রাত নামলে পা রাখে না মানুষ! হাড় হিম করা এই রেলস্টেশনগুলি রয়েছে ভারতেই

Haunted Stations: ঢুঁ মারবেন নাকি এই স্টেশনগুলিতে?

গা ছমছম কী হয় কী হয়...

ছোটবেলায় 'ঠাকু'মার ঝুলি'-র ভূত নিয়ে কম-বেশি কৌতূহল সকলেরই ছিল। অবশ্য বয়স বাড়লে যে ভূতের ভয় কমবে, এমন না-ও হতে পারে! আবার সেই ভূত কেমন দেখতে হয়, এই নিয়েও নানা তরজা অনেকে করেছেন নিশ্চয়ই! তবে আদৌ ভূত আছে কি নেই, সেই তর্কে যাওয়ার দরকার নেই। কিন্তু ছোটবেলায় ভৌতিক কাহিনি শোনাই হোক বা বড় হয়ে ভূতের সিনেমা দেখার অভ‍্যেসেই হোক, ভূত নিয়ে বাঙালির আবেগ কিন্তু তারিফযোগ্য। আসলে ভূত কেমন দেখতে, তার থেকেও বেশি আগ্রহ কাজ করে ভূতেরা কেমন জায়গায় থাকে- তার প্রতি। নিশুতি রাতের গা-ছমছমে বিষয়টাই যেন প্রত্যেকে বেশি উপভোগ করেন।

সারা পৃথিবীতেই এমন গা-ছমছমে জায়গা আছে, যা দেখার জন্য রীতিমতো পর্যটকরা ভিড় জমান। এমন জায়গা কিন্তু ভারতেও আছে, এমনকী, কলকাতাতেও। জানেন কি? সামনেই পুজো। পুজোর সময় প্যান্ডেল ঘোরার পাশাপাশি চাইলে, গভীর রাতের অন্ধকারে একবার এই জায়গাগুলোয় ঘুরে আসবেন কি না ভেবে দেখতে পারেন।

আরও পড়ুন: বন্ধ স্কুলের ভেতর থেকে ভেসে আসে অশরীরী হাসিকান্না, কুয়াশাঘেরা পাহাড়ে অলৌকিকের হাতছানি

রবীন্দ্র সরোবর মেট্রো স্টেশন, কলকাতা
রাতের মেট্রোর যাত্রী যাঁরা, অনেকসময়ই রাতে অস্বাভাবিক কিছু লক্ষ্য করেছেন বলে জানিয়েছেন। মাঝে মাঝে শুনেছেন কান্নার আওয়াজও। বিশ্বাস করা না-করা অবশ্যই ব্যক্তিগত বিষয়। মেট্রো স্টেশনে প্রায় দিনই আত্মহত্যার খবর অনেকেই শোনেন। এমনও হতে পারে, সেখানে তাদেরই অতৃপ্ত আত্মা ঘুরে বেড়ায়। রাতের বেলা একা একা যাবেন নাকি এই স্টেশনে?

বেগুনকোদর রেল স্টেশন, পুরুলিয়া
পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম ভৌতিক রেল স্টেশনই বেগুনকোদর। পুরুলিয়ার মানুষ ভয়ে কাঁটা হয়ে থাকেন। এমনকী, এই স্টেশনের ধারে-কাছে পর্যন্ত যান না। ৪২ বছর এই পথে ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। ওখানকার মানুষের কথায় জানা যায়, প্রায় দিন-রাতেই রেললাইনের ওপর সাদা কাপড়-পরিহিত এক মহিলাকে দেখা যেত। শোনা যায়, বহুদিন আগেই সেখানে সে আত্মহত্যা করেছিল। আত্মহত্যা করে বা দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া এই মহিলার আত্মার গল্প এত দূর ছড়িয়ে পড়েছিল, শেষ পর্যন্ত সরকারের তরফে হস্তক্ষেপ করতে হয়। তদন্ত করে বলা হয়, এসব নিতান্তই গুজব। প্রায় ৪২ বছর অকেজো পড়ে থাকার পর ২০০৯ সালে এই স্টেশন আবার চালু হয়েছে। কিন্তু আজও স্থানীয়দের অনেকে রাতে এড়িয়ে চলেন এই স্টেশন চত্বর।

দম্বিভলি রেল স্টেশন, মহারাষ্ট্র
সারাদিনের ব্যস্ত এই স্টেশন ঘিরেও রয়েছে এক ভূতের গল্প। এক রাতে জনৈক অফিস-কর্মী বাড়ি ফেরার সময় প্ল‍্যাটফর্মে এক মহিলাকে বসে থাকতে দেখেন। তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন, কোনও বিপদ হয়েছে কি না। মহিলা জবাব দেন, তিনি বাড়ি ফিরতে চান, কিন্তু পারছেন না। পরের রাতেও একই ঘটনা ঘটে। এরপরে আরও অনেকেই নাকি রাতে ওই মহিলাকে একা স্টেশনে বসে থাকতে দেখেন। কিন্তু পরে তিনি কোথায় উধাও হয়ে যান, কেউ জানতে পারে না। সেখান থেকেই ছড়িয়েছে এই স্টেশনের ভূতের গল্প।

