গাজা প্রসঙ্গে ১০০-রও বেশি অবসরপ্রাপ্ত আমলার খোল চিঠি! ইজরায়েল প্রশ্নে 'পক্ষপাতদুষ্ট' অবস্থানের নিন্দা যে ভাষায়
Gaza Genocide: যখন প্যালেস্টাইনের গাজার প্রায় ৭৭ শতাংশ এলাকা ইজরায়েল বাহিনী দখল করে নিয়েছে, ঠিক সেই সময়ে এই অত্যাধুনিক হাতিয়ারের বরাত ভারতীয় সংস্থাকে দিয়েছিল ইজরায়েল।
ভারতের ১১১ জন অবসরপ্রাপ্ত আমলা প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিদেশেমন্ত্রীকে গাজার গণহত্যা নিয়ে খোলা চিঠি পাঠিয়েছেন। তাঁরা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন। চিঠিতে তাঁরা অভিযোগ করেছেন, গাজার গণহত্যা নিয়ে ভারতের অবস্থান দুর্বল, দ্বিমুখী এবং নিষ্ঠুর। গাজার নাগরিকদের সুরক্ষার বিষয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রস্তাবে ভারত অনুপস্থিত ছিল। এই নিয়ে সম্প্রতি কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধীও বলেন এই ঘটনা 'লজ্জাজনক' ও 'হতাশাজনক'।
গাজায় টানা ২২ মাস ধরে ইজরায়েলি বাহিনী নির্বিচার হামলা চালাচ্ছে। সংঘর্ষে প্রায় ৬২ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। গাজার সরকারি গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, তার মধ্যে অন্তত ১৮ হাজার ৮৮৫ জনই শিশু। এই পরিস্থিতিতে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে গাজায় ইজরায়েলের হামলার প্রতিবাদ করা হচ্ছে। এমনকি পশ্চিমা বিশ্ব, যারা দীর্ঘদিন ধরে ইজরায়েলকে সমর্থন করে এসেছে, তারাও চাপে পড়ে সমালোচনা করছে। কিন্তু ব্যতিক্রম ভারত। বারে বারে অভিযোগ উঠছে, ভারত গাজা ও প্যালেস্টাইনের ইস্যু নিয়ে তেমন মাথা ঘামাচ্ছে না। বিশ্লেষকদের অনেকেই দাবি করেন, তার অন্যতম কারণ ভারত এখন ইজরায়েলের সবচেয়ে বড় অস্ত্র ক্রেতা।
অভিযোগ, ভারত থেকে অত্যাধুনিক ইউনিভার্সাল রকেট লঞ্চার কিনেছে ইজরায়েল। ভারতের বিখ্যাত প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলির অন্যতম এনআইবিই লিমিটেড। আর কিছু মাস আগেই ইজরায়েলকে নিয়ে বড় ঘোষণা করেছিল এই প্রতিষ্ঠান। ইউনিভার্সাল রকেট লঞ্চার সরবরাহের জন্য বরাত দেয় ইজরায়েলের একটি টেক জায়ান্ট সংস্থা। চুক্তি অনুযায়ী, ১ কোটি ৭৫ লক্ষ ২০ হাজার ডলার পাবে এনআইবিই লিমিটেড, যা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ১৫০.৬২ কোটি টাকা। বিশ্বের অত্যাধুনিক হাতিয়ারগুলির তালিকায় রয়েছে এর নাম। ভারতে তৈরি এই অস্ত্র আগে কখনও বাইরের দেশে বিক্রি করা হয়নি।
আরও পড়ুন- ত্রাণ দেখিয়ে প্রাণ নেওয়া? যা চলছে গাজায়
ইজরায়েলি সংস্থার থেকে বরাত পাওয়ার পরই ভারতীয় প্রতিরক্ষা সংস্থা বিবৃতি দিয়েছিল, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘আত্মনির্ভর ভারত’ ও ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র লক্ষ্যকে মাথায় রেখে আমরা এগিয়ে চলেছি। ভারতীয় ফৌজকে অত্যাধুনিক হাতিয়ার সরবরাহ করে যেতে চাই। পাশাপাশি, আমাদের আন্তর্জাতিক স্তরে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার স্বপ্ন রয়েছে। ইজরায়েলি সংস্থার বরাত মেলায় সেই রাস্তায় পা ফেলার সুযোগ পেলাম আমরা।’’ কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এভাবে তাৎপর্যপূর্ণ হতে চায় ভারত?
