মাত্র ৯৫ টাকা প্রিমিয়ামে ১০ লক্ষ রিটার্ন! আজও লক্ষ্মীলাভের সেরা ঠিকানা পোস্ট অফিস
Post Office Scheme: কম দিনে বেশি মুনাফা পেতে হলে এই প্রকল্পের বিকল্প কার্যত নেই বললেই চলে।
এই দুর্মূল্যের বাজারে সাধারণ বেতনের চাকরি দিয়ে সংসার চালানো অনেকের পক্ষেই হয়ে উঠেছে দুষ্কর। যেভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে, সেই নিরিখে নিজের সংসার গুছিয়ে নিতে প্রয়োজন আরও বেশি পরিমাণ টাকার। ছোটখাটো সমান্তরাল রোজগার এখন অনেকের কাছেই অতিরিক্ত টাকা উপার্জনের পথ হিসেবে প্রমাণিত হলেও, এখনও অনেকেই এমন রয়েছেন, যাদের নতুন ব্যবসা শুরুর প্রতি একটা অন্যরকম ভীতি কাজ করে। তাই তাদের জন্য অতিরিক্ত টাকা উপার্জনের সবথেকে সহজ রাস্তা হলো বিনিয়োগ।
কিন্তু কোথায় বিনিয়োগ করলে ভালো হবে, এককালীন বিনিয়োগে, না কি খেপে খেপে টাকা বিনিয়োগ করলে বিষয়টা বেশি লাভজনক হয়, সেটা অনেকেই বুঝে উঠতে পারেন না। বর্তমানে ভারতে হাজার রকমের ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান নিয়ে হাজির হয়েছে একগুচ্ছ সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থা। বিমা থেকে শুরু করে আর্থিক বিনিয়োগ, সব ক্ষেত্রেই আপনারা পাচ্ছেন প্রচুর বিকল্প। তবে, এই বিষয়টা মাথায় অবশ্যই রাখতে হয়, যে কোম্পানি আপনাকে রিটার্ন বেশি দেবে, সম্ভাবনা আছে, সেই বিনিয়োগ প্রকল্পে টাকা রাখলে আপনার ঝুঁকি বেশি হবে। সেই কারণেই বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের আগে সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে তারপরেই একটি নির্দিষ্ট স্কিমে অর্থ লগ্নি করেন। তাই বিনিয়োগের জন্য হাজার কোম্পানির হাজার হাজার স্কিম উপলব্ধ হলেও, ভারতের বিনিয়োগ প্রকল্পের জগতে এখনও সর্বজনবিদিত হয়ে রয়েছে ভারতীয় জীবনবিমা নিগম বা LIC।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বাজারে বেসামাল অর্থনীতির চাপে ভারতীয় বাজারের পরিস্থিতি যে জায়গায় গিয়ে ঠেকেছে, সেখান থেকে আবার পুরনো জায়গায় ফিরে আসা ভারতের পক্ষে বেশ দুসাধ্য হয়ে উঠেছে। তাই বাজারের এই কঠিন মুহূর্তে ভারতের সাধারণ মানুষকে অর্থনৈতিক দিক থেকে সমর্থন করার জন্য এলআইসি নিয়ে এসেছে একটি এমন প্ল্যান, যেখানে স্বল্প টাকা বিনিয়োগ করেই আপনারা করতে পারবেন বড় পরিমাণে উপার্জন।
আরও পড়ুন: অল্প লগ্নিতে আয় বাড়বে বহুগুণ, জেনে নিন এই স্টক শেয়ারের সুবিধেগুলি