মুলুন্ড রেলওয়ে স্টেশন, মুম্বই
মুম্বইয়ের মুলুন্ড রেলওয়ে স্টেশন। এই স্টেশন সংলগ্ন ট্র্যাক অতিক্রম করার সময় বা কোনও দুর্ঘটনায় যে ব্যক্তিরা মারা গিয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেকের আত্মাই নাকি স্টেশনে রয়েছেন বলে মনে করেন স্থানীয়রা। রাত বাড়লেই তাঁরা নেমে আসেন রেলওয়ের ট্র্যাকে। রেললাইন ট্র্যাক বা প্লাটফর্মে তাঁদের নাকি দেখাও গিয়েছে বহুবার, এমনটাই দাবি সেখানকার অধিবাসীদের। ভ্রমণকারী এবং স্থানীয় লোকরা প্রায়শই সন্ধ্যার সময় চিৎকার এবং কান্নার শব্দ শুনতে পান। এবং রাত নামলে পারতপক্ষে কেউ ওই অঞ্চলে যেতে চান না।

লুধিয়ানা রেলওয়ে স্টেশন, পাঞ্জাব
পাঞ্জাবের লুধিয়ানা রেল স্টেশনে একজন প্রাক্তন আধিকারিকের আত্মা এখনও রিজার্ভেশন সেন্টার অফিসে ঘুরে বেড়ায়। শোনা যায়, রিজার্ভেশন সিস্টেমের একজন আধিকারিক ২০০৪ সালে এই স্টেশনে আত্মহত্যা করেছিলেন। এখনও তিনি এই স্টেশনে ঘন ঘন আসেন। স্থানীয়রা বলেন, তাঁর মৃত্যুর পরেও তাঁর আত্মা রিজার্ভেশন সেন্টার অফিসে ঘুরে বেড়ায়, যেখানে তিনি আগে কাজ করতেন।

বারোগ স্টেশন, সিমলা
কালকা থেকে সিমলার পথে ট্রেনে চেপে এই স্টেশনের পাশ দিয়ে যেতে যাত্রীদের রীতিমতো গায়ে কাঁটা দেয়। স্টেশনের নামকরণ হয়েছিল ব্রিটিশ রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ার কোলোনেল বারোগের নামে‌। তিনি সেসময় এখানে কাজ করতেন। এক সময়ে সহকর্মীদের ষড়যন্ত্রের শিকার হন তিনি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অপমানিত হন। আঘাত সহ্য করতে না পেরে নিজেকে গুলি করে মেরে ফেলেন তিনি। শোনা যায়, তাঁর সৎকার করা হয়নি। বারোগ স্টেশনে আজও রাতে স্থানীয়রা যেতে ভয় পান। শোনা যায়, এখনও নাকি তার আত্মা ঘুরে বেড়ায় সেই স্টেশনে!

চিত্তুর রেলওয়ে স্টেশন, অন্ধ্রপ্রদেশ
অন্ধ্রপ্রদেশের চিত্তুর রেলওয়ে স্টেশন। এই স্টেশনে রয়েছে সিআরপিএফ জওয়ানের আত্মা। কথিত আছে, তিনি নতুন দিল্লিগামী কেরল এক্সপ্রেসে যাওয়ার সময় রেলকর্মীর দ্বারা লাঞ্ছিত হয়েছিলেন৷ হরি সিং নামে ওই সিআরপিএফ জওয়ান ২০১৩ সালে নতুন দিল্লিগামী কেরল এক্সপ্রেসে আরপিএফ এবং কয়েকজন টিটিই দ্বারা লাঞ্ছিত ও প্রহৃত হন। হরি গুরুতর আহত হয়েছিলেন সেই ঘটনায়। চিকিৎসা ক্লিনিকে ঘটনার ১০ দিন পর তাঁর মৃত্যু হয়। তারপর থেকে তাঁর আত্মা ওই রেলওয়ে স্টেশনে থাকেন বলে প্রচার।

এমজি রোড মেট্রো স্টেশন, গুরগাঁও
গুরগাঁওয়ের এমজি রোড মেট্রো স্টেশনে এক মহিলার আত্মা রয়েছে। বহু বছর আগে একটি দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়েছিল। ভ্রমণকারীদের দাবি, তাঁরা প্রায়শই এই স্টেশনে অস্বাভাবিক শব্দ শুনতে পান। কেউ যেন বিড়বিড় করতে থাকেন। মনে করা হয়, এই স্টেশনটিতে ওই মহিলার আত্মা ভীতি ছড়ায়। যিনি কয়েক বছর আগে এখানে একটি দুর্ঘটনায় মারা যান। বহু মানুষ তাঁকে নাকি সাদা শাড়ি পরে স্টেশনে ঘুরে বেড়াতে দেখেছেন।

নৈনি রেলওয়ে স্টেশন, উত্তরপ্রদেশ
উত্তরপ্রদেশের নৈনি রেলওয়ে স্টেশনটিতে ভূতের আড্ডা বসে। যে-সমস্ত মানুষ ওই রেলওয়ে স্টেশন-সংলগ্ন নৈনি জেলে প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের আত্মারা রয়েছেন রেলওয়ে স্টেশনে, এমনটাই বলা হয়। স্টেশনে তেনারা বাস করেন, কোনও ক্ষতি করেন না- এমনটাই বিশ্বাস একাংশের। আত্মাগুলি নিজেরা নাকি আড্ডায় মাতে, স্থানীয় লোকেরা বা যাত্রীরা তেনাদের উপস্থিতি অনুভব করেন বলেও শোনা যায়।

More Articles