সুতোয় ঝুলছে লাখো জীবন, ধ্বস, বৃষ্টিতে যেখানে দাঁড়িয়ে হিমাচল
Himachal Pradesh Rains: বিশ্ব উষ্ণায়ণের ফলে রোজ একটু একটু করে গলে গিয়েছে হিমবাহ। বেড়েছে সমুদ্রের জলস্তর। আর তার মাশুলই কি এভাবে মিলছে হাতেনাতে। প্রতিশোধ নিচ্ছে প্রকৃতি।
ফের বিপর্যয়ের বিপর্যয়ের মুখে স্বপ্নরাজ্য হিমাচল। রবিবার রাতে হঠাৎ করেই পাহাড়ি এই জনপদে নেমে আসে হড়পা বান। সোলানে শুরু হয় মেঘ ভাঙা বৃষ্টি। আচমকা জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছেন অনেকেই। নেমেছে ধসও। ভেঙে গিয়েছে রাস্তা। বিচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা। রবিবার রাত থেকে বৃষ্টিতে তড়তড়িয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। এখনও পর্যন্ত হিমাচল বিপর্যয়ে মোট ২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। লাগাতার পরিবেশ দূষণ, বৃক্ষছেদনের ফলে গোটা পৃথিবী জুড়েই ভারসাম্য হয়েছে প্রাকৃতিক ভারসাম্য। বাড়ছে উষ্ণায়ন। পৃথিবী এগোচ্ছে ধ্বংসের দিকে। আর তারই ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে কি হিমাচল প্রদেশ?
আরও পড়ুন: ভয়াবহ বন্যায় অস্তিত্বের সঙ্কটে তাজমহল, ৪৫ বছরে প্রথম সৌধ ছুঁল যমুনার জল
পাহাড়, বরফ, নদীর মতো একগুচ্ছ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সব কিছু দিয়ে ঠাসা উত্তরভারতের এই রাজ্য। প্রায় সব ঋতুতেই পর্যটকের ভিড় এই স্বপ্নরাজ্যে। পাহাড়ি এলাকা মানেই তা ঠিক যতটাই সুন্দর, ততখানি বিপদসংকূল। ধস, হড়পা বান এসব নিত্যসঙ্গী পাহাড়ি মানুষদের। হিমাচলও তার বাইরে নয়। প্রায়শই দুর্ঘটনার খবর কানে আসে সেখান থেকে। দিন কয়েক আগেই হিমাচলে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে প্রাণ হারান হিন্দি ছোটপর্দার পরিচিত মুখ বৈভবী উপাধ্যায়। কখনও পাহাড়ি পথে খাদে পড়ে যায় গাড়ি, তো কখনও ধস নেমে বড়সড় দুর্ঘটনা। তার সঙ্গে প্রাকৃতিক বিপর্যয় তো লেগেই রয়েছে। আর এ সবের নেপথ্যে কি আদৌ মানুষের সর্বব্যপী আকাঙ্ক্ষা, নগরায়নের নেশা লুকিয়ে নেই কোথাও! প্রশ্নটা বোধহয় থেকেই যায়।
সাম্প্রতিক এই বিপর্যয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে হিমাচলের। হড়পা বানের দাপটে শিমলার সামার হিল এলাকায় ধসে গিয়েছে মন্দির। মন্দিরের ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে প্রাণ গিয়েছে অন্তত ৯ জনের। অন্যদিকে সোলানে মেঘ ভাঙা বৃষ্টিতে ভেসে গিয়েছে জাদন গ্রাম। ওই ঘটনায় মারা গিয়েছেন অন্তত ৭ জন। সময় যত এগোবে, তত বাড়তে থাকবে মৃতের সংখ্যা। সোমবারই শিমলার সামারহিলে যেখানে মন্দিরটি ভেঙে পড়ে, সেই স্থান পর্যবেক্ষনে যান মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিংহ সুখু । শিমলার ফাগলি এলাকায় হড়পা বানে ভেসে গিয়েছে বহু ঘরদোর। ভূমিধ্বসে চাপাও পড়েছে বহু। সেই জায়গাটিও পরিদর্শন করেন মুখ্যমন্ত্রী। দুর্ঘটনায় শোকপ্রকাশ করে মৃতদের পরিবারের পাশে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন প্রশাসনকে। একবার-দু'বার নয়, লাগাতার ধস নেমেই চলেছে হিমাচল জুড়ে। যার ফলে কার্যত জনজীবন ব্যাহত রাজ্যজুড়ে। নিরাপত্তার খাতিরে বেশ কিছু রাস্তা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। ধসের জেরে মোট ৪৫২টি রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে হিমাচলে। এরমধ্যে শুধু মান্ডি জেলাতেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে ২৩৬টি রাস্তা । সিমলায় ৫৯টি ও বিলাসপুরে ৪০টি রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে ধসের জেরে। শিমলা এবং চণ্ডীগড়ের সংযোগকারী শিমলা-কালকা জাতীয় সড়কে ধসের কারণে গত দু’সপ্তাহ ধরেই যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। সাম্প্রতিক বিপর্যয়ে ধস নেমেছে ঋষিকেশ-চম্বা জাতীয় সড়কেও। জলস্তর ক্রমাগত বাড়ছে বিপাশা নদীর। পরিস্থিতির দিকে কড়া নজর রাখার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
