অবসরের আট মাস! কেন আজও বাসভবন ছাড়েননি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়?

Chandrachur : প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের পর দু'জন দেশের প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব নিয়েছেন। কিন্তু প্রধান বিচারপতির জন্য নির্দিষ্ট করা বাংলোতে ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ই রয়ে গিয়েছেন।

গত বছরের নভেম্বরে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় অবসর গ্রহণ করেন। মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও সরকারি বাসভবন ছাড়েননি তিনি। ওই বাংলোটি দেশের প্রধান বিচারপতির জন্য নির্দিষ্ট করা।তাই দ্রুত বাংলোটি খালি করতে কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি দিল সুপ্রিম কোর্ট।

প্রধান বিচারপতি থাকাকালীন তিনি টাইপ-৮ বাংলো পেতেন। নিয়ম অনুযায়ী, অবসরের পর সর্বাধিক ৬ মাস টাইপ-৭ সরকারি বাংলোয় থাকতে পারেন একজন প্রধান বিচারপতি। কিন্তু প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি ৬ মাস অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ার পরও কৃষ্ণা মেনন মার্গের বাংলোয় থাকছেন, যা প্রধান বিচারপতির জন্য বরাদ্দ। এবার এই নিয়ে কেন্দ্রকে চিঠি দিল সুপ্রিম কোর্ট। দ্রুত বাংলো ছেড়ে সুপ্রিম কোর্টের হাউসিং পুলে ফিরে যেতে বলা হয়েছে। পুরো ঘটনাটি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। চলছে পক্ষে বিপক্ষে যুক্তি।

আদালতের কেন্দ্রীয় নগর উন্নয়ন মন্ত্রককে দেওয়া চিঠিতে প্রাক্তন বিচারপতিকে বাসভবন খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আদালতের তরফে বলা হয়েছে, নিয়ম অনুসারে, মেয়াদ শেষের পর কোন বিচারপতিই এত দিন সরকারি বাংলোতে থাকতে পারবেন না।

আরও পড়ুন-কেন্দ্রের শিক্ষানীতি রাজ্যে চালু না হতে দিলেই সমস্যা মিটে যাবে?

এর জবাবে প্রাক্তন বিচারপতি জানিয়েছেন, ব্যক্তিগত সমস্যার জন্য তিনি এখনও বাংলো ছাড়তে পারেননি। তিনি বিকল্প একটি বাংলো পেয়েছেন। তবে সেখানে কিছু সংস্কারের প্রয়োজন। পাশাপাশি, তাঁর দুই কন্যর নিয়মিত এআইআইএমএস (AIIMS)-এ বিশেষ চিকিৎসার দরকার হয়। তাঁরা বিশেষভাবে সক্ষম। এই কারণেই তাঁর সময় লাগছে বলে তিনি জানান। তিনি আরও বলেন, “এই সমস্যার সমাধান কয়েক দিনের মধ্যেই হয়ে যাবে। আমি অবগত এই পদে থাকাকালীন দায়িত্ব ও মর্যাদা কীরকম হওয়া উচিত।”

২০২২ সালে সুপ্রিম কোর্টের জাজেস রুলস-এর ৩বি ধারা অনুযায়ী, অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মেয়াদ শেষে সর্বোচ্চ ছ'মাস পর্যন্ত সরকারি বাংলোয় থাকতে পারেন৷ সেই অনুযায়ী প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের চলতি বছরের ১০ মে বাংলো ছেড়ে দেওয়ার কথা৷ কিন্তু তাঁর ব্যক্তিগত কিছু সমস্যার কারণে তিনি ওই বাসভবনে থাকার জন্য আরও সময় চেয়েছিলেন৷ তাঁকে সেই অনুমোদনও দেওয়া হয়েছিল। ৩১ মে সেই সময়ও শেষ হয়ে গিয়েছে।