পোস্ট অফিস তাদের গ্রাহকদের জন্য অনেক ধরনের স্কিম নিয়ে আসলেও, কম দিনে বেশি মুনাফা পেতে হলে এই প্রকল্পের বিকল্প কার্যত নেই বললেই চলে। এই প্রকল্পে প্রতিদিন মাত্র ৯৫ টাকা বিনিয়োগ করলেই মেয়াদ শেষে আপনারা পেয়ে যাবেন ১৪ লক্ষ টাকা। ভারতীয় ডাক বিভাগ এই প্রকল্পের নাম দিয়েছে, সুমঙ্গল গ্রামীণ ডাক জীবন বিমা। ১৯৯৫ সালে ভারত সরকারের দ্বারা শুরু করা এই প্রকল্প বছর কয়েক আগেই আবারও নতুন করে ফিরে পেয়েছে নিজের জীবন। প্রতিদিন এই বিশেষ প্রকল্পে মাত্র ৯৫ টাকা বিনিয়োগ করেই আপনি উপার্জন করতে পারবেন ১৪ লক্ষ টাকা।
যদিও প্রথমে এই গ্রামীণ জীবনবিমার নাম সুমঙ্গল গ্রামীণ ডাক জীবনবিমা ছিল না। ১৯৯৫ সালে তৎকালীন ভারত সরকার এই প্রকল্পটি চালু করেছিল। আগে এই প্রকল্পের নাম ছিল পল্লি ডাক জীবনবিমা প্রকল্প। মূলত গ্রামীণ ভারতের দিকে লক্ষ রেখেই এই প্রকল্পের সূচনা করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পিভি নরসিংহ রাও। আর এই প্রকল্পের আওতায় এসেছিল গ্রাম সুমঙ্গল স্কিম। পরবর্তীতে এর অধীনে আরও পাঁচটি বিমা প্রকল্পের পরিকল্পনা যোগ করা হয়েছিল। এরপর মোদি সরকারের হাত ধরে এই প্রকল্পের আমূল পরিবর্তন হয় এবং নবরূপে সামনে আসে সুমঙ্গল গ্রামীণ ডাক জীবনবিমা।
এই প্রকল্পটি আপনি ১৫ এবং ২০ বছরের জন্য করতে পারেন। আপনার মূলধন ম্যাচিওর হবার আগেই আপনি এই অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা ফেরত পেতে পারেন। এই গ্রাম সুমঙ্গল যোজনায় সর্বোচ্চ ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত পাওয়া যায়। পলিসি ম্যাচিওর হওয়ার পরেই কিন্তু আপনি পুরো টাকা পাবেন। তবে যদি কোনও ব্যক্তির মৃত্যু হয়, তাহলে পলিসির টাকার পাশাপাশি পাওয়া যায় অতিরিক্ত কিছু বোনাস।
কী এই গ্রাম সুমঙ্গল যোজনা?
মূলত গ্রামীণ ভারতের জন্যই এই প্রকল্পটিকে নব রূপে সামনে নিয়ে আসা হয়েছে। যাদের প্রতি মাসে কিছু পরিমাণ অতিরিক্ত টাকার প্রয়োজন হয়, তাদের জন্যই নিয়ে আসা হয়েছে এই গ্রাম সুমঙ্গল যোজনা। এই যোজনায় আপনারা ১৫ বছরের জন্য নিয়মিতভাবে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা লাভ করতে পারেন। যদি পলিসি ম্যাচিওর হওয়ার সময় পর্যন্ত সেই ব্যক্তি বেঁচে থাকেন, তাহলেও তিনি কিন্তু একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ মানিব্যাক পেতে পারেন।
কারা এই প্রকল্প গ্রহণ করতে পারেন?
