গঙ্গার পবিত্র উৎসমুখে এবার মানববর্জ্য! গঙ্গোত্রীতে যে ভাবে ছড়াচ্ছে দূষণ

Pollution In Gangotri: গঙ্গার উৎসমুখ, যা এতদিন পৃথিবীর পবিত্রতম স্থান হিসেবে ধার্য করা হত, সেই জায়গাও মানববর্জ্যে কলুষিত হয়েছে। ইতিমধ্যেই ট্রাইব্যুনালের তরফে রাজ্যকে এ সংক্রান্ত পদক্ষেপের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মাত্রাতিরিক্ত দূষণের জেরে ক্রমশ বসবাসের অযোগ্য হচ্ছে পৃথিবী। প্রতিবছরই শীত পড়তে না পড়তে দিল্লির বাতাসের গুণগতমান ক্রমশ নামতে থাকে। মানুষের শ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে জল দূষণও। আজ থেকে নয়, দীর্ঘদিন ধরেই দূষিত যমুনার জল। সাম্প্রতিক কালে সেই দূষণ মাত্রাতিরিক্ত বেড়েছে। ছট পুজো উপলক্ষে সেই বিষাক্ত জলেই দেদার স্নান করেছেন ভক্তেরা। অ্যামোনিয়া-যুক্ত বিষাক্ত ফেনাজলকে শ্যাম্পু-সাবান মনে করে তাতে দেদার চুল-মুখ ধুয়েছেন তারা। সেই ভিডিও ভাইরাল সোশ্যাল মিডিয়ায়। তবে শুধু যমুনা নয়, একই রকম অবস্থা গঙ্গারও। উত্তরাখণ্ড সরকারের রিপোর্ট খতিয়ে দেখে সম্প্রতি ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল জানিয়েছে, এমনকী গঙ্গার উৎসমুখও নাকি দেদার দূষিত হয়ে গিয়েছে স্যুয়েজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট থেকে নির্গত দূষিত ও বিষাক্ত পদার্থের দরুণ।

প্রতিদিন বেড়ে চলা দূষণকে কেন্দ্র করে পরিবেশবিদদের যখন উদ্বেগের শেষ নেই, সেই উদ্বেগকে আরও বাড়িয়েছে ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনালের সাম্প্রতিক এই রিপোর্ট। গঙ্গার জল ক্রমাগত দূষিত হয়ে চলেছে অনেক দিন ধরেই। নদীর ধারে গড়ে ওঠা বহু রাসায়নিক কারখানার বর্জ্য, শহরের বর্জ্য গঙ্গায় পরিবাহিত করা থেকে শুরু করে নানাবিধ কারণে নষ্ট হয়েছে গঙ্গার জল। তবে এতদিন পর্যন্ত গঙ্গার উৎসমুখে সেই দূষণের ছোঁয়াচ পৌঁছয়নি কখনও। তবে এবার সেখানেও পৌঁছে গেল দূষণ-রাক্ষসের থাবা। সম্প্রতি উত্তরাখণ্ডের গঙ্গায় দূষণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া চলাকালীন এ সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট জমা দেয় উত্তরাখণ্ড সরকার।

আরও পড়ুন: বাতাসে শ্বাস নেওয়া ভার, নদীতে বিষ! কোন পথে দূষণ-রাক্ষসকে রুখবে রাজধানী দিল্লি?

