীতি বিশেষজ্ঞের মতে, ভারতকে সাবধানতার সাথে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অন্যদিকে, বালুচিস্তানের কিছু নেতা যুক্তি দেন যে, ভারত যদি বালুচিস্তানকে স্বীকৃতি দেয় তাহলে কৌশলগতভাবে ও অর্থনৈতিকভাবে পাকিস্তানকে দুর্বল করা যাবে।
উল্লেখ্য, স্বাধীন দেশ হিসেবে মর্যাদা পেতে যুক্তরাষ্ট্র, চিন এবং রাশিয়ার মতো বৃহৎ শক্তির পাশাপাশি জাতিসংঘেরও সমর্থন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চীন, চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরের জন্য বালুচিস্তানে প্রচুর বিনিয়োগ করেছে, তাই তারা বালুচিস্তানের স্বাধীনতার বিষয়ে তীব্র বিরোধিতাই করবে। ইতিমধ্যে আবার যুক্তরাষ্ট্র বালুচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)-কে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করেছে। এর জন্যও বালুচিস্তানের স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য সমর্থন পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে। বেশ কয়েকজন বিশ্লেষকের মতে, অন্যান্য দেশের সমর্থন ছাড়া এই বিষয়ে ভারত একা কোনো পদক্ষেপ নেবে না।
একটি দেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু মানদণ্ড রয়েছে- স্থায়ী জনসংখ্যা, নির্ধারিত অঞ্চল, সরকার, অন্য দেশের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষমতা। তবে, এই মানদণ্ডগুলি সব সময় কঠোরভাবে মানা হয় না। কারণ স্বীকৃতির ক্ষেত্রে প্রায়শই আইনি প্রয়োজনীয়তার বাইরে রাজনৈতিক বিষয়গুলিও জড়িত থাকে। স্বীকৃতি প্রদানকারী দেশটি দূতাবাস খোলার মাধ্যমে বা রাষ্ট্রদূত নিয়োগের মাধ্যমে নতুন রাষ্ট্রটির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে। এই সিদ্ধান্ত সাধারণত দেশের পররাষ্ট্র নীতি ও কৌশলগত স্বার্থে হয়।

Whatsapp
