ফ্রেঞ্চ ফ্রাই এক্সপ্রেস: অবাক করবে ১০০ বছরের প্রাচীন এই ট্রেনের ইতিহাস

French Fry Express: এই বাষ্পীয় ইঞ্জিনটি ১৯২৩ সালে নির্মিত হয়েছিল। এর নাম ছিল লোকোমোটিভ নং ৪৯৬০। তখন অবশ্য কয়লা দিয়েই চলত ইঞ্জিন।

বিশ্বজুড়েই ট্রেন অন্যতম সুলভ পরিবহণ মাধ্যম। বিশেষ করে ঘুরতে যাওয়ার ক্ষেত্রে, বরাবরই সাধারণ মানুষের পছন্দ ট্রেনযাত্রা। এমনকী, স্থান বিশেষে সেই ট্রেন যদি গতির সুবাদে নিতান্ত খেলনাগাড়িও হয়, সেই টয়ট্রেনও মানুষের বিশেষ আবেগ বুকে ধরে রাখে। আসলে সভ্যতায় গতি আনার ক্ষেত্রে ট্রেনের ভূমিকা কোনওভাবেই অস্বীকার করার নয়। সে ভারতীয় রেল প্রায় ২৪ ঘণ্টা শ্লথগতিতে চললেও, মানতেই হবে একস্থান থেকে অন্যস্থানের যোগাযোগ, আদানপ্রদান সম্ভবই হতো না ট্রেন ছাড়া। ট্রেন তাই প্রেম থেকে শুরু করে সিনেমা, জীবিকা থেকে শুরু করে দিনাতিপাত, জুড়ে আছে নিবিড়ভাবে। শুধু ভারত নয়, বিশ্বের ক্ষেত্রেও বিভিন্ন রেলপথের ইতিহাস আজও তাজ্জব করে দেয়। এমনই একটি ট্রেনের নাম 'ফ্রেঞ্চ ফ্রাই এক্সপ্রেস'। ফরাসি মুলুকে নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে। অ্যারিজোনার বিশাল ভূখণ্ডে এই অনন্য ট্রেন আস্ত একখণ্ড ইতিহাসের অধ্যায়। বাষ্পীয় ইঞ্জিনে চলে ট্রেনটি, এবং কয়লা নয়, জ্বালানি হিসেবে দেওয়া হয় সবজি থেকে উৎপন্ন তেল!

'ফ্রেঞ্চ ফ্রাই এক্সপ্রেস’-এর নেপথ্যের গল্প

এই বাষ্পীয় ইঞ্জিনটি ১৯২৩ সালে নির্মিত হয়েছিল। এর নাম ছিল লোকোমোটিভ নং ৪৯৬০। তখন অবশ্য কয়লা দিয়েই চলত ইঞ্জিন। ১৯৬০-এর দশকে অবসর নেয় এই ইঞ্জিন। তার আগে বিভিন্ন রেলপথে পরিষেবা দিয়ে এসেছে ইঞ্জিনটি। ১৯৮৯ সালে, গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন রেলওয়ে ইঞ্জিনটি অধিগ্রহণ করে, পুনরুদ্ধার করে, এটিকে আবার পরিষেবায় ফিরিয়ে আনে। সেই সময়ে এই বাষ্পীয় ইঞ্জিনটি কয়লা-নির্ভরতা ছেড়ে ডিজেল-চালিত হয়ে যায়। তবে পরিবেশগত কিছু সমস্যার কারণে ২০০৮ সালে আবারও অস্থায়ীভাবে অবসরের পথেই হাঁটতে হয় ইঞ্জিনটিকে। পরের বছর, ২০০৯ এর পুনর্জন্ম ঘটে। রেলওয়ে নং ৪৯৬০-কে চালানো হয় পুনর্ব্যবহারযোগ্য উদ্ভিজ্জ তেলে। দেখা যায়, প্রতি সফরে এই ইঞ্জিনের কার্বন নির্গমন প্রায় ২৫,০০০ পাউন্ড কমে গিয়েছে।

