স্বাধীনতার ৭৫ বছর পেরিয়েও বহাল ব্রিটিশ মালিকানা! দেশের একমাত্র 'পরাধীন' রেলপথ এটিই
Indian Railways: স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও পরাধীন, আজও ব্রিটিশদের দখলে ভারতের এই রেললাইন, জানেন কোথায়?
আধুনিকতায় পাল্লা দিয়ে যতই সময় বাঁক বদল করুক না কেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার আদি এবং অকৃত্রিম বন্ধু হিসেবে থেকে যাবে রেলপথই। আজ অবশ্য অনেকেই সময় এবং প্রয়োজনের সঙ্গে সাযুজ্য রাখতে আকাশপথ অথবা সড়কপথকে বিকল্প হিসেবে বেছে নেন, তবে তাতে রেলপথের কদর কমে না একটুও। এদেশে প্রথম রেলপথের সূচনা হয় ব্রিটিশ আমলে। তারপর ১৯৪৭ দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সেগুলি চলে আসে ভারতীয় সরকারের আওতায়। পরবর্তীতে আরও বিস্তার লাভ করে এই যোগাযোগ মাধ্যম। আজ ভারতীয় রেল বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম রেল পরিষেবা। শুধু তাই নয়, পাশাপাশি ১২ লক্ষ কর্মচারী নিয়ে ভারতীয় রেল বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম বাণিজ্যিক সংস্থাও বটে।
সাহেবরা দেশ ছেড়ে চলে গেলেও তাদের লেজ ধরে রাখার অভ্যাস যেন সময়ের সঙ্গে এ দেশের মাটিতে কেমন প্রোথিত হয়ে গিয়েছে। অবশ্য দুশো বছর তো কিছু কম সময় নয়, তাই সেই সময়ের জের থেকে যাওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু সরকারি ভাবেও বিদেশি প্রভাব থেকে যাওয়ার কথা শুনেছেন কি? জানেন ভারতেই রয়েছে এমন একটা রেললাইন যা স্বাধীনতার পর এতগুলো বছর পেরিয়ে এসেও রয়ে গিয়েছে পরাধীন। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি যে আজও দেশে এমন একটি রেলপথ রয়েছে যা এখনও ব্রিটিশদের দখলে।
কার্যত পরাধীন এই ট্র্যাকটি শকুন্তলা রেলওয়ে ট্র্যাক নামে পরিচিত। মহারাষ্ট্রের অমরাবতী থেকে মুর্তজাপুর পর্যন্ত এই ট্র্যাকের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৯০ কিলোমিটার। এই ট্র্যাকের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৯০৩ সালে। তার পর টানা ১৩ বছর ধরে চলে নির্মাণ কাজ। অবশেষে ১৯১৬ সালে শেষ শকুন্তলা রেলপথ নির্মাণের কাজ। মহারাষ্ট্রের অমরাবতীতে একসময় ব্যাপক তুলো চাষ করা হতো। এখানকার তুলো রপ্তানি করা হতো মুম্বাই বন্দরে। সেখান থেকে বিদেশেও। তাই অমরাবতী থেকে মুম্বাই যাওয়ার জন্য এই ট্র্যাক করা হয়েছিল সেই সময়। ব্রিটেনের ক্লিক নিক্সন অ্যান্ড কোম্পানি এই রেলপথ নির্মাণের জন্য সেন্ট্রাল প্রভিন্স রেলওয়ে কোম্পানি (CPRC) প্রতিষ্ঠা করে।
আরও পড়ুন - একটাই রেল স্টেশনের দুই প্রান্ত দুই রাজ্যে! ভারতেই রয়েছে এমন উদাহরণ, জানেন কোথায়?
শুরুর সময় এই ট্র্যাকে শুধুমাত্র একটি ট্রেন চলত যা শকুন্তলা প্যাসেঞ্জার নামে পরিচিত ছিল। আর এই ট্রেনের নাম থেকেই এই রেল পথের নাম হয় শকুন্তলা রেলওয়ে ট্র্যাক। প্রথমে কয়লার ইঞ্জিনেই চলত ট্রেন। সেসময় মোট ১৭টি স্টেশনে থামত ট্রেনটি। আর মোট যাত্রাপথ অতিক্রম করতে সময় নিত ৬ থেকে ৭ ঘন্টা মতো। চালু হওয়ার পর ৭১ বছর ধরে স্টিম ইঞ্জিনে চলার পরে ১৫ এপ্রিল, ১৯৯৪ সাল থেকে প্রথমবার এই ট্রেন চলে ডিজেল ইঞ্জিনে৷ ট্রেনের গতিবেগ ঘণ্টায় প্রায় ২০ কিলোমিটার৷ ট্রেনের ভাড়া ২৫ টাকা। এখনও মোট ১৯০ কিলোমিটার পাড়ি দেয় এই ট্রেন। অমরাবতী ডিভিশনের অধীনে চলা এই শকুন্তলা রেলওয়ের কর্মী সাকুল্যে ৭ জন৷ শকুন্তলা রেলওয়ের সিগনাল সামলানো, টিকিট কাটা থেকে মাল ওঠানামা সবটাই সামাল দিতে হয় এই ৭ জন কর্মীকেই৷
সব মিলিয়ে এখনও বেশ অবহেলায় পড়ে রয়েছে স্টেশনটি। অথচ ট্রেন চলাচলের জন্য ভারত সরকার প্রতি বছর ১ কোটি ২০ লাখ টাকা রয়্যালটি দেয় ওই ব্রিটিশ কোম্পানিটিকে। তবুও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ধুঁকছে প্রাচীন এই শকুন্তলা রেলওয়ে ট্র্যাক। এমনকী চলমান শঙ্কুতলা এক্সপ্রেসও বন্ধ হয়ে গেছে গত ২০২০ সালে। ফের এই পথে নতুন করে ট্রেন চলাচলের জন্য বারবার দাবি তুলেছেন স্থানীয়রা। এখন দেখার কবে আবার নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে পারে দেশের একমাত্র পরাধীন স্টেশনটি।