৩৫ হাজার আসনে ২ লাখ দর্শক! আরসিবি ঘটনার দায় কার?
Royal Challengers Bengaluru: চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার দর্শকের আসন রয়েছে। পুলিশের ধারণা ছিল ঐদিন এক লাখের বেশি মানুষের জমায়েত হবে না। কিন্তু এর চেয়ে অনেক বেশি ভিড় হয়। কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারাম...
আরসিবি (রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু)-র ঝুলিতে আইপিএল টুর্নামেন্টের ট্রফি এসেছে ১৮ বছর পর। জয়ের উদযাপনে আইপিএল (ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ)-র ইতিহাসে মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী থাকলো বেঙ্গালুরু। বিজয় উদযাপনের সময় (৪ জুন, বুধবার) পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় ১১ জনের। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৩৩ জন। এই ঘটনার পর থেকেই প্রশাসন ও তার সিদ্ধান্ত নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন উঠছে। এই ঘটনায় দায়ী কে? সরকার, পুলিশ নাকি কর্নাটক ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন কাদের অবহেলায় এই ঘটনা ঘটলো?
মঙ্গলবার ফাইনাল ম্যাচ শেষ হতেই আরসিবি-র জয়ের উদযাপন শুরু হয়ে গিয়েছিল। সেদিন মধ্যরাত থেকেই আতসবাজি ফাটানো হয়।উদযাপনে মেতে ওঠে শহরবাসী। রাত তিনটে পর্যন্ত পুলিশ বাহিনী টহল দিয়েছে। বুধবার সকাল সাতটায় আরসিবি তাদের অফিসিয়াল এক্স হ্যান্ডেল থেকে জানায়, বেঙ্গালুরু বিধানসভা থেকে চিন্নস্বামী স্টেডিয়াম পর্যন্ত বিজয় মিছিল হবে। সেখানে এও জানানো হয়েছিল যে, এর জন্য বিনামূল্যে পাস ডাউনলোড করা যাবে। দুপুর তিনটে চৌদ্দ নাগাদ রোড শোয়ের ঘোষণা করা হয়।তারা জানিয়ে দিয়েছিল, পুলিশ প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সব নির্দেশ মেনে চলার জন্য।
চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার দর্শকের আসন রয়েছে। পুলিশের ধারণা ছিল ঐদিন এক লাখের বেশি মানুষের জমায়েত হবে না। কিন্তু এর চেয়ে অনেক বেশি ভিড় হয়। কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া জানিয়েছেন, সেদিন ওখানে ২ লক্ষ মানুষ এসেছিলেন। এই দিন বিধানসভায় আইপিএলে জয়ী টিম আরসিবির খেলোয়াড়দের সংবর্ধনা দেন রাজ্যপাল থাওয়ার চাঁদ গেহোলোট, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া এবং উপমুখ্যমন্ত্রী ডি কে শিবকুমার। সময় গড়াতেই স্টেডিয়ামের গেটে ভিড় বাড়তে থাকে। একটা সময় ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়ে যায়। এতে গেটের বাইরে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। অনেকে পড়েও যান এবং পদপিষ্ঠ হন। ভিড় সামাল দিতে পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ বিবিসি-কে বলেন, যখন দুর্ঘটনা ঘটে স্টেডিয়ামের গেট তখন "খোলা হয়নি, এত লোক ছিল এবং তারা একটা ছোট গেট দিয়ে ঢোকার চেষ্টা করছিল। সেই সময় পদপৃষ্ঠ হওয়ার ঘটনা ঘটে।" কর্ণাটকের সাবেক ডিজিপি এসটি রমেশ বিবিসি হিন্দিকে বলেন, "শেষ ওভার পর্যন্ত আমরা জানতাম না কে ট্রফি জিতবে। চৌঠা জুন বেঙ্গালুরুর উদ্দেশে টিম (আরসিবি) রওনা দেয়।" তাঁর কথায়, "এই পরিস্থিতিতে শহরের পুলিশের কাছে কি সব ব্যবস্থা করার জন্য পর্যাপ্ত সময় ছিল? মনে রাখতে হবে, এটা কিন্তু মোটেই সহজ কাজ নয়।" তিনি জানিয়েছেন, এই ধরনের উদযাপনের ক্ষেত্রে দেখতে হয় কোন কোন জায়গা থেকে মানুষ আসতে পারে। ওই সময়ে কীভাবে ভিড় সামাল দেওয়া হবে এই বিষয়টিও নজরে রাখাটা খুবই জরুরি। যাতে কোনো অপরাধ না ঘটে তাও নিশ্চিত করতে হয়। ভিড়ের মধ্যে নারীদের সঙ্গে যেন কোনো অপরাধ না হয়, সে বিষয়টিও খেয়াল রাখা দরকার। আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, কতজন নিরাপত্তা বাহিনী কোথায় কোথায় মোতায়েন করা হবে।