দেশের ৫০তম প্রধান বিচারপতি ছিলেন ডিওয়াই চন্দ্রচূড়৷ ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত তিনি প্রধান বিচারপতির দায়িত্বে ছিলেন৷ ১০ নভেম্বর মেয়াদ শেষের পর প্রায় ৮মাস ধরে দেশের প্রধান বিচারপতির জন্য নির্দিষ্ট করা বাংলোটিতেই থাকছেন তিনি।

তাঁর মেয়াদ শেষের পর দেশের ৫১তম প্রধান বিচারপতি হন সঞ্জীব খান্না৷ তিনি অবসর নেন চলতি বছরের ৩১ মে৷ ছ'মাস নিজের বাসস্থানেই ছিলেন তিনি। তাঁর পরে ৫২তম প্রধান বিচারপতি হন বিআর গাভাই। তিনিও তাঁর পূর্বতন বাংলোতেই থাকছেন৷ বর্তমান প্রধান বিচারপতি বিআর গভাইকে আশ্বাস দিয়েছেন যে দ্রুত বাংলো ছেড়ে দেবেন। প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের পর দু'জন দেশের প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব নিয়েছেন৷ কিন্তু প্রধান বিচারপতির জন্য নির্দিষ্ট করা বাংলোতে ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ই রয়ে গিয়েছেন৷

আরও পড়ুন- Air India crash report: দুটি ইঞ্জিন-ই বন্ধ! এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান দুর্ঘটনার তদন্তে উঠে এল যে তথ্য

এর মধ্যে অনেকেই কেন্দ্রীয় সরকারের মদত রয়েছে বলে দাবি করছেন। এর আগে একাধিকবার প্রাক্তন বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের সঙ্গে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের ঘনিষ্ট সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গণেশ পুজো উপলক্ষে তাঁর বাসভবনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যাওয়া নিয়ে কম জলঘোলা হয়নি জাতীয় রাজনীতিতে। মারাঠিদের মতো টুপি পরে পুজোয় অংশ নিয়েছিলেন মোদি। বিরোধীদের অভিযোগ, প্রাক্তন বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ই প্রশ্নবিদ্ধ রায়ে অযোধ্যা বিবাদের নিষ্পত্তি করে মোদি সরকারের মুখরক্ষা করেছিলেন। একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে রাম মন্দির-বাবরি মসজিদ জমি বিতর্কের রায়দান প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় বলেছিলেন, “আমি প্রতিদিন ঈশ্বরের সামনে বসে প্রার্থনা করতাম। আমি মনে করি যে যদি কেউ বিশ্বাস রাখে, তবে ভগবান তাঁকে সঠিক পথ দেখাবেই।”

শুধু তাই নয়, মসজিদ বা দরগাহর নিচে কোনো মন্দির ছিল কিনা তা জানতে একের পর এক সমীক্ষার অনুমতি দিয়েছিলেন চন্দ্রচূড়। এর পর থেকে যে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে তার জন্য চন্দ্রচূড়কেই দায়ী করেন ওয়াকিবহাল মহল । বারাণসীতে মন্দির ভেঙে জ্ঞানবাপি মসজিদ তৈরি হয়েছিল কি না, তা খতিয়ে দেখতে এলাহাবাদ হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছিলেন, ১৯৯১ সালে তৈরি ধর্মস্থান আইনের নিরিখে প্রধান বিচারপতি হিসেবে চন্দ্রচূড় তা খারিজ করে দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। সে সময় আস্থার যুক্তি দেখিয়ে সেখানে তিনি পূজার্চনারও ছাড়পত্র দিয়েছিলেন। দুর্ভাগ্য হল, প্রধান বিচারপতিই সংবিধানের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর কথা বিবেচনায় রাখেননি।

এখন সরকারি বাসভবন প্রসঙ্গে প্রশ্ন উঠছে, তবে কি সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতিই খোদ নিয়ম লঙ্ঘন করছেন?

More Articles