আদিম মানুষের পায়ের ছাপ মিলেছে এখানে, অবাক করবে হিমালয়ের চেয়েও বহু বহু প্রাচীন এই পাহাড়

Offbeat Tour jharkhand : হিমালয়ের থেকেও প্রাচীন এই পাহাড়টি। তাও আবার ৫০০ কোটি বছরের। এমনকী কলকাতা থেকে হিমালয়ের দূরত্ব যত, তার থেকে অনেক কম দূরত্বেই অবস্থান করছে এই পাহাড়টি।

“পাহাড় শিখায় তাহার সমান/ হই যেন ভাই মৌন-মহান, / খোলা মাঠের উপদেশে— / দিলখোলা হই তাই রে”, কবির ভাষ্যে পাহাড় ধরা দিয়েছে এই ভাবেই। কলকাত্তাইয়া বাঙালির কাছে পাহাড় যেন স্বপ্নের মতো। রোজকার জীবনের একঘেয়েমির বিপরীতে দাঁড়িয়ে থাকা কোনও এক রূপকথার মতোও বটে। হাতে ছুটিছাটা পেলেই তাই মনটা পাহাড় পাহাড় করে। তবে বাঙালির পাহাড় ভ্রমণ বলতে প্রথমেই মনে আসে যার কথা, তা হল আদি এবং অকৃত্রিম সেই হিমালয়। প্রাচীনত্ব-এর দৌড়েও যে কিনা বাকিদের থেকে অনেকটা এগিয়ে। কিন্তু আপনি কি জানেন কলকাতার খুব কাছেই রয়েছে এমন একটি পাহাড়, যেটি কিনা হিমালয়ের থেকেও প্রায় ৫০০ কোটি বছরের পুরনো। অন্তত কার্বন ডেটিং এর তথ্য থেকে জানা গিয়েছে এমনটাই।

হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন, হিমালয়ের থেকেও প্রাচীন এই পাহাড়টি। তাও আবার ৫০০ কোটি বছরের। এমনকী কলকাতা থেকে হিমালয়ের দূরত্ব যত তার থেকে অনেক কম দূরত্বেই অবস্থান করছে এই পাহাড়টি। সম্প্রতি প্রচারের আলোকে এসেছে এই অঞ্চল। নাম রাজমহল পাহাড়। বর্তমান ঝাড়খণ্ড রাজ্যের সাহেবগঞ্জ জেলায় পাহাড়পর্বত, বনজঙ্গল, ঝরনা আর গঙ্গা নদী বেষ্টিত রাজমহল—যেখানে পলাশির যুদ্ধে পরাজিত পলায়নরত বাংলা-বিহার-ওড়িশার শেষ নবাব সিরাজদৌল্লা ব্রিটিশের গুপ্তচরের হাতে বন্দি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এই দেশের দীপ্ত স্বাধীনতা-সূর্য অস্তমিত হওয়ার সূত্রপাত হয়েছিল। এর পরের ইতিহাস অবশ্য সকলেরই জানা। বাংলার রাজধানী একসময় গৌড় থেকে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল এই অঞ্চলে। এবং সেই সময় থেকে রাজার মহল অর্থাৎ এই রাজমহল জায়গাটির নামকরণ হয়।

আরও পড়ুন - সমতলেই রয়েছে পাহাড়ি জঙ্গলের স্বাদ, কোথায় এই মিনি ডুয়ার্স?

কিন্তু এই অঞ্চলের পাহাড়ের প্রাচীনত্ব নিয়ে এতদিন বিশেষ কোনও আলোচনাই হয়নি। সম্প্রতি দীর্ঘদিনের গবেষণা শেষে সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন গবেষকরা। তাতেই মিলেছে প্রাচীনত্বের হদিশ। কার্বন ডেটিং পদ্ধতির সাহায্যে আরও নানান অজানা সত্যি উদঘাটন সম্ভব হয়েছে। এই অঞ্চলের পাহাড়ে নাকি পাওয়া গিয়েছে আদিম মানবের পায়ের ছাপ। এখানেই শেষ নয়, প্রত্নতত্ত্ববিদ অনুপ কুমার বাজপেয়ী জানান, আদিম মানুষের পায়ের ছাপের পাশাপাশি সেখানে হরিণের খুরের ছাপ এবং নানান মাছের জীবাশ্মও উদ্ধার হয়েছে।

মুর্শিদাবাদের অরঙ্গাবাদ থেকে মাত্র ৮৫ কিমি দূরেই অবস্থিত এই ঐতিহাসিক স্থানটি। বর্তমানে ব্যস্ত জীবনের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে বাঙালি যে অফ বিট ভ্রমণের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছে, সেই তালিকায় নয়া সংযোজন হতে পারে ঝাড়খণ্ডের রাজমহল।একদিকে ইতিহাস এবং খনিজের সম্ভার অন্যদিকে ভরপুর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেন নিমেষেই হারিয়ে যেতে হয় এখানে। শাল, সেগুন, মেহগিনি, মহুয়া, জারুলের ভিড়ে ঠাসা জঙ্গলের চড়াই-উতরাই পথ বেয়ে উঠতে হয় পাহাড়ে। পাহাড়ের কোলেই রয়েছে আদিবাসীদের বাসস্থান। এককথায় বলতে গেলে মন ভোলাবে এই জায়গাটি। আগস্ট সেপ্টেম্বর মাস করে রাজমহল ভ্রমণ সবথেকে সুন্দর হতে পারে।

কীভাবে যাবেন?

পূর্ব রেলের বর্ধমান-সাহেবগঞ্জ লুপ লাইনে তিনপাহাড়, তালঝাড়ি স্টেশন থেকে মাত্র বারো থেকে চোদ্দ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে রাজমহল। হাওড়া অথবা শিয়ালদহ থেকে রেলপথে সহজেই আসা যায় এখানে।

কোথায় থাকবেন?

যেহেতু একেবারেই নতুন নতুন পর্যটন মানচিত্রে জায়গা করে নিয়েছে এই রাজমহল, তাই এখনও পর্যাপ্ত ভালো মানের হোটেল নেই এখানে। তবে আদিবাসীদের গ্রামে তাদের কাছে থাকতে চাইলে সাদরে আমন্ত্রণ পাবেন নিশ্চিত। এছাড়াও বনবাংলো অথবা কিছু বেসরকারি গেস্ট হাউস রয়েছে এখানে। তাই দেরি না করে সপ্তাহান্তের ছুটি কাটাতে চলে আসতেই প্রাচীন এই পাহাড়ে।

More Articles