তখন রেলওয়ে নং ৪৯৬০-এর নাম রাখা হয় 'ফ্রেঞ্চ ফ্রাই এক্সপ্রেস'। এই অনন্য বাষ্পীয় ইঞ্জিনটি আসা-যাওয়া মিলে প্রায় ১,২০০ গ্যালন পুনর্ব্যবহারযোগ্য উদ্ভিজ্জ তেল ব্যবহার করে। গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন রেলওয়ের যে নিজস্ব ফুড জয়েন্টগুলি আছে, সেখান থেকেই ব্যবহৃত উদ্ভিজ্জ তেল সংগ্রহ করে এই ইঞ্জিনের জ্বালানি সরবরাহ করা হয়। তেল সংগ্রহের পর, রেলওয়ে সেই তেল প্রক্রিয়াজাত করে এবং স্টিম ইঞ্জিনকে শক্তি জোগানোর উপযোগী করে তুলে তা ব্যবহার করে।

আরও পড়ুন- বন্দে ভারতের স্লিপার কোচ কেমন দেখতে? ভারতে এমন চোখ ধাঁধানো ট্রেনও সম্ভব!

'ফ্রেঞ্চ ফ্রাই এক্সপ্রেস' কখন, কোথায় চলে?

মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত প্রতি মাসের প্রথম শনিবার এই ইঞ্জিনটি চলে। তাছাড়া, পৃথিবী দিবস (২২ এপ্রিল), এই ইঞ্জিনের জন্মদিন (১৬ অগাস্ট), শ্রমিক দিবস (৩০ অগাস্ট) এবং গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন রেলওয়ের বার্ষিকীর (২০ সেপ্টেম্বর) মতো বিশেষ দিনগুলিতেও এই ট্রেনে ভ্রমণ করা সম্ভব।

এই ট্রেনটি ঐতিহাসিক উইলিয়ামস ডিপো থেকে সকাল ৯:৩০ মিনিটে ছাড়ে। ট্রেনটি গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের সাউথ রিমে পৌঁছয় সকাল ১১:৪৫ মিনিটে। সেখান থেকে বিকাল ৩:৩০ মিনিটে ছাড়ে ফিরতি ট্রেন। ফলে বিশ্ববিখ্যাত গিরিখাতটি ঘুরে দেখার জন্য হাতে তিন ঘণ্টারও বেশি সময় থাকে। বিকেল ৫:৫৪ মিনিটে উইলিয়ামস ডিপোয় ফিরে আসে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই এক্সপ্রেস।

গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নিরিখে বিশ্বের সবচেয়ে অত্যাশ্চর্য প্রাকৃতিক দৃশ্যসম্বলিত একটি স্থান। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত, এই বিশেষ ভূখণ্ড জুড়ে আলো এবং ছায়ার খেলা দেখলে তা আজীবন ভোলার নয়। গিরিখাত ধরে হাঁটা থেকে শুরু করে হাইকিং — গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের স্বর্গ। ব্রাইট অ্যাঞ্জেল এবং সাউথ কাইবাবের মতো পথগুলিতে গিরিখাতের এক অনন্য সৌন্দর্য ধরা পড়ে। পাশাপাশি গ্র্যান্ড ক্যানিয়নে বিরল বন্যপ্রাণ ও বন্য উদ্ভিদের বাসভূমিও।

আর যদি গ্র্যান্ড ক্যানিয়নে রাত কাটানোর সুযোগ ঘটে, তাহলে সেই ভূমিতে বসে মহাকাশ দেখার, নক্ষত্র দেখার অপ্রাকৃতিক অভিজ্ঞতা কোনও লবজেই বিশ্লেষণযোগ্য নয়। প্রাকৃতিকভাবে এই সমৃদ্ধ এলাকাটির জন্য তাই ফ্রেঞ্চ ফ্রাই এক্সপ্রেসের মতো পরিবেশবান্ধব পরিবহণ বিকল্পই শ্রেষ্ঠ।

More Articles