২৩০০ টাকা দিয়ে সন্তানের মুখে পার্লে-জি! যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার এই বাবার কাহিনি স্তব্ধ করে দেয়

Gaza Parle-G Biscuit: ভারতে পার্লে-জি'র দাম মাত্র ৫ টাকা। যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় সেই বিস্কুট ২,৩০০ টাকায় সন্তানকে কিনে দিয়েছেন এক বাবা।

সন্তান দুধেভাতে থাকুক, এইটুকুই সামান্য চাহিদা বাবা-মায়ের। জীবনের সমস্ত লড়াইয়ের শেষে রণক্লান্ত বাবা-মায়ের আকুতি থাকে সন্তানের নিরাপত্তা। আর যেখানে নিরাপত্তাই বাহুল্য? যেখানে অনন্ত শিশুর লাশ ডিঙিয়ে ডিঙিয়ে নিজের সন্তানের মুখে জুগিয়ে যেতে হয় সামান্য জল? যুদ্ধের ভয়াবহ ত্রাসের মধ্যে, যেখানে জীবনের কোনও নিশ্চয়তাই নেই, সেখানে সন্তানের জন্য দুধ-ভাত তো বাহুল্য। তবু, বাবা-মায়ের মন তো মানে না, মনে হয় সন্তানের জন্য শ্রেষ্ঠ সূর্য একদিন এঁকে যেতেই হবে, একদিন শ্রেষ্ঠ চকোলেটের বাগান গড়ে যেতে হবে সন্তানের জন্য। গাজার এক ফিলিস্তিনি বাবা তাঁর মেয়ের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য এই ভয়াবহ পরিবেশেও খুঁজে এনেছেন, প্রিয় বিস্কুট। আদরের কন্যাকে এক প্যাকেট পার্লে-জি বিস্কুট কিনে দিয়েছেন তিনি। ভারতে পার্লে-জি'র দাম মাত্র ৫ টাকা। যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় সেই বিস্কুট ২,৩০০ টাকায় সন্তানকে কিনে দিয়েছেন এক বাবা।

গাজার বাসিন্দা মহম্মদ জাওয়াদ তাঁর মেয়ে রাফিফের হাতে পার্লে-জি বিস্কুটের একটি প্যাকেট ধরা একটি ছবি এবং ভিডিও শেয়ার করেছেন। জাওয়াদ জানিয়েছেন, তিনি ওই প্যাকেটটি ২৪ ইউরোরও বেশি (প্রায় ২,৩৪২ টাকা) দামে কিনেছেন। ভারতে এর আসল দাম প্রায় ৫ টাকা এবং আন্তর্জাতিক বাজারে ১০০ টাকারও বেশি।

আরও পড়ুন- একদিনের শিশু, ৩০০০ ভ্রুণকে হত্যা ইজরায়েলের! গাজায় আর শিশুদিবস আসবে?

নিজের পোস্টে জাওয়াদ ব্যাখ্যা করেছেন, অত্যধিক দাম হওয়া সত্ত্বেও, মেয়েকে তাঁর প্রিয় খাবার খাওয়ানোর থেকে বঞ্চিত করতে তিনি পারবেন না। জাওয়াদ পোস্টে লিখেছেন, "দীর্ঘ অপেক্ষার পর, অবশেষে আজ আমি রাফিফের প্রিয় বিস্কুট পেলাম। যদিও দাম ১.৫ ইউরো (প্রায় ১৪৭ টাকা) থেকে বেড়ে ২৪ ইউরোরও বেশি হয়ে গেছে, তবুও আমি রাফিফকে তার প্রিয় খাবার থেকে বঞ্চিত করতে পারিনি।”

এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি গাজার ভয়াবহ অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকেই তুলে ধরছে। হামাস এবং ইজরায়েলি বাহিনীর মধ্যে চলতে থাকা দীর্ঘকালীন যুদ্ধের ফলে তীব্র খাদ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছে, যার ফলে মৌলিক প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রই এখন বিলাসবহুল পণ্যে পরিণত হয়েছে।

জাওয়াদ অন্য একটি পোস্টে অনুদান এবং আর্থিক সাহায্যের জন্য অনুরোধ করেছেন। এই ভয়াবহ সময় যুদ্ধ, আকাশছোঁয়া দাম এবং খাদ্য ঘাটতির মতো অনিশ্চয়তার ত্রিমুখী ধাক্কা সামলাচ্ছে জাওয়াদের মতো অজস্র পরিবার।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইজরায়েলে হামাসের আকস্মিক হামলার পর ইজরায়েল গাজায় এক নৃশংস সামরিক অভিযান শুরু করে। গাজাকে প্রায় ধ্বংস করে দিয়েছে দেড় বছর ধরে চলতে থাকা যুদ্ধ। গাজায় ত্রাণ সাহায্য পৌঁছতেও বাধা দিয়েছে ইজরায়েল, কেবলমাত্র ন্যূনতম মানবিক সাহায্য প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এমনকী সাহায্য যখন আসে, তখনও তা নিতান্তই কম। বেঁচে থাকা মানুষের জরুরি চাহিদাও তা পূরণ করতে পারে না। পরিস্থিতি এখন এতটাই খারাপ যে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ব্যয়বহুল এবং বিরল হয়ে উঠেছে। অভিযোগ উঠছে, যে সাহায্য আসছে, তা নিয়েও কালোবাজারি হচ্ছে। না হলে কীভাবে মানবিক সাহায্যের উপর অত্যন্ত নির্ভরশীল একটি অঞ্চলে এত মূল্যস্ফীতি সম্ভব?

আরও পড়ুন- মেরুদণ্ড টুকরো টুকরো করে দিয়েছে ইজরায়েলি বোমা! যেভাবে অথর্ব হচ্ছে গাজার শিশুরা

বিশ্লেষকরা বলছেন, গাজা এখন দুর্ভিক্ষের মুখে। জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলি অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি অঞ্চলে খাদ্য সংকট বৃদ্ধির বিষয়ে বারবার সতর্কবার্তা জারি করেছে। আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলির মতে, ইজরায়েল-হামাস সংঘাতের মধ্যে এই বছরের শুরুতেই দেখা গেছে গাজায় ছোট শিশুদের মধ্যে তীব্র অপুষ্টির হার প্রায় তিনগুণ বেড়েছে।

১৯৩৮ সালে স্বদেশি আন্দোলনের সময় ব্রিটিশদের তৈরি পণ্য বর্জন করে ভারতীয় পণ্য গ্রহণের আহ্বানের ডাকে সাড়া দিয়েই মুম্বইয়ের পার্লে প্রোডাক্টসের পার্লে-জি (মূলত পার্লে গ্লুকো) অভিজাত ব্রিটিশ খাবারের বাজার দখল করে। স্বাধীনতার পর, পার্লে-জি খানিক কম দামের কারণেই ভারতীয় গৃহস্থালির অন্যতম জনপ্রিয় বিস্কুট হয়ে ওঠে। পার্লে-জি-র প্যাকেটের উপর এক শিশুর ('পার্লে গার্ল'), ছবি, এই পণ্যটিকে আজও নস্টালজিয়ার উপাদান করে রেখেছে। বিপুল জনপ্রিয়তার কারণে, পার্লে-জি দক্ষিণ এশিয়া, আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের ২০টিরও বেশি দেশে রপ্তানি করা হয়।

More Articles