ইউরোপ জুড়ে গাজা নিয়ে উত্তাল প্রতিবাদ! যুদ্ধবিরতি ও বিচারের দাবিতে লাখো মানুষের মিছিল

Israel’s genocidal war on Gaza: ব্রিটেনের লন্ডনে পরিস্থিতি আরও উত্তাল ছিল। বহু মানুষ হাতে ব্যানার নিয়ে, রাজপথে দাঁড়িয়ে, ইজরায়েলি হামলা বন্ধের আহ্বান জানায়। আয়োজকদের দাবি, অন্তত এক লাখ মানুষ এই বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে।

গাজার যুদ্ধ থামাতে এবং সেখানে আটকে থাকা নিরীহ মানুষের জন্য আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে ইউরোপের রাস্তায় নেমে আসে লাখো মানুষ। ২৯ নভেম্বর প্যালেস্টিনি জনগণের প্রতি আন্তর্জাতিক সংহতি দিবস উপলক্ষ্যে ইউরোপের বিভিন্ন শহরে এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। ফ্রান্স, ব্রিটেন, ইতালি, স্পেন, সুইজারল্যান্ড, পর্তুগাল-সহ অন্তত ১৫টিরও বেশি দেশে মানুষ রাস্তায় নেমে গাজাকে বাঁচানোর এবং যুদ্ধবিরতির দাবি তোলে।

গাজায় হামলা শুরু হওয়ার পর থেকেই হাজার হাজার প্রাণহানির খবর সামনে এসেছে। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে হাসপাতাল, স্কুল, ঘরবাড়ি, বাজারও— মানুষের বেঁচে থাকাই কঠিন হয়ে উঠেছে। ঠিক এমন সময় ইউরোপের সাধারণ মানুষ নিজেরাই রাস্তায় নেমে বিশ্বকে মনে করিয়ে দিল— গাজায় হামলা শুধু মধ্যপ্রাচ্যের নয়, মানবতার বিরুদ্ধেও এক ভয়াবহ অপরাধ।

এই দিন ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস যেন এক বিক্ষুব্ধ সমুদ্রে পরিণত হয়েছিল। শহরের কেন্দ্র থেকে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের একের পর এক মিছিল আসে। তাঁদের হাতে প্যালেস্টাইনের পতাকা, পোস্টার এবং স্লোগান,

Gaza, Gaza, Paris is with you

Stop the genocide

Freedom for Palestine

বেশিরভাগই ছিলেন তরুণ-তরুণী, ছাত্র, শ্রমজীবী মানুষ, শিশুদেরও সঙ্গে নিয়ে আসা বেশ কিছু পরিবার। মিছিল থেকে বিক্ষোভকারীরা বার্তা দেন, গাজার মানুষের প্রতি নৃশংস আচরণ তাঁরা মেনে নেবেন না। তাঁরা দাবি জানান, ইজরায়েলের উপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়াতে হবে এবং যুদ্ধবিরতি পুরোপুরি কার্যকর করতে হবে। প্যারিসে অনেকেই বলেন, একটি শিশুও যদি ক্ষুধার্ত বা বোমায় মারা যায়, তা সমগ্র মানবজাতির পরাজয়। আমরা সেই পরাজয়ের সামনে মাথা নত হতে চাই না।

আরও পড়ুন

১৯৬৭ থেকে ২০২৫! যেভাবে গাজায় বারবার নিশানা করা হচ্ছে সাংবাদিকদের

ব্রিটেনের লন্ডনে পরিস্থিতি আরও উত্তাল ছিল। বহু মানুষ হাতে ব্যানার নিয়ে, রাজপথে দাঁড়িয়ে, ইজরায়েলি হামলা বন্ধের আহ্বান জানায়। আয়োজকদের দাবি, অন্তত এক লাখ মানুষ এই বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে। লন্ডনের ট্রাফালগার স্কোয়ার থেকে ওয়েস্টমিনস্টার পর্যন্ত বিক্ষোভকারীরা ‘Ceasefire Now’ (এখনই যুদ্ধবিরতি) স্লোগানে মুখর হয়। কিছু বিক্ষোভকারীর বক্তব্য, মানুষ মরছে, ঘরবাড়ি ধ্বংস হচ্ছে, তবুও বিশ্বনেতারা চুপ। তাই আমরা রাস্তায় নেমেছি।

