গোপন ভিডিও থেকে অসভ্য অসভ্য খেলা! পাড়াগাঁয়ের যৌনতার ক্লাসরুম কেমন ছিল
Sexuality of Rural Bengal: সাংকেতিক ভাষা ব্যবহৃত হতো। যেমন, সঙ্গমকে বলা হতো লাঙল দেওয়া বা হস্তমৈথুনকে জেনারেটর চালানো...
১৯৯৭-'৯৮ সালের দিকে মফসসলগুলিতে গ্রামপতনের শব্দ শোনা যেতে শুরু করলেও, স্বাভাবিকভাবেই এখনকার চেয়ে গাছপালার সংখ্যা অনেক বেশি ছিল।মানুষের সঙ্গে মানুষের দেখা হতো বেশি। প্রযুক্তি এতটা সুলভ হয়ে যায়নি। ঠিক ২০০০ সালের পর থেকেই ধীরে ধীরে পালাবদল ঘটে গেল অনেককিছুর।
সেই সময়ে যৌনশিক্ষার বিষয়টি ছিল অনেক জ্যান্ত ও আলোআঁধার-ঘেরা, যেহেতু মোবাইল ফোন সবার হাতে হাতে এভাবে ছড়িয়ে পড়েনি, চাইলেই পর্নোগ্রাফি দেখতে পাওয়ার এমন হাজার-এক ফিকির ছিল না।
সরস্বতী পুজোর দিন যেমন হাতেখড়ি হয় বাচ্চাদের, তারপর আস্তে আস্তে অক্ষর চেনে, লিখতে শেখে, তেমন করেই সরস্বতী পুজোর রাতগুলোতে যৌনতা শেখানোর ক্লাসরুম চলত গোপনে।
আরও পড়ুন: হেমন্তে ছিল আলো তৈরির পাঠশালা! কালীপুজোর প্রদীপ যেভাবে তৈরি হত হাতে হাতে
সরস্বতী পুজোর প্যান্ডেল কত অন্যরকম করা যায়, এই নিয়ে চলত প্রতিযোগিতা। সুতোর প্যান্ডেল, কাগজ কেটে প্যান্ডেল, কাঁচা বাঁশের সঙ্গে শোলার ফুল জুড়ে জুড়ে প্যান্ডেল। আর সেইসব প্যান্ডেলের পাশে থাকত অবধারিতভাবে লাগোয়া একটি গুপ্তঘর। পাড়ার দাদারা পুজোর কাজের ব্যস্ততায় আর বাড়ি যাবে না।এখন এখানেই কয়েকদিন অস্থায়ী বসতি। সেই ঘরের চারদিকে ত্রিপল-টাঙানো, শীতকাল বলে মেঝেতে খড় পুরু করে বিছিয়ে চাদর পেতে নেওয়া। চারদিক বন্ধ। সেখানে সবার প্রবেশাধিকার ছিল না।
পুজো উপলক্ষে তখন ভিডিও দেখার চল ছিল।ক্যাসেট-সহ আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম জোগাড় করে মাঝরাত অবধি 'পোসনজিৎ', 'মিঠুনের' সিনেমা দ্যাখা।রাত বাড়লেই ভূতের সিনেমা দেখা হবে বলে কয়েকজনমাত্র সেই গুপ্তঘরে ঢুকে ভূতের সিনেমার নামে দেখা হতো রগরগে কোনও সিনেমা। গল্প খুব সাদামাটা। পুরনো কটেজে মালকিন একা থাকে হয়তো, মধ্যরাতে অদৃশ্য ভূত এসে পোশাক খুলিয়ে ধর্ষণ করে যাচ্ছে।
কিশোরমনে নতুন এক অনুভূতি ছায়া ফেলে যাচ্ছে। বড় একজন দাদা হয়তো প্যান্ট খুলে শিখিয়ে দিচ্ছে হস্তমৈথুনের কায়দা। অস্বস্তি ও অনেকখানি পাপবোধ নিয়ে একজন কিশোর নিজের শরীরে লুকিয়ে থাকা এইরকম এক অনুভূতির কথা জেনে অবাক হয়ে থাকছে।
ব্যক্তিগত অভিধানে ঢুকে পড়ছে নতুন নতুন শব্দ। 'খেঁচা', 'মাল ফেলা', 'হ্যান্ডেল মারা' এসব শব্দের সঙ্গে পরিচয় ছিল না আগে। কণ্ঠার হাড় শক্ত হয়ে ওঠা, গলায় পৌরুষ জেগে ওঠা একজনের নিজস্ব ভুবন বদলাচ্ছে তখন। ভিডিও হতো তো বছরে এক-আধবার, চটিবই তো সহজে মিলত না, তাসের প্যাকেটে ছাপা নগ্ন শরীরের ছবি দেখার জন্য অনেক অপেক্ষা করতে হতো, কিন্তু কল্পনার তো কোনও প্রাচীর নেই। শীতকালে সরষে খেত, গ্রীষ্মে পাটভুঁইগুলো হয়ে উঠত নিজেদের মতো যৌনতা প্র্যাকটিসের আখড়া।
