ঘুরে বেড়াত ক্যাঙারু থেকে কালো চিতাবাঘ! কলকাতার কাছেই গড়ে উঠেছিল এশিয়ার প্রথম চিড়িয়াখানা

একসময় কলকাতা থেকে অল্প দূরের এই বারাকপুরেই ছিল হরিণ-বাঘ-সিংহ-ক্যাঙারু-ক্যাঙারু, এমনকী, কালো চিতাবাঘের অবাধ ঘোরাফেরা।

ডিসেম্বরের সকাল, সামনেই বড়দিন । প্রভু যিশুর জন্মদিনের আনন্দে মেতে উঠবে শহর কলকাতা। সক্কাল সক্কাল ঘরের মধ্যে মিষ্টি রোদের আনাগোনা ঘুম ভাঙিয়ে দিল টুপুরের। জানলার বাইরে চোখ পড়তেই টুপুরের মনে হলো, সুয্যিমামা যেন একগাল হেসে 'গুড মর্নিং' বলছে তাকে। না, অন্যান্য ছুটির দিনে এত তাড়াতাড়ি ঘুম ভাঙার কোনও চান্স নেই টুপুরের। কিন্তু আজকের দিনটা অন্যরকম, অন্যান্য দিনের থেকে একটু হলেও আলাদা। টুপুর আজ বাবা-মার হাত ধরে যাবে চিড়িয়াখানার বাঘ-সিংহের সঙ্গে আলাপ জমাতে। চিড়িয়াখানা দেখতে যাওয়ার কথা শুনে টুপুর তো সঙ্গে সঙ্গে এক পায়ে রাজি। "আচ্ছা বাঘটার সামনে যখন মানুষগুলো যায় তখন তাদের ভয় করে না?, বাঘটাকে যে খাবার খাওয়ায়, সে কি ওর খাঁচার ভিতর গিয়ে ওকে খাবার দিয়ে আসে?" অথবা "সিংহটার তার বাচ্চাগুলোর জন্য মন খারাপ করে না?"- এমন হাজার প্রশ্নে টুপুর বিরক্ত করে ফেলেছে বাবা-মাকে।

কাল রাতে বাপি টুপুরকে বলছিল চিড়িয়াখানার গল্প। এই যে আজকের আলিপুর চিড়িয়াখানা, এর বহু আগেই কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে গড়ে উঠেছিল অন্য আরেকটি চিড়িয়াখানা। তবে তা কলকাতায় নয়, বারাকপুরে। হ্যাঁ, একসময় কলকাতা থেকে অল্প দূরের এই বারাকপুরেই ছিল হরিণ-বাঘ-সিংহ-ক্যাঙারু-ক্যাঙারু, এমনকী, কালো চিতাবাঘের অবাধ ঘোরাফেরা। বারাকপুরের চিড়িয়ামোড় নামক জায়গায় ইংরেজ বড়লাট লর্ড ওয়েলেসলির চেষ্টায় গড়ে উঠেছিল এই চিড়িয়াখানা। আজ টুপুরের চোখে ঘুমের চিহ্নমাত্র নেই, অন্যান্য দিন স্কুল থেকে ফেরার পর রাত ন'টার মধ্যে ঘুমের দেশে পৌঁছে যায় টুপুর। তবে আজ রাতে বাপির পাশ থেকে নট নড়নচড়ন। বাবাও হাসিমুখে মিটিয়ে চলে চিড়িয়াখানার গল্প শোনার আবদার।

"তারপর কী হলো বাপি?" মেয়ের আদুরে গলায় প্রশ্ন শুনে আবার বলতে শুরু করে সমরেশ- লর্ড ওয়েলেসলির পরে লর্ড হেস্টিংস এই চিড়িয়াখানায় গড়ে তুলেছিলেন দু'টি পক্ষীশালা। পক্ষীশালা মানে বুঝতে পারছিস তো টুপুর? শুধু পাখিরা থাকে যেখানে, পাখিদের ঘর। কিন্তু এরপরের বড়লাট বেন্টিঙ্ক এই বাঘ, সিংহ, গন্ডার, গাধা, বিভিন্ন পাখি- এদের একদম ভালবাসতেন না। "তাহলে তখন সেই বাঘ-সিংহগুলোর কি হলো?"- টুপুরের বাঘ-সিংহদে'র নিয়ে ভাবনা দেখে হেসে ফেলল সমরেশ। তারপর সেই বাঘ-সিংহদের বিভিন্ন জায়গায় বিলিয়ে দিতে শুরু করলেন বেন্টিঙ্ক।

আরও পড়ুন: বেলেঘাটা থেকে এন্টালি, হেদুয়া থেকে জোড়াবাগান, কীভাবে এল কলকাতার এসব এলাকার নাম

এরপর লর্ড অকল্যান্ড আবার চিড়িয়াখানার হারানো গৌরব কিছুটা হলেও ফিরিয়ে আনেন। ১৮৩৬-'৪২- এই ছয় বছরে বহু নতুন পশুপাখি এনে চিড়িয়াখানাটিকে নতুন করে সাজিয়ে ফেললেন লর্ড অকল্যান্ড এবং তার দুই বোন। অকল্যান্ডের এক বোনের নাম ছিল এমিলি। তার লেখা থেকে জানা যায়, বেবুন, গন্ডার, ভাল্লুকের মতো প্রাণী ছিলই চিড়িয়াখানায়। ছিল ৩০০ বছর বয়সি এক কচ্ছপ। যার নাম ছিল অদ্বৈত। শেষ পর্যন্ত কচ্ছপটি মারা যায় ২০০৬ সালে।

টুপুরকে আরও জানায় সমরেশ, বারাকপুরের এই চিড়িয়াখানাই এশিয়ার প্রথম চিড়িয়াখানা, এমনকি বিশ্বের চতুর্থ। তবে যত্নের অভাবে এখন নষ্ট হয়ে গেছে বারাকপুরের সেই চিড়িয়াখানা। লর্ড লিটনের সময় ১৮৭৬ সালে ব্যারাকপুর থেকে আলিপুরে চলে আসে এই চিড়িয়াখানা। তারপর থেকে চিড়িয়াখানা বলতে, আলিপুরকেই চিনল সকলে।

তথ্য সূত্র:
http://www.westbengalguide.com/popular-places-kolkata/kolkata-alipore-zoo-history-travel-guide-images-route-map.html

More Articles