যখন প্যালেস্টাইনের গাজার প্রায় ৭৭ শতাংশ এলাকা ইজরায়েল বাহিনী দখল করে নিয়েছে, ঠিক সেই সময়ে এই অত্যাধুনিক হাতিয়ারের বরাত ভারতীয় সংস্থাকে দিয়েছিল ইজরায়েল। তখন গাজায় গ্রাউন্ড অপারেশন আরও তীব্র করার পরিকল্পনা করছিল আইডিএফ।
গুরুত্বপূর্ণ হল, ১৯৪৮ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিয়ম মেনে ইজরায়েল তৈরি হলেও ইজরায়েলকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিতে চায়নি ভারত। ওই সময়ে প্যালেস্টাইনের পক্ষে ভারত ভোট দিয়েছিল। পরে ১৯৫০ সালে ইজরায়েলের সার্বভৌমত্ব মেনে নেয় কেন্দ্র। কিন্তু ১৯৯০ সালের আগে অবধিও দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক খুব একটা ভালো ছিল না। ওয়াকিবহাল মহল মনে করে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ইজরায়েলের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। এ দেশের প্রথম যে প্রধানমন্ত্রী ইজরায়েল সফরে গিয়েছিলেন, সেটিও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
আবার সম্প্রতিক কালে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের যখন যুদ্ধ চলছিল ভারত নাকি ইজরায়েলের সাহায্য নিয়েছিল। ভারতের সঙ্গে সংঘর্ষবিরতির পর পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ দাবি করেছিলেন, ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ ইজরায়েলি সেনাবাহিনীর বেশ কয়েক জন উচ্চপদস্থ আধিকারিক অংশ নিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, সংঘর্ষ চলাকালীন নাকি তাঁরা নয়াদিল্লিতেই ছিলেন। যদিও তাঁর ওই দাবি নস্যাৎ করেছিল ভারত ও তেল আভিভ।
আরও পড়ুন- যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা থেকে মুনাফা লুটছে মাইক্রোসফট, অ্যালফাবেট?
তবে সংঘাত শুরু হতেই ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু জানিয়ে দিয়েছিলেন তাঁরা সব রকম সাহায্য করবেন। গত কয়েক বছরে আবার ভারতের প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলির সঙ্গে হাত মিলিয়ে একাধিক হাতিয়ার তৈরি করেছে ইজরায়েলের একাধিক সংস্থা। এমনকি ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ ভারতীয় সেনা সেই অস্ত্রও ব্যবহার করেছে বলে জানা গিয়েছিল। যেমন ‘স্কাইস্ট্রাইকার’ ড্রোন। ইজরায়েলি সংস্থা এলবিট সিকিউরিটি সিস্টেমের সঙ্গে মিলিতভাবে বেঙ্গালুরুভিত্তিক আদানি গোষ্ঠীর আলফা ডিজাইন এটি তৈরি করেছে। এ ছাড়া ইজরায়েলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বারাক-৮ নামের একটি ‘আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা’ও তৈরি করেছে ভারত। এমনকি, জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ ক্ষমতা প্রত্যাহারের পর সেখানে লগ্নিও করেছে ইহুদী রাষ্ট্রটি।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আবার এও মনে করেন যে মোদি সরকারের মুসলিমবিরোধী মনোভাব ইজরায়েলকে সমর্থন করার অন্যতম কারণ। ভারতের শাসক দল বিজেপির মুসলিমবিরোধী অবস্থান ইজরায়েলের প্যালেস্টাইনবিরোধী নীতির সঙ্গে মিলে যায়। ফলে কেবল সামরিক বাণিজ্যই নয়, মতাদর্শগত ঘনিষ্ঠতাও ভারত ইজরায়েলকে কাছাকাছি এনেছে।
প্রশ্ন উঠছে, সত্যি কি মুসলিমবিদ্বেষ ও অস্ত্র চালাচালি দুই দেশের সম্পর্ককে মজবুত করছে? এভাবেই কি তাৎপর্যপূর্ণ হতে চায় ভারত? প্রশ্ন এও উঠছে, আর কত দিন অন্ধকারে থাকবে প্যালেস্টাইনবাসী?

Whatsapp
