আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বড় জালিয়াতির অভিযোগ হিন্ডেনবার্গের, কীভাবে করা হয় এই রিসার্চ?
Hindenburg Research about Adani Group : বহু বছর ধরেই অভাবনীয় স্টক ম্যানিপুলেশন এবং অ্যাকাউন্টিং জালিয়াতিতে জড়িত আদানি গোষ্ঠী, জানিয়েছে হিন্ডেনবার্গ।
ভারতের অর্থনৈতিক পরিকাঠামোয় উল্লেখযোগ্য নাম ‘আদানি গোষ্ঠী’। গোটা দেশ জুড়ে তো বটেই এমনকী বিদেশেও প্রচুর শেয়ার তাদের। সেই আদানি গোষ্ঠীর ঘাড়েই নাকি বিপুল ঋণের বোঝা, এরকমই খবর প্রকাশ্যে এসেছে সম্প্রতি। এখানেই শেষ নয়, অ্যাকাউন্টিংয়েও সমস্যা রয়েছে উক্ত গোষ্ঠীর, এমনটাই জানা গিয়েছে। আদানি গ্রুপের সংস্থায় ‘শর্ট পজিশনে’ বাজি ধরেছে মার্কিন সংস্থা হিন্ডেনবার্গ। তাদের নয়া রিসার্চেই অভিযোগের তীর উঠেছে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। কিন্তু কী এই হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ? কীভাবেই বা কাজ করে এই সংস্থা?
এক কথায় বলতে গেলে, হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ একটি বিনিয়োগ গবেষণা সংস্থা। তাদের মূল লক্ষ্য হল শর্ট-সেলিংয়কে কাজে লাগিয়ে মুনাফা করা। এই মার্কিন সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা নাথান অ্যান্ডারসন। সংস্থার দফতর নিউ ইয়র্কে। হিন্ডেনবার্গ নামটি এসেছে মূলত ১৯৩৭ সালে মার্কিন বাজারে ঘটে যাওয়া এক বিখ্যাত আর্থিক কেলেঙ্কারি থেকে। 'হিন্ডেনবার্গ কাণ্ড'-র সূত্র ধরেই নিজের সংস্থার এরূপ নাম দিয়েছেন প্রতিষ্ঠাতা নাথান। এই সংস্থার লক্ষ্য, বিশ্বের যে কোনও প্রান্তে বিভিন্ন লগ্নীকারি যে সমস্ত সংস্থা রয়েছে তাদের লেনদেনের হিসেবে কোথাও কোনও রকম ফাঁক ফোকর থাকলে সেগুলি খুঁজে বের করা। পাশাপাশি আগে থেকেই বিপর্যয়ের সম্ভাবনা আঁচ করে সতর্ক করা।
আরও পড়ুন - মাদার টেরেসা: কতটা আলো আর কতটা কালো? উন্মোচিত সবটা
এহেন সংস্থার রিপোর্ট ঘিরে যে কোনও বড় বর সংস্থাই চিন্তায় থাকে, সেটাই স্বাভাবিক। সম্প্রতি এদের রিপোর্টেই অভিযোগের তীর সরাসরি আদানি গোষ্ঠীর দিকে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, আদানি গ্রুপ ‘বহু বছর ধরেই অভাবনীয় স্টক ম্যানিপুলেশন এবং অ্যাকাউন্টিং জালিয়াতিতে জড়িত।’ যদিও এই অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করে আদানি গোষ্ঠী জানিয়েছে, ইচ্ছাকৃত আদানি গোষ্ঠীকে কোণঠাসা করার জন্যই এরকম কাজ করছে মার্কিন সংস্থা। গৌতম আদানির গোষ্ঠী রবিবার হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের করা চাঞ্চল্যকর অভিযোগকে খারিজ করেছে। পাল্টা ৪১৩ পাটার একটি জবাবি রিপোর্টে আদানি গ্রুপ বলেছে যে আর্থিক লাভের অনুমতি পেতেই এই মিথ্যাচার করেছে মার্কিন সংস্থাটি। পাশাপাশি ভারতের জাতীয়তাবাদ উস্কে দিয়েছে তারা বলেছে, এই আক্রমণ সরাসরি ভারত, ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা, অখণ্ডতা এবং গুণমান এবং ভারতের বৃদ্ধির গল্প এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষার উপর আক্রমণ। বাদ, বিবাদ এখানেই শেষ হয়নি। আবারও পাল্টা জবাব দিয়েছে মার্কিন সংস্থা। তাদের অকাট্য দাবি, ‘জাতীয়তাবাদ দিয়ে জালিয়াতি ঢাকা যায় না।’, তাই রিপোর্ট নিয়ে কোনও অসংগতি যদি আদানিদের মনে হয়, তারা যেন সরাসরি কোর্টের সাহায্য নিয়ে এই অভিযোগ খারিজ করে।
Our Reply To Adani:
— Hindenburg Research (@HindenburgRes) January 30, 2023
Fraud Cannot Be Obfuscated By Nationalism Or A Bloated Response That Ignores Every Key Allegation We Raisedhttps://t.co/ohNAX90BDf
এদিকে রিসার্চের একটি রিপোর্ট সামনে আসার সঙ্গে সঙ্গেই তুমুল পতন হয়েছে আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারে। এর আগে ২০২০ সালে নিকোলার রিপোর্ট প্রকাশের পরপরই সংস্থার আসল ছবি উঠে আসে। কার্যত বিনা ব্যবসাতেই হাজার হাজার কোটি টাকার শেয়ার দর দাঁড় করিয়েছিল নিকোলা। হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টে তা জানাজানি হতেই বিপুল পতন হয় নিকোলার শেয়ারে। ফাঁস হয় নিকোলা নামের ওই EV সংস্থার মিথ্যা ব্যবসা। বর্তমানে কার্যত কোনও পাত্তাই নেই নিকোলার। ঠিক একইভাবে এবারের তীর আদানি গোষ্ঠীর দিকে। তাহলে কি নিকোলার মতো একই দুঃসময়ের পথে এগোতে চলেছে আদানি গোষ্ঠীও। এই উত্তর অবশ্য সময়ই দেবে। তবে এই রিপোর্টের যে জোর আছে, তার প্রমাণ মিলেছে ইতিমধ্যেই। আদানি গোষ্ঠীর হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের রিপোর্ট ভুয়ো বলে জানিয়েও আদতে কোনও লাভ হয়নি আদানিদের। মার্কিন সংস্থা তাদের অবস্থানে অনড়। বরং এর জেরে বর্তমানে টালমাটাল অবস্থায় রয়েছে আদানি গ্রুপের প্রায় সাতটি সংস্থার শেয়ার।