এর আগে একাধিক বার গঙ্গা দূষণ নিয়ে কেন্দ্র সরকার ও অন্যদের কাছ থেকে নানবিধ রিপোর্ট চেয়েছে ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল। এনজিটি-র চেয়ারপার্সন বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের বেঞ্চে জমা পড়েছে রাজ্যের ওই রিপোর্ট। জানা গিয়েছে,গঙ্গোত্রীর কাছ থেকে জল সংগ্রহ করা হয়েছিল পরীক্ষার জন্য, যেখান থেকে ফেকাল কলিফর্ম নামে একধরনের ব্যাকটিরিয়ার সন্ধান মিলেছে। এই ধরনের ব্যাকটিরিয়া সাধারণত মেলে উষ্ণ রক্তের প্রাণীর মলে। অনুমান করা হচ্ছে, স্যুয়েজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট থেকে দূষিত পদার্থ মিশছে গঙ্গা নদীর উৎসমুখ গঙ্গোত্রীতেও।

সেন্ট্রাল পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ড জলের গুণগতমানের যে মানদণ্ড ঠিক করে দিয়েছে, সেই মানদণ্ড অনুযায়ী, স্নানের জন্য জলের এমপিএন (মোস্ট পোর্টেবল নম্বর) থাকা উচিত ৫০০/১০০-র কম মাত্রায়। যেখানে গঙ্গার উৎসমুখের এমপিএন রয়েছে ৫৪০/১০০। যা বেশ দুশ্চিন্তার বলেই মনে করা হচ্ছে। গত ৫ নভেম্বর, বিচারবিভাগীন সদস্য তথা বিচারপতি সুধীর আগরওয়াল ও বিশেষজ্ঞ সদস্য এ সেন্থিল ভেলের নেতৃত্বে গঠিত ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল বেঞ্চে একটি রিপোর্ট জমা পড়ে। গঙ্গার উৎসস্থলটি আদতে স্যুয়েজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট দ্বারা দূষিত বলেই দাবি করা হয়েছে ওই রিপোর্টে।

আরও পড়ুন:ভারতে এক বছরে ১৬ লাখ মানুষের মৃত্যু দূষণে! যেসব ভয়াবহ সত্য প্রকাশ রিপোর্টে

যদিও রাজ্যের জমা করা রিপোর্টটিকে যথাযথ মনে করছে না ট্রাইব্যুনাল। কারণ, রাজ্যের রিপোর্টে দেখানো হয়েছে ওই স্যুয়েজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টটি তেমন ভাবে ব্যবহৃত হয় না। দেহরাদূন, উত্তরকাশী, পাউরি এবং চামোলি এলাকায় সামান্য পরিমাণে ব্যবহৃত হয়েছে সেটি। হরিদ্বার ও তেহরি এলাকায় অতিরিক্তি পয়ঃনিষ্কাশন কেন্দ্রের ব্যবস্থা ইতিমধ্যেই রয়েছে। পাশাপাশি বন্যা বা ব্যাকফ্লো চলাকালীন ওই স্যুয়েজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে জল আটকে থেকেছে, এমন ঘটনাও ঘটেনি। ফলে সেখান থেকে গঙ্গার উৎসমুখ দূষণের জায়গা কম। কিন্তু ট্র্রাইব্যুনালের পাল্টা দাবি, রাজ্যের দাবি সম্পূর্ণ সঠিক নয়। বরং ৬৩টি অব্যবহৃত ড্রেন আসলে সরাসরি গঙ্গা ও তার উপনদীতে অপরিশোধিত মানববর্জ্য নিঃসরণ করেছে। যার ফলে আজ এই অবস্থা। উধম সিং নগর জেলার কাশিপুর, বাজপুর, কিচ্ছা শহরেও সমস্ত ড্রেন অপরিবর্তীত রয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে।

গঙ্গার উৎসমুখ, যা এতদিন পৃথিবীর পবিত্রতম স্থান হিসেবে ধার্য করা হত, সেই জায়গাও মানববর্জ্যে কলুষিত হয়েছে। ইতিমধ্যেই ট্রাইব্যুনালের তরফে রাজ্যকে এ সংক্রান্ত পদক্ষেপের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোনও ভাবে যাতে গঙ্গানদী বা তার কোনও উপনদীতে মানববর্জ্য ওই স্যুয়েজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট থেকে না মিশতে পারে, তা নিশ্চিত করারও নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় সবুজ ট্রাইব্যুনাল।

More Articles