সন্তানকে গর্ভে ধারণ করেছেন ‘বাবা’! যে উদাহরণ তৈরি করল কেরলের রূপান্তরকামী এই যুগল

Trans Couple In Kerala Announce Pregnancy : দু’জনেরই ইচ্ছা ছিল বাবা-মা হওয়ার। জাহাদ নারী-শরীর নিয়ে জন্মেছিলেন, কিন্তু তিনি চাইতেন বাবা হতে। অন্যদিকে জিয়া পেয়েছিলেন পুরুষ শরীর। আর তিনি চাইতেন নারী হয়ে ‘মা’ ডাক শুনতে। কীভ...

রূপকথা নয়, গল্পটা খোদ বাস্তবের। জন্মসূত্রে পাওয়া পরিচয় বদলে ফেলেছিলেন দুজনেই। সাজিয়েছিলেন স্বপ্নের সংসার। অতঃপর সেই সংসারেই এল খুশির খবর। সন্তানের জন্ম দিতে চলেছেন কেরলের রূপান্তরকামী যুগল। সম্প্রতি ইনস্টাগ্রামে বেবি বাম্পের ছবি প্রকাশ্যে এনেছেন তাঁরা। অল্প সময়ের মধ্যেই ভাইরাল হয়ে যায় সেই ছবিটি। আগামী মাসেই সন্তানের জন্ম দিতে চলেছেন তাঁরা। খবরটি নিয়ে ইতিমধ্যেই সরগরম নেট মাধ্যম। অনেকেই এই ঘটনায় অভিবাদন জানিয়েছেন ওই যুগলকে। অনেকেই আবার ভারতের বুকে এমন বিরল ঘটনাকে সাধুবাদও জানিয়েছেন।

স্বাধীনতা হীনতায় বাঁচতে চাননি জিয়া এবং জাহাদ। জন্মসূত্রে পাওয়া লিঙ্গ পরিচয় নিয়ে ছোটবেলা থেকেই অসংগতি ছিল দুজনের মধ্যে। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পারেন যে বাহ্যিক দেহ বয়ে বেড়াতে হচ্ছে তাদের তা যেন নিজেদের নয়। সিদ্ধান্ত নেন লিঙ্গ পরিবর্তনের। এই ঘটনা অবশ্য দেশে এখন মানবিকতা সিদ্ধ, এমনকী আইন সিদ্ধও বটে। ঠিক এরকম সময়ে আলাপ হয় পরস্পরের। মনের মিল হয় দুজনেরই। দুজনেরই পরিবার সম্মত ছিল না এই ঘটনায় ফলে, একটা লম্বা লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয় তাদেরকে। মনের পাশাপাশি জীবনের ঘাত প্রতিঘাত, লড়াই সবটুকুই মিলে যায় জিয়া এবং জাহাদের।

আরও পড়ুন - রূপান্তরকামী সন্তানকে নিয়ে গর্বিত বাবা, ভারতীয় অভিভাবকরা শিখবেন?

অতঃপর একসঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত। বাড়ির অমতে আলাদা করে সংসার পাতেন দুজনেই। শুরু হয় লিঙ্গ পরিবর্তনের কঠোর প্রক্রিয়া। এই কঠিন সময়ে একে ওপরে হাত শক্ত করে ধরে ছিলেন জিয়া এবং জাহাদ। জানা গিয়েছে, গত প্রায় তিন বছর ধরে এক সঙ্গেই থাকেন এই যুগল।

কেরালার তিরুঅনন্তপুরমের বাসিন্দা বছর তেইশের জাহাদ, অন্যদিকে কোঝিকোড়ের থাকতেন ২১ বছর বয়সী জিয়া পাভাল। নারীর শরীর নিয়ে জন্মেছিলেন জাহাদ আর পুরুষের শরীর ছিল জিয়ার। তবে দুজনেই ঠিক করেন বদলে ফেলবেন লিঙ্গ। সেইমতো প্রক্রিয়া শুরু হয়। চলছিল হরমোন থেরাপি। এমনকী জাহাদের স্তনও বাদ পড়েছে ইতিমধ্যেই। ঠিক এরকম সময় হঠাৎ জানতে পারেন নতুন একটি ভ্রূণ বেড়ে উঠছে জাহাদের শরীরের মধ্যে। অর্থাৎ জিয়া এবং জাহাদের প্রথম সন্তানের খবর জানতে পারেন তাঁরা। তৎক্ষনাৎ চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে মাঝ পথেই থামিয়ে দেন লিঙ্গ পরিবর্তনের প্রক্রিয়া। নারীর শরীর থেকে পুরুষের শরীরে উত্তীর্ণ হওয়ার মাঝেই এই ঘটনা ঘটে জাহাদের শরীরে। জানা গিয়েছে, আগামী মাসেই পৃথিবীর আলো দেখবে জাহাদ ও জিয়ার সন্তান। তার বয়স ছয় মাস হলেই ফের হরমোন থেরাপি শুরু করবেন কেরালার এই সমকামী দম্পতি।

সোশ্যাল মিডিয়ায় জাহাদ এবং জিয়া জানিয়েছেন, জন্মসূত্রে যে লিঙ্গপরিচয় তাঁরা পেয়েছিলেন, তাঁদের মন সেই পরিচয়ে খুশি ছিল না। প্রথম থেকেই তাঁরা লিঙ্গ বদল করতে চাইতেন। কিন্তু তার পাশাপাশি দু’জনেরই ইচ্ছা ছিল বাবা-মা হওয়ার। জাহাদ নারী-শরীর নিয়ে জন্মেছিলেন, কিন্তু তিনি চাইতেন বাবা হতে। অন্যদিকে জিয়া পেয়েছিলেন পুরুষ শরীর। আর তিনি চাইতেন নারী হয়ে ‘মা’ ডাক শুনতে। যদিও জাহাদের গর্ভেই জন্ম হতে চলেছে সন্তানের তবুও তাদের এই ইচ্ছে পূরণ যে হচ্ছে তা বলাই বাহুল্য।

পেশায় অ্যাকাউন্ট্যান্ট জাহাদ বর্তমানে মাতৃত্বকালীন ছুটিতে রয়েছেন। জিয়া একজন নৃত্য শিক্ষিকা। তিনিও সন্তান পালনের জন্য কাজ থেকে সাময়িক বিরতি নেবেন বলেই জানিয়েছেন। যেহেতু ইতিমধ্যেই অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জাহাদের স্তন বাদ দেওয়া হয়েছে, তাই সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর মেডিকেল কলেজের ব্রেস্ট মিল্ক ব্যাঙ্ক থেকে দুধ নিয়ে সন্তানকে খাওয়াবেন বলে ঠিক করেছেন তাঁরা। আপাতত সোশ্যাল মিডিয়ার এই ছবির সূত্র ধরে খুশির আবহে ভাসছেন এই রূপান্তরকামী যুগল...

More Articles