মাত্র ২২ বছর বয়সে শহিদ বিজয়ন্ত! ছেলের স্মরণে প্রতি বছর কার্গিল যাত্রা বাবার
Captain Vijayant Thapar Kargil: যুদ্ধ ট্যাঙ্কের নামানুসারে তাঁর নামকরণ করা হয়েছিল "বিজয়ন্ত"।
ছেলের স্মরণে প্রতি বছর কার্গিল যান বাবা। মাত্র ২২ বছর বয়সে কার্গিল যুদ্ধে দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন বিজয়ন্ত থাপার। ছেলেকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাখতেই প্রতি বছর দ্রাসে যান শহিদ ক্যাপ্টেনের গর্বিত বাবা। সম্প্রতি সমাজমধ্যমে ভাইরাল হয়েছে তাঁর ছবি। যেখানে তাঁকে ইন্দিরা গান্ধী ইন্টারন্যাশনাল এইয়ারপোর্টে একটি ট্রলি এবং দু'টি সুটকেসসহ দেখা যাচ্ছে। তিনি হলেন কার্গিল যুদ্ধে শহিদ বিজয়ন্ত থাপার বাবা কর্নেল বীরেন্দর থাপার। ছুটি কাটাতে বা বিজনেস ট্রিপের জন্য নয়। ছেলেকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাখতে তাঁর বিমান যাত্রা।
১৯৯৯ সালের মে-জুন মাসে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কার্গিল যুদ্ধ হয়। টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এটিই ছিল ভারতের প্রথম যুদ্ধ। এই যুদ্ধে ৫২৭ জন ভারতীয় সৈন্য শহিদ হন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন ১২ রাজপুতানা রাইফেলসের একজন তরুণ অফিসার, বীরেন্দ্র থাপারের পুত্র ক্যাপ্টেন বিজয়ন্ত থাপার।
১৯৭৬ সালের ২৯ ডিসেম্বর পাঞ্জাবের নাঙ্গালে জন্ম ক্যাপ্টেন বিজয়ন্ত থাপারের। তিন প্রজন্মের সেনা পরিবারের সন্তান তিনি। যুদ্ধ ট্যাঙ্কের নামানুসারে তাঁর নামকরণ করা হয়েছিল "বিজয়ন্ত"। ১৯৯৮ সালের ডিসেম্বরে ইন্ডিয়ান মিলিটারি আকাডেমি থেকে স্নাতক হন তিনি এবং ১২ রাজপুতানা রাইফেলসে যোগদান করেন।
১৯৯৯ সালের ২৫ মে, তাঁর ইউনিটকে যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো হয়, তাঁদের দায়িত্ব ছিল দ্রাস-কারগিল-বাটালিক চূড়া দখলকারী পাকিস্তানি সৈন্যদের হটানো। এক সপ্তাহ পরই ক্যাপ্টেন থাপারের অভিযান ছিল থ্রি পিম্পলস, নোল এবং লোন হিলে আক্রমণ। তাঁর আক্রমণকারী দলের সদস্যসংখ্যা ছিল ১২ জন। এটিই ছিল তাঁর শেষ অভিযান।১৯৯৯ সালের ২৯ জুন দ্রাস সাব-সেক্টরের নোল কমপ্লেক্স দখলের অভিযানে মাত্র ২২ বছর বয়সে শহিদ হন বিজয়ন্ত। এই বীরত্বের জন্য মরণোত্তর বীরচক্র প্রদান করা হয় তাঁকে।
শেষ অভিযানে যাওয়ার আগে, পরিবারকে একটি বিদায়ী চিঠি লিখেছিলেন ক্যাপ্টেন থাপার। যেখানে তিনি লিখেছিলেন,
“প্রিয় বাবা মা ও ঠাকুমা, তোমরা যখন এই চিঠি পাবে, তখন আমি আকাশ থেকে অপ্সরাদের আতিথেয়তা উপভোগ করতে করতে তোমাদের সকলকে দেখব।” তিনি আরও লেখেন, “আমার কোনো অনুশোচনা নেই। এমনকি আমি যদি আবারও মানুষ হয়ে জন্মাই, আমি সেনাবাহিনীতেই যোগ দেব এবং দেশের জন্য লড়ব। তোমাদের ভবিষ্যত সুরক্ষিত করতে ভারতীয় সেনা কোথায় লড়াই করেছিল, দয়া করে এসে দেখে যেও।”
তারপর থেকেই প্রতিবছর এই সময় দ্রাস ভ্রমণে যান বিজয়ন্ত থাপারের বাবা কর্নেল বীরেন্দর থাপার। ছেলের জীবনী নিয়ে একটি বইও লেখেন তিনি। আরেক কার্গিল শহিদের মেয়ে নেহা দ্বিবেদীর সাথে যৌথভাবে লিখেছেন সেই বই, যার নাম “বিজয়ন্ত অ্যাট কার্গিল: দ্য বায়োগ্রাফি অফ আ ওয়ার হিরো।”
বইটিতে বিজয়ন্তের শৈশব থেকে ভারতীয় সামরিক অ্যাকাডেমি পর্যন্ত, তাঁর জীবনের নানান কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে। ক্যাপ্টেন বিজয়ন্ত তাঁর পরিবারকে একটি অনাথ আশ্রমে অর্থ দান করতে এবং রুকসানা নামে একটি মেয়েকে প্রতি মাসে ৫০ টাকা করে দিতে বলেছিলেন। এমনকি তিনি তাঁর অঙ্গদান করার জন্যও বলেছিলেন।
দ্রাস যাত্রার সময় আইজিআই এয়ারপোর্টে বিজয়ন্তের বাবার ছবি সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়েছে সমাজমধ্যমে। যা দেখে আবেগপ্রবণ হয়েছেন নেটিজেনরা। পহেলগাঁও হামলা ও 'অপরেশন সিঁদুর' নিয়ে কর্নেল বীরেন্দর থাপার বলেন, "আমাদের সৈন্যদের জন্য গর্বিত, যাঁরা শুধু দেশকে রক্ষা করেনি, বোনের সিঁদুরের জন্য তাঁদের জীবনও উৎসর্গ করেছে।"