কলকাতায় বাস লক্ষ লক্ষ ভূতের! এই শীতে ঢুঁ মারতে পারেন এই সেরা ভুতূড়ে স্থানগুলোয়
Best Haunted Places in Kolkata: ১৩ নম্বর কোর্ট রুম। দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে এখান থেকেই। অনেকের দাবি, এখনও গভীর রাতে রক্তাক্ত পা হেঁটে গিয়ে ঢোকে ওই কোর্ট রুমে।
তিলোত্তমায় শীত কড়া নাড়ছে। আর শীতের সন্ধ্যা যে কতরকমভাবে কাটাতে ভালোবাসেন শহুরে মানুষ, ইয়ত্তা নেই। যাঁরা একটু রহস্য রোমাঞ্চ পছন্দ করেন শীতের সন্ধ্যে তাঁদের কাছে বহু প্রতীক্ষিত এক সময়। জমজমাট কলকাতার বুকেও রয়েছে ভূতেদের আড্ডাবাসর। কলকাতার নানা ঐতিহ্যশালী ভবন, পুরনো গলিকে ঘিরে রয়েছে ভৌতিক সব কাহিনি। এসব নিয়ে লেখালেখি হয়েছে প্রচুর, ভূতুড়ে কাহিনির রোমান্টিসিজমে যুগের পর যুগ মজতে ভালোবেসেছে বাঙালি। এমনই কিছু ভূতুড়ে ঠিকানার হদিশ দেওয়া রইল শীতকাতুরে কৌতূহলী বাঙালির জন্য। কিছু মানুষের বিশ্বাস, এই সব স্থানে ‘তেনাদের’ দেখা মিলতে পারে।
নিমতলা শ্মশানঘাট
শ্মশান মানেই যে সেখানে ভূতের দেখা পাওয়া যাবে এটাই খুব স্বভাবিক। অন্তত নিমতলা শ্মশানঘাটে হয় বলেই লোকের বিশ্বাস। অমবস্যার রাত এলেই নাকি সেখানে ভূতুড়ে কাণ্ডকারখানা শুরু হয়ে যায়। ছমছম করে ওঠে সাহসী হৃদয়ও।
হেস্টিংস হাউস
হেস্টিংস হাউস নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলে থাকেন। গুগল করলেও ‘হন্টেড প্লেস’ বলে এই জায়গার নাম সবার আগে দেখা যাবে। সেখানে গিয়ে বহুবার বহু মানুষের অদ্ভুত কিছু অনুভূতি হয়েছে। আলিপুরের অন্যতম পুরনো এই স্থাপত্যটি ছিল গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংসের বাসস্থান, সেই কারণেই এটি হেস্টিংস হাউস নামে পরিচিত। এখন এটি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত মেয়েদের কলেজ। সেখানকার ছাত্রীদের মুখে থেকেই শোনা যায় ভূতুড়ে কাণ্ড কারখানার কথা। অনেকেই নাকি ঘোড়ায় চড়ে এক সাহেবকে ঢুকতে দেখেছে সেখানে। অথচ তারপরে সেই সাহেবেকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। অনেকের মনে ধারণা, এখনও নাকি হেস্টিং সাহেব সেই বাড়িতেই থাকেন। তিনিই ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে আসেন। কেউ কেউ আবার মনে করেন, এক ফুটবল প্রেমীর আত্মা রয়েছে এই বাড়িতে। ওই যুবক নাকি ফুটবল খেলতে গিয়ে মারা গিয়েছিলেন সেখানে, তার পর থেকে ওখানেই বাস। এই রকম বহু কাহিনি উপলব্ধি করতে হলে যাওয়াই যায় হেস্টিংস হাউসে।
আরও পড়ুন- কেউ বলেন ‘হিরো’, কেউ ’রাস্তার গুন্ডা’! আসলে কে এই বিতর্কিত গোপাল পাঁঠা?