ইতালির রাজধানী রোমেও মানুষের ঢল দেখা যায়। পরিবেশ আন্দোলনের পরিচিত মুখ গ্রেটা থানবার্গ এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রতিনিধি ফ্রান্সেস্কা আলবানিজ মিছিলে যোগ দেন। তাঁদের উপস্থিতি বিক্ষোভে আরও উৎসাহ যোগায়।
রোমের রাস্তায় বিক্ষোভকারীরা সরাসরি বলেন, গাজায় যা চলছে, তা যুদ্ধ নয়, এটা গণহত্যা। আন্তর্জাতিক মহল চোখ বন্ধ করে বসে থাকতে পারে না।

ইতালির অন্যান্য শহর যেমন মিলান, নেপলস, ফ্লোরেন্সেও একই দিনে ছোট বড় মিছিল হয়। স্পেন, সুইজারল্যান্ড, পর্তুগাল-সহ অজস্র দেশে বিক্ষোভে নামে মানুষ। স্পেনের বার্সেলোনা ও মাদ্রিদে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নামে। বিশাল পোস্টার, স্লোগানে সব জায়গাতেই একই কথা,

Palestinian Lives Matter

Let Gaza Live

সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘের অফিসের সামনে মোমবাতি জ্বালিয়ে বিক্ষোভ হয়। পর্তুগালের লিসবনে প্রায় ২০ হাজার মানুষ মানববন্ধন তৈরি করে সমগ্র বিশ্বের উদ্দেশে বার্তা দেয়,

শান্তি চাই, ক্ষমতা নয়

বিক্ষোভকারীরা কয়েকটি মূল দাবি সামনে আনেন,

• স্থায়ী যুদ্ধবিরতি

নভেম্বরের অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি কার্যত ভেঙে গিয়েছে। ইজরায়েল নিয়মিত হামলা চালিয়েছে, এ অভিযোগ তোলেন তাঁরা। তাই তাঁরা দাবি করেন তৎক্ষণাৎ, স্থায়ী যুদ্ধবিরতির।

আরও পড়ুন

৪৪ দিনে প্রায় ৪৯৭ বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন! এখনও কেন অশান্ত গাজা?

• মানবিক সহায়তার অবাধ প্রবেশ

গাজায় খাদ্য নেই, ওষুধ নেই, পানীয় জল নেই। না খেতে  পেয়ে এবং রোগে আক্রান্ত হয়ে শিশুরা মারা যাচ্ছে। ইজরায়েল প্যালেস্টাইনে সহায়তা পৌঁছাতে দিচ্ছে না বলে অভিযোগ তোলে বিক্ষোভকারীরা।

• গণহত্যার আন্তর্জাতিক তদন্ত

বিক্ষোভকারীদের কথায়, গাজায় যা হচ্ছে, তা যুদ্ধের নিয়ম মেনে নয়, এটা একপক্ষের ধ্বংসযজ্ঞ। তাঁরা চান, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত এবং জাতিসংঘ তদন্ত করুক।

• অস্ত্রবিক্রি বন্ধ

অনেক ইউরোপীয় দেশ ইজরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ করে। বিক্ষোভকারীদের দাবি এই অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করতে হবে, না হলে যুদ্ধকে থামানো সম্ভব নয়।

এই ব্যাপক বিক্ষোভের ফলে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, রাস্তা ভরিয়ে মানুষ নামলে কি সত্যিই বিশ্বনীতি বদলায়? ইতিহাস বলছে, হ্যাঁ, বদলায়। ভিয়েতনাম যুদ্ধ, দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবৈষম্য, ইরাক যুদ্ধ এসব ক্ষেত্রেও সাধারণ মানুষের ধারাবাহিক বিক্ষোভ বিশ্বকে নড়িয়েছিল। গাজার ক্ষেত্রেও একই আশার আলো দেখছে ইউরোপের মানুষ। তারা মনে করে, জনমত তৈরি হলে পশ্চিমা সরকারগুলি চাপের মুখে সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবে। ২০২৫ সালের ২৯ নভেম্বরের বিক্ষোভ ইউরোপের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন হয়ে থাকবে। আবারও প্রমাণ হলো মানবতার প্রশ্নে বিশ্বের মানুষ এখনও একতাবদ্ধ হতে পারে।

More Articles