রকেটের পর রকেট হামলা! কেন বারবার ইজরায়েলের নিশানায় গাজার হাসপাতাল?

Israel-Hamas war: গাজার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল কমপ্লেক্স আল শিফায় সম্প্রতি আরও একটি হামলা চালিয়েছে ইজরায়েল। যেখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন হাজার হাজার ফিলিস্তিনি শরণার্থী।

দেখতে দেখতে ৩৫ দিন কেটে গিয়েছে, গাজায় ভয়াবহ হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইজরায়েল। এ যেন এক পক্ষের লড়াই। সেই ৭ অক্টোবর ইজরায়েলে ঢুকে হামলা চালিয়েছিল জঙ্গিগোষ্ঠী হামাস। তারপরেই গাজার বিরুদ্ধে সর্বশক্তি দিয়ে যুদ্ধঘোষণা করে দেয় ইজরায়েল। সেই থেকে গাজাকে ছাড়খার করে দিয়েছে নেতানিয়াহু সেনা। বারবার নিশানা করা হয়েছে হাসপাতাল, শরণার্থী শিবিরের মতো জায়গাগুলিকে। এখনও পর্যন্ত গাজার তিনটি হাসপাতালকে নিশানা করেছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই অসংখ্য অসুস্থ রোগীর মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে রোগীর পরিজন থেকে শুরু করে অসংখ্যা ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীর। হাসপাতালগুলিতে আশ্রয় নিয়েছিলেন বহু বাস্তুচ্য়ুত ফিলিস্তিনি। ভয়ঙ্কর রকেট হামলায় মৃত্যু হয়েছে তাঁদেরও। ইজরায়েলের নিশানায় থাকা তিন হাসপাতালের মধ্যে সবচেয়ে বড় হাসপাতাল কমপ্লেক্স আল শিফায় সম্প্রতি আরও একটি হামলা চালিয়েছে ইজরায়েল। যেখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন হাজার হাজার ফিলিস্তিনি শরণার্থী।

ফলে ক্ষয়ক্ষতির সংখ্যাটা আন্দাজ করা অসম্ভব নয়। সম্প্রতি চার ঘণ্টা করে যুদ্ধবিরতি দেওয়ার ব্যাপারে রাজি হয়েছে ইজরায়েল। যাতে ওই সময়টুকুতে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার সুযোগ পান বাসিন্দারা। যদিও ইজরায়েলের এই আংশিক যুদ্ধবিরতিতে সায় ছিল না আমেরিকার। বরং যুদ্ধ জারি রাখার পক্ষেই রায় জো বাইডেন সরকারের। তবে এই চার ঘণ্টা যুদ্ধবিরতির অছিলায় এবার হামলার বেগ আরও বাড়াবে না তো ইজরায়েলি সেনা! সেই আতঙ্কটাই ঘুরে বেড়াচ্ছে গাজায় বসবাসকারী ফিলিস্তিনিদের মনে-মাথায়।

আরও পড়ুন: রোজ চার ঘণ্টা গাজায় যুদ্ধ থামাবে ইজরায়েল! কী হবে এই চার ঘণ্টায়?

মুখে আংশিক যুদ্ধবিরতির ভরসা দিলেও যেভাবে আল শিফা হাসপাতালে অতর্কিতে রকেট হেনেছে ইজরায়েলি সেনা, তাতে সেই আশঙ্কাই আরও ঘনীভূত হয়েছে। যদিও ইজরায়েল বাহিনীর দাবি, হামাসদের খতম করতেই হাসপাতালে হামলা চালানো হয়েছে। তাদের দাবি, ওই হাসপাতালের প্রবেশদ্বার থেকে শুরু করে একটি বিস্তৃত সুরঙ্গ বিছিয়ে রেখেছে হামাসরা ওই হাসপাতালের ভিতরে। বেশ কয়েকজন হামাস কম্যান্ডার লুকিয়ে ছিল ওই হাসপাতালেই। সেখান থেকেউ কম্যান্ড সেন্টার পরিচালনা করত জঙ্গি সংগঠন হামাস। তাকে ধুলোয় মিশিয়ে দিতে ইজরায়েলের এই অভিযান। যদিও হামাসদের উপস্থিতির কথা সম্পূর্ণ ভাবে অস্বীকার করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

 