২
ভিডিও, চটিবই এইসব তো ক্ষণিকের। কিন্তু মুখে মুখে অবিশ্রান্ত গল্প চলত সারাক্ষণ। একটি গল্প বেশ মনে পড়ে। বিয়ের পরের দিন নববধূ পুকুরে চান করতে গেছে, সেদিন তো কালরাত্রি, পুকুরে নামতেই ওর যোনির ভেতর ঢুকে গেছে এক কইমাছ। ফুলশয্যা মিটে যাওয়ার পর সেই কই যোনি থেকে বেরিয়ে এসে সবাইকে বলছে, জানিস, কাল এক অন্ধকার গুহায় ঢুকে গেছিলাম,পিছল অন্ধকার সেখানে, একটি ইঁদুর আমাকে ধরার চেষ্টা করছিল বারে বারে, না পেরে শেষে গরম ভাতের মাড় গায়ে ঢেলে দেয়।
মৈথুনের এহেন বর্ণনায় এইরকম দৃশ্যকল্প নির্মাণের ঘনঘটায় কিশোরমনে জেগে উঠত কাঁচা যৌনবোধ।
হস্তমৈথুন যে স্বাভাবিক, কাম জেগে ওঠার মধ্যে যে কোনও রকম অস্বাভাবিকতা বা পাপের কোনও বিষয় নেই, একথা বুঝিয়ে বলার কেউ থাকত না। সবটাই চলত লুকিয়ে লুকিয়ে নিষিদ্ধ স্বাদ নেওয়ার মতো করে।ক্লাস সেভেন-এইটে পড়া একটি ছেলের কাছেও যৌনতা আসত ভয়ের, পাপের, ঘিনঘিনে অনুভূতির হয়ে।
ভাদ্রমাসে কুকুরের সঙ্গম, জলের হাঁসদের পাখনা দিয়ে ঘিরে ধরে মিলন, সাপের শঙ্খ লাগা- পরবর্তীতে জীবনবিজ্ঞান বইয়ে জনন চ্যাপটার পড়তে গিয়ে আস্তে আস্তে যৌনতা সহজ হয়ে আসত। ইস্কুলে পড়ার সময় আমি এমন এক বন্ধুকে চিনতাম, যে জনন বিষয়টি পড়ার সময় নিষিদ্ধ উত্তেজনা ও ভয় এই যুগপৎ অনুভূতিতে টলোমলো হয়ে উঠত।
যে বড় দাদারা থাকত, ওদের গুরুমশায়গিরি সম্পূর্ণ হলে অন্য একদল পদ অধিকার করত, যারা আলতো প্রাথমিক যৌনতা চিনিয়ে দেওয়ার কাজ করত। কিন্তু ভয়ের জায়গা ছিল অন্যত্র, এক শ্রেণির উচ্চমাধ্যমিক পার হওয়া বিকৃত মস্তিষ্কের ছেলের দল বাচ্চা ছেলেদের ব্যবহার করত যৌনতার কাজে। ক্লাস ফোর-ফাইভে পড়া ছেলের দলকে। ততদিনে টেলিভিশন চলে আসছে ঘরে ঘরে। পর্দায় রঙিন ছবির লোভ দেখিয়ে বিছানায় ন্যাংটো করে শুইয়ে দুই কচি পা-কে জড়ো করে কাঁচির আকৃতি ধারণ করিয়ে ভেতরে লিঙ্গ প্রবেশ করিয়ে সুখ নিত ওইসব বড় ছেলের দল, একসঙ্গে। এইসব বালকদের ধরে 'অসভ্য অসভ্য খেলা' বা 'নুনু নুনু খেলা' নাম দিয়ে চলত অবাধ যৌনতা। বালকদের কেউ কিছু বুঝত না তেমন, শুধু বুঝত, গোপন কিছু একটা হচ্ছে, বাড়িতে কোনও বাচ্চা জানিয়ে দিতে চাইলে ব্ল্যাকমেল চলত। একটি ছোট বাচ্চার জীবন ভয়ে ও কান্নায় নীল নরক হয়ে উঠত। এগুলো চলত রাতের ইস্কুলবাড়ি, বন্ধ পোড়ো ঘর, কুঁড়ে, ফসলজমির মাঝে।
সাংকেতিক ভাষা ব্যবহৃত হতো। যেমন, সঙ্গমকে বলা হতো লাঙল দেওয়া বা পুকুরে খোল দেওয়া, হস্তমৈথুনকে আড়াল করে জেনারেটর চালানো এইসব।
পাড়াগাঁয়ের যৌনতা ছিল জ্যান্ত, কাঁচা, কখনও কখনও বিকৃত ও হিম। প্রেক্ষিত বদলে গেলেও ঘটনা যে খুব বদলেছে, তা কিন্তু নয়।