কুচকাওয়াজ থেকে ‘ফ্লাইপাস্ট’, সাধারণতন্ত্র দিবস সম্পর্কিত এই অজানা তথ্যগুলি স্তম্ভিত করবে
সাধারণতন্ত্র দিবসের নয় দশক পেরিয়ে গেল। দুশো বছরের অন্ধকার যুগ থেকে স্বাধীনতা এসেছিল ১৯৪৭-এ। তার বছর দুয়েক পর গণতান্ত্রিক ও প্রজাতান্ত্রিক বলে ঘোষণা করা হয়। ১৯৫০ থেকে ভারত প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপন করে আসছে। রাজপথে প্রতি বছর বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে দিনটি পালিত হয়। ৭৩তম প্রজাতান্ত্রিক দিবসে জেনে নিই সাধারণতান্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজ সম্পর্কিত কয়েকটি তথ্য—
- যে কোনো দেশের রাষ্ট্রপতি অথবা প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপ্রধান এই দিন ভারতের প্রধান আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে আসেন প্রদর্শনী উপভোগ করার জন্য। ১৯৫৫ সালে পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মালিক গুলাম মোহাম্মদ ছিলেন প্রধান আমন্ত্রিত অতিথি।
- সমস্ত উদযাপনটি হয় সঙ্গীতের সঙ্গে। নানা গানের সুর আমরা বাজতে শুনি কুচকাওয়াজের সময়। বছর বছর এই গান বদলে যায়। শুধুমাত্র একটি গান বাজে প্রতি বছরই। ‘অ্যাবাইড উইথ মি’। এটি একটি জনপ্রিয় ক্রিসমাসের গান। এই গানটি অত্যন্ত প্রিয় ছিল গান্ধীজির।
- আমরা দেখে আসছি প্রতি বছর ২৬শে জানুয়ারি অনুষ্ঠান হয় রাজপথে। কিন্তু রাজপথে উদযাপন শুরু হয় ১৯৫৫ সাল থেকে। প্রথম পাঁচ বছর, ১৯৫০ থেকে ১৯৫৪ পর্যন্ত, যথাক্রমে আরউইন স্টেডিয়াম (বর্তমানে ন্যাশনাল স্টেডিয়াম), লালকেল্লা এবং রামলীলা ময়দানে এই অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হতো।
- প্রতিবারই কাতারে কাতারে মানুষ ভিড় জমান এই প্রদর্শনী দেখার জন্য। সংখ্যাটা কম নয়। প্রায় দু'লাখের উপর। যদিও করোনার বিধিনিষেধে এখন এই অনুষ্ঠানে ভিড় এড়ানো হচ্ছে।
- রাষ্ট্রপতি অনুষ্ঠানের স্থানে উপস্থিত হলে কুচকাওয়াজ শুরু হয়। রাষ্ট্রপতির রক্ষীরা জাতীয় পতাকাকে স্যালুট করে এবং জাতীয় সঙ্গীত শুরু হয়। জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে সঙ্গে ২১ রাউণ্ড গান-স্যালুটের ভেসে আসে। ৫২ সেকেণ্ডের মধ্যে পরপর এই একুশ রাউণ্ড ফায়ার করে আদতে ৭টি কামান। এদের ‘২৫-পণ্ডারস্’ বলা হয়। প্রতিটি কামান তিন রাউণ্ড করে ফায়ার করে। ১৯৪১ সালে নির্মিত এই সাতটি কামান মূলত ভারতীয় সেনার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত হয়।
- অনুষ্ঠানে যাঁরা অংশগ্রহণ করেন তাঁদের সবার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা সামান্য ব্যাপার না। হপ্তাখানেক আগে থকেই প্রস্তুতি শুরু হয়। মেট্রো স্টেশনগুলিতে নিরাপত্তারক্ষীর সংখ্যা বাড়ান হয়, গোটা শহরেই মোতায়েন করা হয় পুলিশ। দিল্লিতে মোতায়েন নিরাপত্তা রক্ষীর সংখ্যা এইসময় দাঁড়াতে পারে ৩৫,০০০ থেকে ৫৫,০০০ পর্যন্ত।
- রাত দুটো থেকে তৈরি থাকে কুচকাওয়াজের লোকজন, তিনটের সময় পৌঁছায় রাজপথে। যদিও আদতে কুচকাওয়াজের প্রস্তুতি শুরু হয় আগের বছরের জুলাই মাস থেকেই। যাঁরা যাঁরা এই কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণের জন্য নির্বাচিত, সবাইকে আনুষ্ঠানিক ভাবে জানানো হয়। অগাস্ট অবধি তাঁরা নিজের নিজের এজিমেণ্টে কুচকাওয়াজ অভ্যাস করেন, দিল্লিতে পাঠানো হয় ডিসেম্বরে। ২৬শে জানুয়ারির আগে এঁরা প্রত্যেকে প্রায় ৬০০ ঘন্টার প্রশিক্ষণে দড় হন।
- কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক সেনাকে চার ধাপের তদন্তে পাশ করতে হয়। এছাড়াও প্রত্যেকের আগ্নেয়াস্ত্র খালি রাখার দিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়।
- অন্যান্য দেশের থেকে ভারতের কুচকাওয়াজের বেগ কিঞ্চিৎ বেশি। ফ্রেঞ্চরা এই কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণ করার সময় দেখা যায় তাদের কুচকাওয়াজের বেগ মিনিট প্রতি ১০৬টি বিট, যেখানে ভারতীয় সেনাদের বেগ মিনিট প্রতি ১২০টি বিট। ফ্রেঞ্চদের কুচকাওয়াজের বেগ বাড়ানোর জন্য অনুরোধ করা হয়।
- ‘ফ্লাইপাস্ট’ অত্যন্ত আকর্ষণীয় একটি উপস্থাপনা। পশ্চিমী বায়ুসেনার নেতৃত্বে ৪১টি প্লেন একটি নির্দিষ্ট সময়ে উড়াল দেয় ও এই উপস্থাপনা সংঘটিত করে।
- এই সামগ্রিক অনুষ্ঠানের জন্য ২১০৪ সালে খরচ হয়েছিল ৩২০ কোটি টাকা। ২০০১-এর আশেপাশে এই খরচ ছিল ১৪৫ কোটি। মাঝের পনেরো বছরে খরচ বেড়েছে ৫৪.৫১%। একটি আর টি আইয়ে এই তথ্য উঠে আসে।
- কুচকাওয়াজের ট্যাবলো চলে পাঁচ কিমি / ঘণ্টা বেগে। এ বছর বারোটি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল এবং ন'টি মন্ত্রককে নির্বাচন করা হয়েছে প্রজাতন্ত্র দিবসে অংশগ্রহণের জন্য। হরিয়ানা, ছত্তিশগড়, গোয়া, গুজরাট, কর্ণাটক, মেঘালয়, পাঞ্জাব, উত্তর প্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ড তাদের মধ্যে অন্যতম।