ভারতীয় জাদুঘর
কলকাতার উল্লেখযোগ্য ভূতুড়ে ঠিকানা নাকি ভারতীয় জাদুঘর! চৌরঙ্গি রোড বা এখনকার জওহরলাল নেহরু রোডের এই জাদুঘর তৈরি হয়েছিল ১৮৭৫-৭৮ সালে। এখানে রয়েছে প্রায় চার হাজার বছরের পুরনো এক মিশরীয় মমি। আরও আছে স্তন্যপায়ী প্রাণীদের হাড়গোড় দিয়ে সাজানো গ্যালারি। রয়েছে প্রাণিবিদ্যার নানা নমুনা জুওলজি গ্যালারিতে। অনেকেই মনে করেন এইখানেও নাকি রয়েছে ভূতেদের দেদার যাতায়াত।
ন্যাশনাল লাইব্রেরি
ভূতুড়ে কার্যকালাপে এই লাইব্রেরির যথেষ্ট দুর্নাম রয়েছে। অনেকেই এই লাইব্রেরিতে ভূতের দেখা পেয়েছেন বলে দাবি করেন। দিন দুপুরেই অশরীরি পদচারণার শব্দও শুনেছেন নাকি মানুষ, কেউ নাকি ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলে যায় অজান্তেই! কে? কানাঘুষো শোনা যায়, লর্ড মেটাকাফের স্ত্রীর আত্মাই নাকি ঘোরাফেরা করে লাইব্রেরিতে। ওই অশরীরির উপস্থিতি নাকি টের পেয়েছেন লাইব্রেরির কর্মীরাও।
লোয়ার সার্কুলার রোডের কবরস্থান
লোয়ার সার্কুলার রোডের এই কবরস্থান বহু বছরের পুরনো। এই কবরস্থানেই রয়েছে স্যার উইলিয়াম হে ম্যাকনটনের কবরও। প্রথম ইঙ্গ-আফগান যুদ্ধে তিনি নিহত হয়েছিলেন। আফগানিস্তান থেকে তাঁর মরদেহ কলকাতায় এনে তাঁর স্ত্রী তাঁকে সমাধিস্থ করেন এখানেই। শোনা যায়, উইলিয়াম সাহেবের এই সমাধির কাছে গেলেই নাকি কবরের সামনে ছায়াদানকারী গাছটি কাঁপতে থাকে। বহুবার এমনটা অনুভব করেছেন বহু মানুষ। এছাড়াও কবরস্থানে বহু মানুষের সমাধি থাকার কারণে সেখানে গেলে নাকি ভূত দেখতে পাওয়া যায় হামেশাই।
দক্ষিণ পার্ক স্ট্রিট গোরস্থান
পার্কস্ট্রিটের এই গোরস্থানে বেশিরভাগ সমাধিই ব্রিটিশ সৈন্যদের। কলকাতার সবথেকে পুরনো এই কবরস্থান নিয়ে অনেক গল্প রয়েছে। অনেকেই এই জায়গা পরিদর্শন করে অস্বাভাবিক কিছু লক্ষ্য করেছেন। এই স্থানকে কেন্দ্র করেও চর্চিত রয়েছে নানা ভৌতিক কাহিনি।
কলকাতা হাইকোর্ট
১৩ নম্বর কোর্ট রুম। দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে এখান থেকেই। অনেকের দাবি, এখনও গভীর রাতে রক্তাক্ত পা হেঁটে গিয়ে ঢোকে ওই কোর্ট রুমে।
কলকাতার পুতুল বাড়ি
পুতুল বাড়ি নামকরণের পেছনে যে খুব গুরুতর কারণ রয়েছে এমন নয়। কলকাতার ১৭, হরচন্দ্র মল্লিক লেন, আহিরিটোলার এই পুতুল বাড়ির মাথায় একটা পুতুল দাঁড়িয়ে রয়েছে। শতাব্দীপ্রাচীন এই বাড়ির বেশ নামডাক রয়েছে, খানিকটা নির্মাণ শৈলীর জন্য আর বাকিটা নাকি অশরীরীদের আনাগোনার সৌজন্য। অনেকেই মনে করেন এই বাড়িতে নাকি ভূত রয়েছে।
