দেহ থেকে আলাদা যৌনাঙ্গ, ৬ সেমি লম্বা শুক্রাণু! অবাক করবে পোকাদের যৌনজীবন

Reproduction of Insects: একজন স্ত্রী পোকার প্রজনননালিতে বেশ কয়েকটি পুরুষের শুক্রাণু থাকতে পারে।

মানুষের যৌন পরিচয় ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে, যৌনতার চাহিদাও কিন্তু যৌন প্রক্রিয়া কমবেশি একই। যৌনতার রকমফেরে কীটপতঙ্গঅরা গুনে গুনে ১০০ গোল দিতে পারে মানুষকে। বিচিত্র কীটপতঙ্গের বিচিত্র দেহবৈচিত্র, বিচিত্র যৌনরীতি। এমন অনেক পোকামাকড় আছে যাদের পুরুষাঙ্গ দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করা যায়। অনে কীটপতঙ্গ আবার এত শুক্রাণু তৈরি করে যা তাদের নিজের শরীরের আকারের ১০ গুণ বেশি। অনেকে আবার সম্ভাব্য সঙ্গীদের প্রতিদ্বন্দ্বীকে মেরে ছিঁড়ে ফেলে। যেমন ধরা যাক, পুরুষ স্ট্যাগ বিটল। ইউরোপের বৃহত্তম বিটল এটি। এদের বিশাল চোয়াল রয়েছে, সঙ্গমে লিপ্ত দুই পোকাকে আলাদা করতে পারে এরা। আসলে পছন্দের নারীর থেকে প্রতিদ্বন্দ্বী পোকাকে আলাদা করার জন্যই এই ব্যবস্থা। নারীদের বেছে নিতে অন্যান্য পুরুষদের সঙ্গে লড়ার জন্যই এই শিঙ বা চোয়াল ব্যবহার করা হয়।

আসলে এই প্রজাতির পোকার মধ্যে ছোট আকৃতির পুরুষরা সঙ্গমের লড়াইয়ে জেতার সুযোগ পায় না। তাই সঙ্গমের গোপন কৌশল তৈরি করেছে তারা। এরা অন্য পুরুষদের লড়াই করার জন্য অপেক্ষা করে, তারপরে নারীদের সাথে মিলিত হয় এবং পুরুষদের বিভ্রান্ত করে। পুরুষ কীটদের মধ্যে শারীরিক প্রতিযোগিতার পাশাপাশি ডিম্বাণু নিষিক্ত করার প্রতিযোগিতাও চলে। প্রাণিজগতে কিন্তু 'লয়াল' বলে কিছু নেই। স্ত্রী পোকারা কিন্তু খুব কমই তাদের সঙ্গীর প্রতি বিশ্বস্ত থাকে। তাই একজন স্ত্রী পোকার প্রজনননালিতে বেশ কয়েকটি পুরুষের শুক্রাণু থাকতে পারে। পুরুষরা এই সমস্যার মোকাবিলার জন্য বিভিন্ন উপায় উদ্ভাবন করেছে। যেমন বড় শুক্রাণু তৈরি করা। ফ্রুট ফ্লাইয়ের শুক্রাণু প্রায় ৬ সেমি লম্বা হয়! অর্থাৎ মাছিটির আকারের প্রায় ২০ গুণ বেশি।

আরও পড়ুন- বিষে হার মানাবে গোখরোকে, পশ্চিমবঙ্গেও হানা দিচ্ছে এই মারাত্মক পোকা

তবে, সম্ভবত শুক্রাণুর প্রতিযোগিতায় জয়ী হওয়ার সবচেয়ে অসাধারণ পদ্ধতি বের করেছে ওডোনাটা (ড্রাগনফ্লাইস এবং ড্যামসেলফ্লাই)। এদের অলঙ্কৃত পুরুষাঙ্গ রয়েছে। পুরুষাঙ্গে হুক এবং চাবুক থাকে যা দিয়ে তারা প্রতিদ্বন্দ্বী পুরুষদের শুক্রাণুকে সরিয়ে নিজস্ব শুক্রাণুকে স্ত্রীটির যৌনাঙ্গে রাখতে পারে। তবে এই লড়াইয়ে পুরুষদেরই এমন মার-মার, কাট-কাট দশা তা নয়। ব্রাজিলে একধরনের পোকা আছে যারা গুহাতে থাকে। এদের স্ত্রী পোকারা আবার পুরুষদের জন্য প্রতিযোগিতা করে। এদের যৌনাঙ্গ খানিক বিপরীত ধরনের। পুরুষদের খানিক যোনির মতো অংশ থাকে আর স্ত্রীদের উত্থিত একটি যৌনাঙ্গ। স্ত্রী পোকারা তাদেরর 'লিঙ্গ' ব্যবহার করে পুরুষের থেকে শুক্রাণু চুষে নেয়। এমনকী স্ত্রী পোকা তার শরীরের কোন দু'টি কক্ষের মধ্যে শুক্রাণু সঞ্চয় করবে সেই সিদ্ধান্ত সে নিতে পারে। মনে করা হয়, এই আচরণটি সীমিত খাদ্য সরবরাহের অভিযোজন হিসাবে বিবর্তিত হয়েছে। মহিলারা সহবাসের সময় অর্জিত সেমিনাল ফ্লুইড খাওয়ার ফলে শক্তি অর্জন করে, যা ৭০ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।

পুরুষ বেড বাগরা স্ত্রী পোকার পেটে ছিদ্র করে তারপর সেই পেটের গহ্বরের ক্ষত দিয়ে শুক্রাণু ঢুকিয়ে দেয়। যেহেতু পোকামাকড়ের ধমনী এবং শিরা ছাড়াই রক্তসংবহন ব্যবস্থা থাকে, তাই শুক্রাণু সহজেই নিষিক্তকরণের জন্য পেটের গহ্বর থেকে ডিম্বাশয়ে চলে যায়।

আরও পড়ুন- বিষাক্ততম সাপের কামড়ে মৃত্যু, ২০ বছরের এই তরুণ না থাকলে তৈরিই হতো না প্রতিষেধক

পোকামাকড়ের যৌন আচরণের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হলো প্রেয়িং ম্যান্টিস, যেখানে স্ত্রী পোকা যৌনতার সময় বা পরে তার সঙ্গীর মাথা কামড়ে খেয়ে নেয়। এই মাথা খাওয়ার মধ্যে দিয়ে নিজের এবং নিজের সন্তানদের জন্য পুষ্টি লাভ করে স্ত্রী পোকা। সম্প্রতি, বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে পুরুষরাও স্ত্রী পোকাদের আক্রমণ করে। তবে তারা স্ত্রীদের খায় না, গুরুতরভাবে আহত করে।

অনেক পুরুষ পোকামাকড় শুধুমাত্র একবারই সঙ্গম করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, পুরুষ মৌমাছিরা এমন বিশাল শক্তি দিয়ে বীর্যপাত করে যে সেই শব্দ মানুষও শুনতে পারে। এর ফলে পুরুষের পক্ষাঘাত হয়, তার ফলে সে মারা যায়।

More Articles