অপছন্দের পুরুষের সঙ্গে সঙ্গম! অবাঞ্ছিত যৌনতা এড়াতে ব্যাঙ কী করে জানেন?
Frog Mating Facts : পুরুষ ব্যাঙ সাধারণত অ্যামপ্লেক্সাস নামে পরিচিত একটি 'পজিশন'-এ স্ত্রী ব্যাঙের পিঠে উঠে পড়ে।
যৌনতার জন্য একে অন্যকে আকর্ষিত করার যে হাজারো কৌশল আছে তা এতদিনে তো জানাই। Gen-Z যাকে বলে 'টার্ন অন' করা সেই উত্তেজনার জন্য আকর্ষণ বা আকর্ষণের জন্য উত্তেজিত করা দুইয়ের উপরেই যে কেবল মানুষের মনোপলি, তা কিন্তু নয়। পশুপাখির জগত এই 'টার্ন অন'-এর ব্যাপারে মানুষের থেকে ঢের রহস্যময় ও চিত্তাকর্ষক। মানুষ শুধুই প্রজননের জন্য যৌনতা করে না ঠিকই, কিন্তু অন্য প্রাণীরা মূলত তাই-ই। তবে মোটেও ভাববেন না যে পশুপাখিদের ছানাপোনা তৈরিই লক্ষ্য বলে যেমন তেমন সঙ্গী পেলেই হলো, যৌনতা করলেই হলো! এসব ভাবনা প্রাণীদের মোটেও থাকে না। মনের মতো সঙ্গী না পেলে মানুষের মতোই 'টার্ন অফ' হয়ে যায় পশুপাখিরাও, আর তারপর যা যা কীর্তি ঘটায়, সে এক আশ্চর্য রহস্য! পৃথিবীতে স্ত্রী ব্যাঙের সংখ্যাই নেহাত কম নয়। নতুন এক গবেষণা বলছে ইউরোপে সাধারণ যে ব্যাঙ মেলে (রানা টেম্পোরারিয়া), সেই স্ত্রী ব্যাঙরা পছন্দসই যৌনসঙ্গী না পেলে আশ্চর্য এক কীর্তি করে।
যৌনসঙ্গমরত অবস্থায় অনেক প্রতিকূল ঘটনাই ঘটতে পারে। মানুষের ক্ষেত্রেও, পশুপাখির ক্ষেত্রেও। কিছু ক্ষেত্রে যৌনসঙ্গমে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই পছন্দের পুরুষ ব্যাঙের সঙ্গে অবাঞ্ছিত সঙ্গম করতে হলে ইউরোপের এই স্ত্রী ব্যাঙগুলি তিনটি আচরণ তৈরি করে ফেলেছে নিজেদের মধ্যে। গবেষকরা এগুলোর নাম দিয়েছেন; রোটেশন, রিলিজ কল, এবং টনিক ইম-মবিলিটি বা মৃত্যুর ছলনা। তৃতীয় বিষয়টি সত্যিই অদ্ভুত।
ইউরোপিয় এই সাধারণ ব্যাঙগুলি ব্যাপকহারে প্রজনন করে। বসন্তে পুরুষ ও স্ত্রী ব্যাঙের বিশাল সমাবেশ ঘটে। যেখানে পুরুষ ব্যাঙ সাধারণত অ্যামপ্লেক্সাস নামে পরিচিত একটি 'পজিশন'-এ স্ত্রী ব্যাঙের পিঠে উঠে পড়ে। পুরুষ ব্যাঙগুলি যতটা সম্ভব স্ত্রী ব্যাঙের সঙ্গে সঙ্গম করার চেষ্টা করে। যার ফলে অনেকগুলি পুরুষ ব্যাঙ মিলনের জন্য স্তূপাকারে স্ত্রী ব্যাঙের উপরে উঠে পড়ে। পুরুষ ব্যাঙ জলের মধ্যে স্ত্রী ব্যাঙদের এভাবে আঁকড়ে ধরার ফলে স্ত্রী ব্যাঙগুলি ডুবে যেতে থাকে।
আরও পড়ুন- মানুষের মূত্র ঢুকিয়ে দেওয়া হতো ব্যাঙের দেহে! কীভাবে গর্ভাবস্থা পরীক্ষা করত আগেকার মানুষ?