ওই সাবেক কর্মকর্তার কথায়, "আইনশৃঙ্খলারও তো একটা দিক আছে। পুলিশ কি সবকিছু পরিকল্পনা করার জন্য যথেষ্ট সময় পেয়েছিল? এত কম সময়ের মধ্যে পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করার অর্থ আপনাকে প্রতিবেশী জেলা থেকেও পুলিশ বাহিনী আনাতে হতে পারে।" তিনি আরও বলেন, "নগর পুলিশের হাতে কি এত কিছু করার সময় ছিল? কেউ কিন্তু এগুলোর কিছুই জানে না।"
সকাল ৭ টার মধ্যেই আরাসিবি কার কাছ থেকে অনুমতি পেল- এই প্রশ্নের এখনও স্পষ্ট উত্তর পাওয়া যায়নি। আরও প্রশ্ন উঠছে যে বুধবার দুপুরে যখন কর্নাটকের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জি পরমেশ্বরের সভাপতিত্বে বৈঠক হয়েছিল তখন পুলিশ তরফে কেন জানানো হয়নি এত কম সময়ে বিজয় মিছিলের জন্য সবকিছু ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়।
পুলিশ কর্মকর্তাদের পক্ষে কি প্রশাসনের ক্ষমতাবানদের বোঝানো সম্ভব হয়নি? কর্ণাটকের সাবেক ডিজিপি এসটি রমেশ বলেন, "আজ থেকে দু'দশক আগে পর্যন্ত সম্ভব হলেও, আমি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে পারি আজ গোটা দেশ কোথাও কোনো মুখ্যমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে এটা স্পষ্ট করে বলা সম্ভব নয় যে অমুক কাজ করা তাদের পক্ষে অসম্ভব।" নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা বিবিসি হিন্দি-কে বলেছেন, "এটা একটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছিল। এটা (অনুষ্ঠানের অনুমতি দেওয়া) পুলিশের সিদ্ধান্ত ছিল না।"
তবে কর্নাটকের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জি পরমেশ্বর সাংবাদিকদের বলেছেন, গোটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল কেএসসিএ (কর্নাটক স্টেট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন) ও আরসিবি। সরকার শুধু অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কর্নাটকের উপমুখ্যমন্ত্রী ডি কে শিবকুমার আরসিবি-কে স্বাগত জানাতে এইচএএল বিমানবন্দরে যেতে হয়েছিল কেন?
অনেকেই অভিযোগ করছেন, বিনামূল্যে পাশ দেওয়ার কারণে স্টেডিয়ামের গেটে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছিল। ৩২ হাজার আসন পূরণ হয়ে যাওয়ার পর ভেতরেও কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছিল না। এতেই উপচে ভিড়ে মানুষ পদপিষ্ট হয়ে মারা যান।
উল্লেখ্য, কর্নাটক সরকার এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। বেঙ্গালুরুর পুলিশদের কয়েকজনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। আরসিবি-র যাঁরা এই অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তাদেরও আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। আরসিবির মার্কেটিং হেড নিখিল সোসালেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিজয় উদযাপনের দায়িত্বে থাকা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থা ডিএনএ এন্টারটেনমেন্ট নেটওয়ার্ক প্রাইভেট লিমিটেডের তিন কর্মীকেও আটক করা হয়েছে। বেঙ্গালুরুর পুলিশ কমিশনারকেও সাসপেন্ড করা হয়েছিল। অন্যদিকে নেট দুনিয়ায়, পদপিষ্টের ঘটনায় বিরাট কোহলিকে গ্রেফতারের দাবি উঠছে।
দোষীদের বিরুদ্ধে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া হয় কিনা এখন তাই দেখার।