এই যোজনায় যদি আপনি টাকা বিনিয়োগ করতে চান, তাহলে আপনাকে অবশ্যই একজন ভারতীয় নাগরিক হতে হবে। গ্রাম সুমঙ্গল যোজনা আপনি ১৫ বছর অথবা ২০ বছর পর্যন্ত সময়সীমায় গ্রহণ করতে পারেন। এই প্রকল্প গ্রহণ করার সর্বনিম্ন বয়স ১৯ বছর। অন্যদিকে যদি কোনও ব্যক্তি ১৫ বছরের জন্য এই প্রকল্প গ্রহণ করতে চান তাহলে তার সর্বাধিক বয়স হতে পারে ৪৫ বছর পর্যন্ত এবং যদি কেউ ২০ বছরের প্রকল্পটি গ্রহণ করতে চান, তাহলে তার সর্বাধিক বয়স হতে হবে ৪০ বছরের মধ্যে। তবে যদি আপনি ২০ বছরের জন্য এই প্রকল্প গ্রহণ করেন তাহলে আপনি সর্বাধিক বিমার পরিমাণ ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত করতে পারেন।
মানিব্যাক নিয়ম
আপনি যদি ১৫ বছরের জন্য এই যোজনায় নাম নথিভুক্ত করেন তাহলে ৬ বছর, ৯ বছর এবং ১২ বছরের পূর্তিতে ২০ শতাংশ করে মানিব্যাক আপনি নিয়মিত অন্তরালে পেতে থাকবেন। অন্যদিকে বাকি ৪০ শতাংশ টাকা বোনাস সহযোগে মেয়াদ পূর্তির সময় আপনাকে দেবে ভারতীয় ডাক বিভাগ।
অন্যদিকে, যদি আপনি ২০ বছরের জন্য এই প্রকল্প গ্রহণ করেন তাহলে, ৮ বছর, ১২ বছর ও ১৬ বছরের পূর্তিতে আপনি ২০ শতাংশ করে টাকা রিটার্ন পেতে থাকবেন। বাকি ৪০ শতাংশ টাকা বোনাস সহযোগে আপনাকে ম্যাচিউরিটির সময় দেওয়া হবে।
মাত্র ৯৫ টাকা করে দিতে হবে প্রিমিয়াম
যদি কোন ২৫ বছর বয়সি ব্যক্তি এই প্রকল্প গ্রহণ করেন এবং টানা ২০ বছরের জন্য ৭ লক্ষ টাকার একটি সাম অ্যাসিওর্ড গ্রহণ করেন, তাহলে সেই ব্যক্তিকে প্রতিমাসে ২,৮৫৩ টাকা করে প্রিমিয়াম দিতে হবে। অর্থাৎ, প্রতিদিন সেই ব্যক্তিকে দিতে হবে ৯৫ টাকা করে প্রিমিয়াম। সেই ব্যক্তি প্রতি মাসে প্রিমিয়াম জমা দিতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে তাঁকে প্রতি মাসে ২৮৫৩ টাকা করে দিতে হবে। যদি তিনি তিন মাস অন্তর প্রিমিয়াম জমা করতে চান তাহলে তাঁকে প্রতি কোয়ার্টারে ৮৪৪৯ টাকা জমা করতে হবে। যদি সেই ব্যক্তি ছয় মাস অন্তর প্রিমিয়াম জমা করতে চান, তাহলে তাঁকে ১৬,৭১৫ টাকা করে দিতে হবে। সবশেষে যদি সেই ব্যক্তি বছরে একবার প্রিমিয়াম জমা দিতে চান তাহলে তাঁকে একসঙ্গে ৩২,৭৩৫ টাকা জমা দিতে হবে।
রিটার্ন পেয়ে যান ১৪ লক্ষ টাকা
যদি আপনি পোস্ট অফিসের এই যোজনা ২০ বছরের জন্য গ্রহণ করেন তাহলে আপনি অষ্টম, দ্বাদশ এবং ষোড়শ বছরে ১.৪ লক্ষ টাকা করে পাবেন। সবশেষে কুড়িতম বছরে গিয়ে আপনাকে একসঙ্গে ২.৮ লক্ষ টাকা পেমেন্ট করা হবে। এছাড়াও থাকবে কিছু বোনাস। প্রতি এক হাজার টাকায় বার্ষিক বোনাস ৪৮ টাকা করে ধার্য করা হয়েছে। সেই হিসেবে দেখতে গেলে যদি আপনি ৭ লক্ষ টাকার পলিসি গ্রহণ করেন, তাহলে বোনাস হবে ৩৩,৬০০ টাকা। সেই হিসেব অনুযায়ী, ২০তম বছরে গিয়ে এই বোনাসের অঙ্কটা দাঁড়াবে ৬.৭২ লক্ষ টাকা। অর্থাৎ, ১৩.৭২ লক্ষ টাকার লাভ আপনি পাবেন। এই পুরো টাকার মধ্যে ৪.২ লক্ষ টাকা আপনাকে মানিব্যাক হিসেবে আগেই ফিরিয়ে দেবে ইন্ডিয়া পোস্ট। আর বাকি ৯.৫২ লক্ষ টাকা পাওয়া যাবে ম্যাচিওরিটির সময়।