লাশের স্তূপ মর্গে! ৮,০০০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে দ্বিতীয় পর্যায়ের যুদ্ধ ঘোষণা ইজরায়েলের
Gaza Children Death Toll : সঠিক অ্যানাস্থেসিয়া ছাড়াই অঙ্গচ্ছেদ এবং অস্ত্রোপচার করা হচ্ছে। মর্গে মৃতদেহ স্তূপ হয়ে যাচ্ছে।
মারের বদলা মার, হামলার বদলা হামলা, ১ এর বদলা ১০০, হাজারের বদলা লাখ- যুদ্ধে তো নির্দিষ্ট কোনও নিয়ম হয় না। যুদ্ধে সব কিছু 'ফেয়ার'। ১৪০০ মৃত্যুর বদলা নিতে ৮০০০ মানুষকে খুন করেছে ইজরায়েল। এই ৮,০০০ এর মধ্যে শিশুর নিথর দেহ কত? প্রায় অর্ধেক। গুনতে গুনতে মানবিকতার প্রতি আস্থা হারানোও অপরাধ নয়! গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, হামাস-ইসরায়েল সংঘর্ষে ফিলিস্তিনিদের মৃত্যুর সংখ্যা ৮,০০০ ছাড়িয়েছে। এই আট হাজার মৃতের বেশিরভাগই মহিলা এবং শিশু। এই এত এত লাশের উপর দিয়েই ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু গাজায় আরও ট্যাঙ্ক এবং সেনা বাহিনী মোতায়েন করেছেন। ৮,০০০ মৃত্যুর পর যুদ্ধের 'দ্বিতীয় পর্যায়' ঘোষণা করেছেন।
গাজার বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, তিন সপ্তাহ ধরে যুদ্ধ চলছে গাজায়। তার মধ্যে সবচেয়ে তীব্র হামলা চলছে গত সপ্তাহান্তে। এই বোমাবর্ষণের নৃশংসতার কোনও তুলনা হয় না। শুক্রবার গাজায় ইন্টারনেট যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় ইজরায়েল। গাজার ২.৩ মিলিয়ন মানুষের বেশিরভাগেরই বাকি বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। রবিবার ভোরে গাজার কিছু অংশে ফের ইন্টারনেট চালু করা হয়।
আরও পড়ুন- গাজায় সাদা ফসফরাস ছড়াচ্ছে ইজরায়েল! কতটা মারাত্মক এই ‘নিষিদ্ধ অস্ত্র’?
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সহ মানবাধিকার সংস্থাগুলি জানাচ্ছে, গাজাতে ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন করে আসলে যুদ্ধের নৃশংসতাকে বাকি বিশ্বের থেকে আড়াল করা হচ্ছে। যুদ্ধে যে যে পদক্ষেপ করা হচ্ছে, কীভাবে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করা হচ্ছে, তা যেন কোনওভাবেই বাকি বিশ্ব দেখতে না পায় সেই চেষ্টাই করেছে ইজরায়েল। ৭ অক্টোবর ইজরায়েলে হামাসের হামলার প্রেক্ষিতে প্রতিশোধ নিতে এই ২.৩ মিলিয়ন ফিলিস্তিনিদের বাঁচার মৌলিক সুযোগগুলি কেড়ে নিয়েছে ইজরায়েল। খাদ্য নেই, জল নেই, বিদ্যুৎ নেই। ইজরায়েলি সেনাবাহিনীর তীব্র বোমাবর্ষণের মধ্যে থাকা এই নিরস্ত্র বাসিন্দারা আহত হয়ে ওষুধ অবধি পাচ্ছেন না।
আরও পড়ুন- ফের রকেট হামলা! গাজার হাসপাতালের পর এবার টার্গেট চার্চ!
“গাজার পরিস্থিতি প্রতি ঘণ্টায় আরও মারাত্মক হয়ে উঠছে। আমি দুঃখিত যে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী প্রয়োজনীয় মানবিক বিরতির কথা বললেও তাতে কান না দিয়ে ইজরায়েল তার সামরিক অভিযান আরও জোরদার করেছে,” বলছেন রাষ্ট্রসঙ্ঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। এই দুঃখপ্রকাশ, এই বাকি বিশ্বের ভূমিকাহীন অবস্থানে গাজাজুড়ে ঘটতে থাকা চিত্র কিন্তু বদলাচ্ছে না। কোথাও ইজরায়েলি বোমা হামলায় আহত ফিলিস্তিনিদের গাজা উপত্যকার দক্ষিণে দেইর আল বালাহ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ঘর হারা শিশু সামলাচ্ছে অন্য একরত্তি ভাইবোনদের। যে হাসপাতালে সে ঠাঁই নিয়েছে যে কোনও মুহূর্তে সেখানে ইজরায়েলের রকেট এসে পড়তে পারে। সব জেনেও বাঁচার কী মরিয়া চেষ্টা।
আর এসবের মাঝে শিশুর লাশ সরাতে সরাতে স্থবির হয়ে যাচ্ছেন স্বজনরা, গাজার আম নাগরিকরা। গাজা উপত্যকায় ইজরায়েলি বোমা হামলায় গুঁড়িয়ে যাওয়া বাড়িগুলোর নীচ থেকে বের করা সাদা কাপড়ে মোড়া শিশুর দেহ দেখছে বিশ্ব। লাশের তো স্রেফ নম্বর হয়, সেই নম্বরই ১ থেকে ১০০ হয়ে ১০০০ ছাড়িয়ে ৮০০০। আল জাজিরার প্রতিবেদন বলছে, গাজায় ২০,০০০ এরও বেশি মানুষ গুরুতর আহত৷ হাসপাতালে ওষুধ নেই, পরিকাঠামো ভেঙে গেছে। তারই মধ্যে প্রাণ বাঁচাতে সঠিক অ্যানাস্থেসিয়া ছাড়াই অঙ্গচ্ছেদ এবং অস্ত্রোপচার করা হচ্ছে। মর্গে মৃতদেহ স্তূপ হয়ে যাচ্ছে।