मंडी - मझयाली में बादल फटने से भारी तबाही, क़ुदरत क़े क़हर क़े आगे सब कुछ हो रहा पस्त, तबाही का लाइव वीडियो#HimachalPradesh #HimachalFloods #HimachalPradeshRains #HimachalWeather #Mandi @CMOFFICEHP pic.twitter.com/D3HvjV7HDX
— Gaurav Kumar (@gaurav1307kumar) August 14, 2023
শুধু হিমাচলেই নয়, আবহাওয়া খারাপ উত্তরাখণ্ডেও। সেখানে রেড অ্যালার্ট জারি করেছে মৌসম ভবন। সতর্ক করা হয়েছে পুলিশ ও এসডিআরএফ টিমকেও। বেশ কিছুদিন ধরেই ভারী বৃষ্টির কবলে উত্তরাখণ্ড। তৈরি হয়েছে বন্যা পরিস্থিতিরও। দেহরাদুনে ইতিমধ্যেই ভেঙে পড়েছে একটি কলেজের বিল্ডিং। বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে নদী মন্দাকিনী। যার জেরে বন্ধ হয়ে গিয়েছে চামোলি জেলার বাঁশবারা গ্রাম সংলগ্ন রুদ্রপ্রয়ায়-গৌরীকুণ্ড ন্যাশনাল হাইওয়েটি।
হিমাচল প্রদেশ ও উত্তরাণ্ডে আগামী কয়েকদিন ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দফতর। সোমবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত একটানা বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে উত্তরাখণ্ডে। বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে পঞ্জাব, হরিয়ানা ও উত্তরপ্রদেশে। সব মিলিয়ে গোটা উত্তর ভারত জুড়েই ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা উড়িয়ে দিতে পারছেনা না আবহবিদেরা। বিপজ্জনক এলাকাগুলি থেকে বাসিন্দাদের সরে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পর্যটকদের উপরেও জারি করা হয়েছে বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা। পরিস্থিতি বিবেচনা করে বি-এড এবং স্নাতকোত্তর শ্রেণির সমস্ত পরীক্ষা আপাতত বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে মাত্র কয়েকটা দিনেই হিমাচল ও উত্তরাখণ্ডের জনজীবন কার্যত অচল করে দিয়েছে আকস্মিক এই মেঘভাঙা বৃষ্টি ও হড়পা বানে।
আরও পড়ুন: বৃষ্টিতে, মৃত্যুতে ভেসে যাচ্ছে হিমাচল! ভারতের পাহাড় কি ধ্বংসের মুখে?
লাগাতার প্লাস্টিক ব্যবহার, গাছ কেটে ফেলার ফলে ক্রমশ বেড়েছে বিশ্ব উষ্ণায়ন। যদিও 'গ্লোবাল ওয়ার্মিং' শব্দটাতেই গোড়াতে আমল দিতে চাননি বিশ্বের তাবড় নেতারা। বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে রোজ একটু একটু করে গলে গিয়েছে হিমবাহ। বিশ্ব উষ্ণায়ণের ফলে রোজ একটু একটু করে গলে গিয়েছে হিমবাহ। বেড়েছে সমুদ্রের জলস্তর। আর তার মাশুলই কি এভাবে মিলছে হাতেনাতে। প্রতিশোধ নিচ্ছে প্রকৃতি। তাকে নষ্ট করার, শ্বাসবায়ুকে ক্রমাগত ফুরিয়ে যাওয়ার বদলা নিচ্ছে সর্বশক্তিমান। কিছুদিন আগেই প্রবল বৃষ্টিতে ভেসেছিল দিল্লি, আগ্রা-সহ উত্তর ভারতের একাধিক রাজ্য। যমুনা নদীর জলস্তর এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে তা ছুঁয়ে ফেলে তাজমহলের পাঁচিল। ৪৫ বছরে প্রথম বার। তার স্মৃতি ফিকে হতে না হতেই ফের প্রবল প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে হিমাচল, উত্তরাখণ্ড-সহ উত্তরভারতের একাধিক পার্বত্য এলাকা। অচিরেই যার ছায়া পড়তে চলেছে পঞ্জাব, হরিয়ানার মতো রাজ্যগুলিতেও।