কোল্যাটারাল ড্যামেজের নাম করে একের পর এক নিরপরাধ গাজাবাসীকে হত্যা করে গিয়েছে ইজরায়েল। ইতিমধ্যেই ১০ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে গাজায় নিহতের সংখ্যা। যার মধ্যে প্রায় অর্ধেকটা অংশ জুড়েই রয়েছে শিশুরা। আল শিফা হাসপাতালের এই হামলাও তার ব্যতিক্রম নয়। আল শিফা হাসপাতালের ডিরেক্টর জেনারেল মহম্মদ আবু সালমিয়া জানান, ঠিক যেখানে এসে আঘাত হেনেছিল ইজরায়েলের রকেটটি, সেখানে সাধারণ নাগরিকদের পাশাপাশি ছিলেন কয়েক জন সাংবাদিকও। ঘটনায় বেশ কয়েকজন গুরুতর জখন হন। হামলার সময় হাসপাতাল চত্বরে উপস্থিত ছিলেন অসংখ্য মানুষ। ফলে বড়সড় হতাহতের সম্ভাবনা ছিল। তবে রকেটটি হাসপাতাল লাগোয়া একটি জায়গায় এসে আঘাত হানায় ক্ষয়ক্ষতি কিছুটা এড়ানো গিয়েছে। ইচ্ছা করেই হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় বারবার রকেট হামলা চালাচ্ছে ইজরায়েল। অভিযোগ স্থানীয়দের।

একের পর এক হামলায় ভেঙে পড়েছে হাসপাতালের একাধিক জানলার কাচ। যে কোনও সময় রকেট এসে কেড়ে নিতে পারে প্রাণ। এমন একটা আশঙ্কার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন হাসপাতালে ভর্তি রোগী থেকে শুরু করে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীরা। হাসপাতালতে নিরাপদ ভেবে যারা আশ্রয় নিয়েছিলেন সেখানে, তাদের অবস্থাও তথৈবচ। এভাবে আর কতদিন! কবে এই ভয়াবহ যুদ্ধ থেকে পিছু হাঁটবে ইজরায়েল। ক্রমে ইজরায়েলের এই যুদ্ধটা যেন হাসপাতালের বিরুদ্ধে হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঠিক যেমন ভাবে এ যুদ্ধটা নিরিহ নিরপরাধ ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে। রক্তে ভাসছে হাসপাতালের আনাচকানাচ। সব জায়গা থেকে ভেসে আসছে জখম মানুষের চিৎকার। এই মুহূর্তে ইজরায়েলে এমন কোনও জায়গা নেই, যা ইজরায়েলের নিশানার বাইরে। যেখানে হাসপাতালের মতো জায়গাকে অতিরিক্ত নিরাপত্তা দেওয়া প্রয়োজন, সেখানে তাকেই চাঁদমারি বানিয়ে বসে আছে নেতানিয়াহু সেনা। গত সপ্তাহে হাসপাতালের বাইরে দাঁড়ানো একটি অ্যাম্বুল্যান্স লক্ষ্য করে রকেট হামলা চালায় ইজরায়েল। ঘটনায় অন্তত ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল। কিছু দিন আগে গাজার একটি মেডিক্যাল কমপ্লেক্সের সোলার প্যানেল উড়িয়ে দেয় ইজরায়েলিরা। যাতে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে যায় গোটা হাসপাতাল।

আরও পড়ুন:স্নান-খাওয়ার জলটুকুও নেই! দূষিত সমুদ্রের জলেই বাঁচছে গাজার শরণার্থী শিশুরা

এভাবেই হামাস খতমের নামে এক ভয়াবহ গণহত্যার মঞ্চ গাজা জুড়ে সাজিয়ে চলেছে ইজরায়েল। রীতিমতো পরিকল্পনা করে চালানো হচ্ছে হামলা। প্রতিটা পদক্ষেপ কার্যত হিসেব নিকেশ করে নিচ্ছে ইজরায়েল, যাতে গাজাকে শেষ করে দেওয়া যায় একেবারে। আর কোনওদিন মাথা তুলে না দাঁড়াতে পারে গাজায় বসবাসকারী ফিলিস্তিনিরা। আর কেউ কখনও যেন হামাসদের মতো ইজরায়েলের দিকে চোখ তুলে তাকানোর স্পর্ধাটুকুও না করে। আর চোখ-কান বুজে সেই ভয়ঙ্কর আগ্রাসনকে সমর্থন করে চলেছে আমেরিকা, ব্রিটেনের মতো প্রথম বিশ্বের একাধিক দেশের রাষ্ট্রনেতারা।

More Articles