বার্লিনের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের গবেষক ডঃ ক্যারোলিন ডিট্রিচ বলছেন, আগে বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করতেন যে স্ত্রী ব্যাঙগুলি বোধহয় যৌনতায় একেবারেই আগ্রহী নয়। তবে পরে তারা দেখেন, নিজেদের মধ্যে তিনটি আচরণ অভ্যাস করে ফেলেছে ছোট স্ত্রী ব্যাঙগুলি। এই ছোট স্ত্রী ব্যাঙগুলিই 'অ্যামপ্লেক্সাস' পজিশন থেকে পালাতে বেশি সফল। এই আচরণের ফলে প্রজননের সেই বিশাল পর্বে স্ত্রী ব্যাঙগুলি অনেক কম নিষ্ক্রিয় থাকে।
দু'টি ভিন্ন আকারের স্ত্রী ব্যাঙকে একটি পুরুষ ব্যাঙের সঙ্গে একটি বাক্সে রাখা হয়েছিল এবং এক ঘণ্টা এদের পর্যবেক্ষণ করা হয়। সবটা রেকর্ডও করা হয়। গবেষকরা দেখেন তিনটি মূল আচরণ করছে এই স্ত্রী ব্যাঙগুলি। ছোট স্ত্রী ব্যাঙ তিনটি কৌশলই বড় স্ত্রী ব্যাঙের চেয়ে বেশি ব্যবহার করছে এবং পুরুষের মিলন মুহূর্ত থেকে এই ছোট ব্যাঙগুলিরই পালানোর সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি ছিল। স্ত্রী ব্যাঙগুলির মধ্যে, ৮৩ শতাংশই রোটেশন কৌশলটি ব্যবহার করে সঙ্গম ছেড়ে পালায়। প্রায় অর্ধেক, মানে ৪৮ শতাংশ স্ত্রী ব্যাঙ 'রিলিজ কল' পদ্ধতি ব্যবহার করে। এই রিলিজ কল হচ্ছে একটি বিশেষ ডাক, যাতে স্ত্রী ব্যাঙগুলি পুরুষদের শব্দের অনুকরণ করে, তাদের উপরে চেপে থাকা পুরুষদেরকে বোকা বানিয়ে ছেড়ে দেয়। পুরুষরা সাধারণত এই রিলিজ কল ব্যবহার করে অন্য পুরুষদের সংকেত দিতে যে তারা একজন পুরুষ, তাই তাদের ছেড়ে দিয়ে মহিলা সঙ্গী খোঁজা উচিত।
টনিক ইম-মবিলিটিতে স্ত্রী ব্যাঙগুলি তাদের বাহু এবং পা শক্ত করে রাখে। ৩৩ শতাংশ স্ত্রী ব্যাঙ এই কৌশলেই পালায়। যেহেতু এই আচরণগুলি বয়স্কদের তুলনায় কম বয়সি স্ত্রী ব্যাঙের মধ্যেই দেখা যায়, তাই এটিও হতে পারে যে সঙ্গমের অতিরিক্ত চাপ এড়াতেই এমন আচরণ তৈরি করেছে নতুন প্রজন্মের স্ত্রী ব্যাঙরা। রয়্যাল সোসাইটি ওপেন সায়েন্সে প্রকাশিত এই গবেষণায় গবেষকরা আরও বলছেন, এই ব্যাঙগুলির মধ্যে স্ট্রেস কর্টিকোস্টেরনের মাত্রা খতিয়ে দেখলে এই আচরণগুলি আরও ভালো বোঝা যাবে। বাক্সের মধ্যে ওই ব্যাঙদের দেখে যে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে তা ফাঁকা জায়গায় আলাদা হতে পারে।