বাড়ির বারান্দায়, উপরের তলার কুঠুরিতে আত্মাদের নাকি অবিরাম আনাগোনা। তবে ভূত থাকুক বা নাই থাকুক, উত্তর কলকাতার এই বাড়ি নিয়ে মুখে মুখে ঘোরে নানান গল্প। কথিত রয়েছে, এই বাড়িতে নাকি আগেকার দিনে ‘বাবু’রা মহিলাদের নিয়ে এসে নির্যাতন চালাতেন। অনেক সময় তাঁদেরকে খুনও করা হয়। আর তাদেরই ‘অতৃপ্ত আত্মা’ ঘুরে বেড়ায় গোটা পুতুল বাড়িতে। যদিও ভূতুড়ে কাহিনিকে পাত্তা না দিয়েই এই বাড়ি পেয়েছে হেরিটেজ তকমাও। ২০১৩ সালে দ্য টেলিগ্রাফ ভূতুড়ে বাড়ির তালিকায় পুতুল বাড়ির নাম উল্লেখ করে।
আরও পড়ুন- সূচ ফুটিয়ে খুন, অধরা ভাড়াটে খুনি! কলকাতার সেই হত্যাকাণ্ড সাড়া ফেলেছিল পৃথিবীজুড়ে
আকাশবাণী
কলকাতার পুরনো ভূতুড়ে বাড়ির মধ্যে এক নম্বর গার্স্টিন প্লেস এবং দ্বিতীয় এর প্রথম অফিস। আকাশবাণীর পুরনো দফতর গার্স্টিন প্লেসে নাকি অনেকেই বারবার দেখেছেন অশরীরী আত্মা। ফাঁকা লম্বা করিডোর, অজস্র স্টুডিও আর ব্রিটিশ কাঠামো মিলিয়ে আকাশবাণীর ভূতুড়ে অস্তিত্ব অস্বীকার করা যায় না। রাত গভীর হলে অনেকেই দেখেছেন সাহেবের ছায়া উবু হয়ে কাজ করছে। আবার কেউ কেউ দেখেন মধ্যরাতে রেকর্ডিং রুমের বারান্দায় কে যেন গান শুনছেন। হয়তো বেতারের আশ্চর্য বিজ্ঞানই সে যুগের মনে জন্ম দিয়েছিল এসব ভূতুড়ে বিশ্বাসের। এখনও নানা স্টুডিও থেকেই রাতে ভেসে আসে যান্ত্রিক সুর। বলাই বাহুল্য, সেই যন্ত্রগুলো কোনও মানুষ বাজায় না।
গার্স্টিন প্লেস
এখনও রাতে পিয়ানোর সুর শোনা যায় গার্স্টিন প্লেসের পোড়ো বাড়ি থেকে। তাই এই বাড়িকে ভূতুড়ে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
রাইটার্স বিল্ডিং
একদা রাজ্যের মূল প্রশাসনিক ভবনের ফাঁকা ঘরগুলিই নাকি ছিল ভূতের বাসস্থান। রাত নামলেই তাঁদের হুড়োহুড়ি শুরু হয়। এমনকী এমনই ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয় যে, কেউ ওই ফাঁকা ঘরগুলির আশেপাশের ঘরগুলিতে থেকে কাজই করতে পারতেন না। কেউ সাহসও করতেন না সন্ধ্যার পর ওই ঘরগুলির আশেপাশে একা যাওয়ার। মাঝরাতে কান্নার আওয়াজও পাওয়া যেত নাকি। আসলে এই সবই দিনের পর দিন ধরে লোকমুখে প্রচলিত হয়ে আসা কাহিনি। এর সত্যতা যাচাই করতে হলে পৌঁছে যেতে হবে এই জায়গাগুলোয়।
মল্লিকঘাট
হাওড়া ব্রিজের ঠিক নিচেই গঙ্গা তীরবর্তী এই ঘাট। মল্লিক ঘাট ফুল বাজারের সামনেই। শোনা যায়, সেখানে নাকি ভূতের অস্তিত্ব টের পাওয়া যায়। যারা সেখানে দৈনিক যাতায়াত করেন তাঁরা একবার না একবার ভূতুড়ে ঘটনার সাক্ষী হয়েছেন। সেখানে নাকি একজন মহিলা ভূতকে দেখতে পাওয়া যায় সাদা শড়ি পরে। লোকজনের ধারণা, গঙ্গায় ডুবে কোনও মহিলার মৃত্যু হয়েছিল। তাঁর আত্মাই ঘুরে বেড়ায় সেখানে। ইচ্ছে থাকলে এই অমাবস্যাতেই ঘুরে আসতে পারেন মল্লিক ঘাট থেকে।