পাকিস্তানের সেনা প্রধান মুনিরের সঙ্গে কেন বৈঠকে ট্রাম্প?
Donald Trump Asim Munir: মার্কিন মুলুকে বসবাসরত পাকিস্তানি এবং পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ কর্মীদের ব্যাপক ক্ষোভের মুখোমুখি হন মুনির।
অপারেশন সিঁদুর পরবর্তী পাকিস্তানি হামলা ও ভারতের পাল্টা হামলার মাঝে মধ্যস্থতা করে 'যুদ্ধবিরতি' ঘোষণা করে দিয়েছিলেন তিনিই। সারা বিশ্বের সমস্ত যুদ্ধ পরিস্থিতিতেই ইদানীং তাঁর ভূমিকা আছে। কোথাও তিনি স্থায়ী 'শান্তি' চাইছেন, কোথাও তিনি যুদ্ধবাজদের মাথায় হাত রাখছেন। ইউক্রেন-রাশিয়া, গাজা-ইজরায়েল থেকে শুরু করে ইরান-ইজরায়েল সমস্ত সংঘর্ষেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর দেশের নেতা হিসেবে যা করণীয় করে চলেছেন। এবার পাকিস্তানের চিফ অফ আর্মি স্টাফ জেনারেল আসিম মুনিরের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চলেছেন ট্রাম্প। পাকিস্তানের সেনা প্রধানের সঙ্গে ট্রাম্পের এই মধ্যাহ্নভোজনকালীন বৈঠক স্বাভাবিকভাবেই বিশ্ব রাজনীতি ও সন্ত্রাসের নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ব্যাপক তাৎপর্যপূর্ণ হতে চলেছে, বিশেষ করে ট্রাম্পের সুহৃদ ভারতের ক্ষেত্রে।
গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসবাদী হামলার পরে মে মাসে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক সংঘাত শুরু হয়। পহেলগাঁওয়ে ২৫ জন নিরস্ত্র পর্যটকসহ এক স্থানীয়ের মৃত্যু গোটা ভারতকে শোকবিহ্বল করে দেয়। এই হামলার নেপথ্যে ছিল পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈবার ছায়া সংগঠন দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট। এই হামলার নেপথ্যে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় মদতের যোগ ফাঁস হয়ে যায়। ভারতের অপারেশন সিঁদুর সন্ত্রাসের কিছু আঁতুরঘর ভেঙে দিলেও, পরবর্তীতে স্পষ্ট হয়ে যায় যে পাকিস্তানের এই সন্ত্রাসবাদ তোষণের চিত্রে বিশেষ ফারাক হয়নি। এই আবহে মুনিরের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠক স্বাভাবিকভাবেই গুরুত্বপূর্ণ।
অন্যদিকে, পাক সেনাবাহিনীর প্রধান আসিম মুনির ওয়াশিংটনে পৌঁছেই বিক্ষোভের মুখে পড়েছেন। মার্কিন মুলুকে বসবাসরত পাকিস্তানি এবং পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ কর্মীদের ব্যাপক ক্ষোভের মুখোমুখি হন মুনির। ওয়াশিংটন ডিসি-তে 'পাকিস্তানি কে কাতিল' এবং 'ইসলামাবাদ কে কাতিল'-এর মতো স্লোগানও ওঠে মুনিরকে ঘিরে। 'গণহত্যাকারী', 'স্বৈরশাসক' বলে চিৎকার করেন বিক্ষোভকারীরা।
আর ট্রাম্প তো এখন ইজরায়েল-ইরান সংঘাত নিয়েই ব্যস্ত। মাসখানেক আগে তিনি ভারত-পাকিস্তান নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। সদ্য তিনি ইরানের 'নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ' দাবি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন। তিনি তাঁর জাতীয় সুরক্ষা দলের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন। একাধিক পোস্টে ট্রাম্প বলেছেন যে, "ইরানের উপর আকাশের এখন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ আছে আমাদের"। বলেছেন, "আমরা ঠিক জানি তথাকথিত 'সুপ্রিম লিডার' কোথায় লুকিয়ে আছেন"। সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রাম্প সতর্ক করেছেন যে, "আমাদের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙছে”, এবং তারপরেই দাবি করেছেন, ইরানের 'নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ’!
মজার ব্যাপার হলো, আসিম মুনির এবং পাকিস্তান কিন্তু ইরানের অন্যতম শক্তিশালী সমর্থক। ওয়াশিংটন ডিসিতে এক বক্তৃতায় মুনির বলেছিলেন, তাঁরা ইরানের পাশে আছেন, তাঁরা এই সংঘাত শিগগিরই শেষ হওয়ার আশা করেন।
মনে রাখতে হবে, ইজরায়েল ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক ঘাঁটিতে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে, অন্যদিকে তেহরানও প্রতিশোধমূলক পাল্টা হামলা চালাচ্ছে। ট্রাম্প কিন্তু ইজরায়েলের পক্ষেই সমর্থনে সোচ্চার হয়েছেন। বলেছেন, ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র উৎপাদনের অনুমতি দেওয়া যাবে না। এই আবহে ইরানের মিত্র পাকিস্তানের সেনা প্রধানের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চলেছেন ট্রাম্প, যে বৈঠক দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।