নারীদের বাদ দিয়ে সংবাদিক সম্মেলন, তীব্র নিন্দা এডিটরস গিল্ডের

Taliban Minister’s Press Meet Sparks Outrage: ভারতের এডিটর গিল্ড (Editors Guild of India) এই ঘটনাকে স্পষ্ট লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য বলে উল্লেখ করেছে।

দিল্লির আফগান দূতাবাসে আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি-এর সংবাদ সম্মেলন শুধু কূটনৈতিক আলোচনার জন্যই নয়, নারী সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার কারণেও দেশের গণমাধ্যম ও সামাজিক মহলে তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়েছে। প্রথমবারের মতো ভারত সফরে আসা এই তালিবান মন্ত্রীর সাংবাদিক বৈঠককে নারী-বিরোধী নীতির সরাসরি প্রতিফলন হিসেবে দেখা হচ্ছে। ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ এই ঘটনাকে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও লিঙ্গ সমতার বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন।

ভারতের এডিটর গিল্ড (Editors Guild of India) এই ঘটনাকে স্পষ্ট লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য বলে উল্লেখ করেছে। গিল্ডের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “মহিলা সাংবাদিকদের বাদ দেওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি একটি স্পষ্ট লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য যা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার নীতি বিরুদ্ধ।” গিল্ড আরও উল্লেখ করেছে, ভিয়েনা কনভেনশনের আওতায় দূতাবাসগুলো থাকলেও, ভারতের মাটিতে এমন বৈষম্য গ্রহণযোগ্য নয়।

আরও পড়ুন

কেন নারীবিদ্বেষী তালিবানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াচ্ছে দিল্লি?

ভারতীয় মহিলা প্রেস কর্পস (Indian Women’s Press Corps) এই ঘটনাকে অত্যন্ত বৈষম্যমূলক বলে উল্লেখ করেছে। তাদের বক্তব্য, “মহিলা সাংবাদিকদের সংবাদ সম্মেলন থেকে বাদ দেওয়া আসলে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও সংবিধানিক নীতির বিরুদ্ধে সরাসরি আঘাত।” তারা ভারত সরকারকে অনুরোধ করেছে, আফগান দূতাবাসের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে স্পষ্ট আলোচনার করতে, যেন এই ঘটনার আর পুনরাবৃত্তি না হয়।

ভারতের রাজনৈতিক মহলের একাংশও ঘটনাটির নিন্দা করেছেন। কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বলেন, ““প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জি, ভারত সফরে তালিবান প্রতিনিধির সাংবাদিক সম্মেলন থেকে মহিলা সাংবাদিকদের অপসারণের বিষয়ে আপনার অবস্থান স্পষ্ট করুন। যদি নারীর অধিকারের প্রতি আপনার স্বীকৃতি কেবল এক নির্বাচন থেকে অন্য নির্বাচন পর্যন্ত সুবিধাজনক ভঙ্গিমায় প্রকাশ না হয়ে থাকে, তাহলে ভারতের সবচেয়ে যোগ্য কিছু নারীর প্রতি এই অপমান কীভাবে আমাদের দেশে অনুমোদিত হয়েছে, নারীরাই যে দেশের মেরুদণ্ড এবং গর্ব?” রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ঘটনা ভারতীয় কূটনীতির বাস্তবতা এবং গণতান্ত্রিক নীতির মধ্যে একটা জটিল দ্বন্দ্বকে সামনে এনেছে।

প্রথমে আফগান দূতাবাস কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে পরে আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরেকটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন, সেখানে নারী সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। এতে বোঝা যায়, আন্তর্জাতিক সমালোচনার কারণে আফগান পক্ষ কিছুটা মনোযোগী হয়েছে।

আরও পড়ুন

কর্মক্ষেত্রেনারী পুরুষে বেতনের ফারাক! বৈষম্যের কারণ উঠে এল সমীক্ষায়

তালিবান সরকার ২০২১ সালে ক্ষমতায় আসার পর নারীদের শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। মেয়েদের স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ, চাকরি থেকে সরানো এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। প্রায় কোনো দেশই এখনও তাদের সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি। এই প্রেক্ষাপটে ভারতের মতো গণতান্ত্রিক দেশ তালিবানকে স্বীকৃতি না দিয়ে, কূটনৈতিক সংলাপ চালাচ্ছে, এই নিয়েও নিন্দার ঝড় উঠেছে।

যদিও বিতর্ক শুরু হতেই পররাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়ে দিয়েছিল, “এই অনুষ্ঠান আয়োজনের সঙ্গে ভারতের কোনো যোগ নেই।” তবুও প্রশ্ন উঠছে, তালিবানের নারীবিদ্বেষী নীতি জানা সত্ত্বেও, ভারত কেন আগেভাগে এমন বৈষম্যমূলক অনুষ্ঠানের বিরোধিতা করল না?

উল্লেখ্য, এই ঘটনা আরও একবার মনে করিয়ে দিয়েছে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও লিঙ্গ সমতা রক্ষার জন্য এখনও সতর্ক থাকা জরুরি। স্বীকৃতি না দিয়ে আফগানিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক রাখার বিষয়টি ভারতের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। নীতি এবং বাস্তবতার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারবে তো ভারত? সেই প্রশ্ন থাকছেই।

More Articles