৭০ বছরের প্রাচীন, কেন এত বিখ্যাত হলো অ্যানিমালের জামালকুদু গানটি?

History of Jamal Jamaloo song : ববি দেওল নিজের তৃতীয় বিয়ের উৎসবে নাচছেন, মাথায় মদের গ্লাস, ঠোঁটে সিগারেট। নেপথ্যে জামাল জামালু গানটি।

সিনেমা যে কেবলই বিনোদন নয়, দর্শককে যে কেবল বিনোদনের নামে যা খুশি পরিবেশন করা যাবে না তা প্রমাণ করেছে সদ্য মুক্তি পাওয়া সিনেমা অ্যানিমাল। হ্যাঁ, ব্যবসার পরিসংখ্যান দিয়ে অনেকেই বলতে পারেন সংখ্যাগরিষ্ঠেরই সিনেমাটি পছন্দ হয়েছে। পরিসংখ্যান সততই সত্য বলে না। সিনেমায় রণবীর কাপুর, ববি দেওল প্রশংসিত হয়েছেন। প্রশংসিত হয়েছে আরও একটি বিষয়, এই সিনেমার একটি দৃশ্য, যাকে জনপ্রিয় করে তোলার নেপথ্যে রয়েছে একটি গান। জামাল জামালু গানটির সুর সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। গানের কথা না বুঝলেও গানের সুর যে মানুষকে ভাষা-দেশ ভেদেও মাতিয়ে দিতে পারে গানটি তারই প্রমাণ। গানটি সোশ্যাল মিডিয়াতে জনপ্রিয় হয়েছে ববি দেওলের 'এন্ট্রি সং' হিসেবে। আসলে গানটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক সুন্দর ইতিহাস। জামাল জামালু গানটি আসলে ইরানের এক সঙ্গীত।

গানটির ইতিহাসের কথায় আসার আগে সিনেমায় এই গানটির প্রয়োগ মনে করা দরকার। রণবীর কাপুর হিংসায় উন্মাদ। শরীর জবাব দিয়েছে, বিধ্বস্ত, তবু প্রতিশোধ নিতে উদগ্রীব। এই মুহূর্তে পর্দায় 'রণবিজয়' রণবীরের মূল শত্তুর আব্রার অর্থাৎ ববি দেওলের আবির্ভাব এক উৎসবের মেজাজে। ববি দেওলের তৃতীয় বিয়ের দৃশ্য। আগের দুই স্ত্রী এবং তাদের আট সন্তান উপস্থিত। ববি দেওল নিজের তৃতীয় বিয়ের উৎসবে নাচছেন, মাথায় মদের গ্লাস, ঠোঁটে সিগারেট। নেপথ্যে জামাল জামালু গানটি। তারপর গান ও নাচ ও আনন্দের মেজাজের পিণ্ডি চটকে দেয় এক ইচ্ছাকৃতভাবে বীভৎস করে তোলা হত্যাদৃশ্য।

 

আরও পড়ুন- অ্যানিমাল: এমন জান্তব সিনেমা কি শুধুই বিনোদন? কাদের জন্য?

২০২৩ সালের হিন্দি সিনেমায় ব্যবহৃত হলেও আসলে গানটির শিকড় লুকিয়ে আছে ইরানের প্রাক-বিপ্লব ইতিহাসে। জামাল জামালু ইরানি সঙ্গীতের সমৃদ্ধ এক উদাহরণ। গানটিতে সুরের চলনই বলে দেয় এই গান আনন্দের, যেন সদ্য পাথরের ভাঁজ থেকে ছাড়া পাওয়া এক খরস্রোতা। নিজের ছন্দে বহমান। জামাল জামালু আসলে ইরানের গভীর সাংস্কৃতিক প্রতীক। ফার্সি সঙ্গীতের দুর্দান্ত সুর জামাল জামালুকে দেশ-কাল পার করে অমর করে রেখেছে।

গানের শিকড় খুঁজতে গেলে যেতে হবে ইরানি লোকসংগীতের কাছে। জামাল জামালু আসলে আনন্দের এক সিম্ফনি। কাব্যিক সূক্ষ্মতায় ভরা কথাগুলি যেন আনন্দের চাঁদোয়া টাঙিয়ে দেয় বিশাল এক প্রান্তরে। যার নীচে জীবনের উদযাপনের বিপুল আয়োজন। প্রতিটি সুর, প্রতিটি কথার বাঁকে ইরানের ঐতিহ্যের প্রকাশ। 'জামাল’ শব্দটির অর্থ ফার্সি ভাষায় সৌন্দর্য। ইরানের সমাজের বহুমুখী প্রকৃতির মতোই যে সৌন্দর্য বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের, সম্প্রীতির কথা বলে। মূল সঙ্গীতের সঙ্গে সন্তুর এবং ড্যাফের মতো ঐতিহ্যবাহী ফার্সি যন্ত্রই বাজানো হয়।

আরও পড়ুন- অ্যানিমাল: এমন জান্তব সিনেমা কি শুধুই বিনোদন? কাদের জন্য?

দক্ষিণ ইরানের ঐতিহ্যবাহী বান্দর সঙ্গীত জামাল জামালু। প্রথম একটি মেয়েদের দল এই গানটি গেয়েছিল। গানটির ভাবগত তর্জমা করলে দাঁড়ায় এক প্রেমিক/প্রেমিকার প্রতি অন্যের নিবিড় ভালোবাসা। এক বিদায়ী প্রেমিকার প্রতি এক প্রেমিকের ভালোবাসার প্রকাশ। ইরানি কবি বিজন স্মান্দারের একটি কবিতা থেকেই গানটির জন্ম। বারে বারে যে পংক্তি ফিরে আসে, অর্থাৎ জামাল জাম্লেক জামালু জামাল কুদু, এই অংশটির অর্থ ও আমার প্রিয়তমা, আমার ভালোবাসা, আমার আদরের ভালোবাসা। এই অংশেই বিখ্যাত লায়লা-মজনুর প্রেমের উল্লেখও মেলে। আহয় সিয়াহ জাঙ্গি, দেলামো নাকুন খুন, ভওয় তো রাফতি কোজা, মানাম চো মজনুন- আসলে প্রেমে মজনুর মতো পাগল হওয়ারই উল্লেখ।

মূলত খারাজেমি গার্লস হাই স্কুলের একটি গানের দল শিরাজি কোয়ার গানটি প্রথম তৈরি করে। এই গানের সুর ১৯৫০-এর দশকে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়। ইরানের বিবাহ উৎসব এবং অন্যান্য আনন্দ উদযাপনের মুহূর্তে এই গানটি অত্যন্ত সমাদৃত।

More Articles