ইউটিউব দেখে গুলি চালানোর শিক্ষা! বাবা সিদ্দিকীকে যেভাবে খুনের পরিকল্পনা করা হলো
Baba Siddique Murder: শ্যুটাররা ইউটিউব টিউটোরিয়াল দেখে বন্দুক চালানো শিখেছে। হত্যার আগে অভিযুক্তরা মুম্বইয়ের কুরলা এলাকায় একটি বাড়ি ভাড়া নিয়েছিল।
কোন বন্দুক ব্যবহার হবে, খুন করে কীভাবে পালানো হবে এই নিয়ে নিখুঁত পরিকল্পনা ছিল দুষ্কৃতীদের। যদিও নিখুঁত হয়নি শেষ অবধি। মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মন্ত্রী বাবা সিদ্দিকীর হত্যাকাণ্ডে ধরা পড়েছে চারজন। এই দুষ্কৃতীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এই অপারেশনের পিছনে পরিকল্পনার বিশদ বিবরণ প্রকাশ্যে এসেছে। ব্যাপক পরিমাণে গুলি সঙ্গে রাখা, ইউটিউব ভিডিও দেখে আগ্নেয়াস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ এবং খুন করে পালানোর পরিকল্পনা দীর্ঘদিন ধরেই করছিল দুষ্কৃতীরা। এখনও পর্যন্ত যে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে হরিয়ানার বাসিন্দা গুরমাইল বলজিৎ সিং (২৩), উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা ধর্মরাজ রাজেশ কাশ্যপ (১৯), এই দুইজনই শ্যুটার। সঙ্গে আছে হরিশকুমার বালাক্রম নিষাদ (২৩), এবং প্রবীণ লোনকার, পুনের বাসিন্দা। আরেক অভিযুক্ত শিবকুমার গৌতম এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে।
পুলিশ বলছে, বাবা সিদ্দিকীর হত্যায় অভিযুক্ত গুরমাইল সিং এবং ধর্মরাজ কাশ্যপের কাছে ৬৫টি বুলেট ছিল। এত গুলি সঙ্গে রাখার কারণ, যাতে খুন করতে গিয়ে কোনওভাবেই গুলি ফুরিয়ে না যায়। এই গুলির মধ্যে ছয়টি গুলি করা হয়েছিল ১২ অক্টোবর রাতে। বাবা সিদ্দিকী বান্দ্রার নির্মল নগর এলাকায় তাঁর ছেলে জিশান সিদ্দিকীর অফিসের বাইরে গুলিবিদ্ধ হন। অভিযুক্তদের ব্যবহৃত দু'টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ। একটি অস্ট্রিয়ান পিস্তল এবং একটি দেশী পিস্তল৷ এই অস্ত্রগুলির পাশাপাশি, পুলিশ গ্রেফতারের সময় গুরমাইল সিং এবং ধর্মরাজ কাশ্যপের গায়ে আরও ২৮টি টাটকা গুলি খুঁজে পায়। তদন্তকারী দল একটি কালো ব্যাগও আবিষ্কার করেছে। হত্যার স্থান থেকে অল্প দূরেই রাখা ছিল এই কালো ব্যাগ। ওই ব্যাগে তুরস্কে তৈরি ৭.৬২ বোর পিস্তল এবং ৩০টি হুলি ছিল। ওই ব্যাগে দু'টি আধার কার্ডও ছিল। একটি শিবকুমার গৌতমের নামে এবং আরেকটি সুমিত কুমার নামে, যদিও দু'টি কার্ডেই শিবকুমারের ছবি ছিল।
আরও পড়ুন- সলমনকে মারার জন্য জুগিয়েছিল অস্ত্র! পুলিশি নজর এড়িয়ে কীভাবে নিজেকে শেষ করল ধৃত অনুজ?
পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তরা প্রথমে মোটরবাইক ব্যবহার করে হামলার পরিকল্পনা করেছিল। পরিকল্পনা ছিল বন্দুকধারীরা হত্যার লোকেশন পর্যন্ত বাইকে চালিয়ে গিয়ে খুন করবে এবং তারপর দ্রুত বাইক চালিয়েই পালিয়ে যাবে। সন্দেহভাজনদের মধ্যে দু'জনের একটি ট্র্যাফিক দুর্ঘটনার কারণে এই পরিকল্পনা বাতিল করা হয়৷ পরিবর্তে, তিনজন অপরাধী অটোরিকশায় চেপে ক্রাইম সিনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। হত্যার পর দ্রুত পোশাক পাল্টে নেয় তারা।
হরিশকুমার বালাক্রম নিষাদ একটি মোটরবাইক কেনার জন্য ৬০,০০০ টাকা পাঠিয়েছিলেন বলে জানা গেছে। এই টাকা থেকে ৩২,০০০ টাকা দিয়ে একটি সেকেন্ড-হ্যান্ড বাইক কেনার হয়। সেই বাইক চেপেই হত্যা করা হয় বাবা সিদ্দিকীকে।
তবে এই চারজন ও শিবকুমারের বাইরেও বাবা সিদ্দিকীর হত্যার পিছনে আরও অনেক সন্দেহভাজনের জড়িত থাকার কথা সামনে আসছে। এর মধ্যে প্রধান অভিযুক্ত শুভম লোনকার, লরেন্স বিশ্নোই গ্যাংয়ের সদস্য এখনও পলাতক। মুম্বই পুলিশ লোনকারের বিরুদ্ধে লুক আউট সার্কুলার জারি করেছে। সন্দেহ করা হচ্ছে শুভম লোনকার নেপালে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। নেপাল সীমান্তে লোনকারের ছবি ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। হত্যার তিন দিন আগেও শুভম লোনকারকে সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় দেখা গেছে। গত ৯ অক্টোবর তারই ফেসবুক প্রোফাইল থেকে বাবা সিদ্দিকীর হত্যার দায় স্বীকার করা হয়। খুনিদের আর্থিক সহায়তা করার অভিযোগে তার ভাই প্রবীণ লোনকারকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন- জেলে বসেই সিদ্দিকিকে খুনের চক্রান্ত! কে এই লরেন্স বিশ্নোই?
পুলিশ জানিয়েছে, শ্যুটাররা ইউটিউব টিউটোরিয়াল দেখে বন্দুক চালানো শিখেছে। হত্যার আগে অভিযুক্তরা মুম্বইয়ের কুরলা এলাকায় একটি বাড়ি ভাড়া নিয়েছিল। সেখানে তারা অস্ত্র লোডিং, আনলোডিং এবং চালানো প্র্যাক্টিস করত। তদন্তে জানা গেছে, শিবকুমার গৌতম উত্তরপ্রদেশের বিয়ের উদযাপনের সময় গুলি চালানো থেকেই আগ্নেয়াস্ত্র চালানোর অভিজ্ঞতা পেয়েছেন। বিয়েতে তার গুলি চালানোর দক্ষতাকে পিঠ চাপড়ে দিতেন স্থানীয়রা। গৌতম বাবা সিদ্দিকীর হত্যার প্রধান শ্যুটার। শুধু হত্যার পরিকল্পনা নয়, ধর্মরাজ কাশ্যপ এবং গুরমাইল সিংকে বন্দুক পরিচালনার প্রশিক্ষণও দিয়েছিল। এই তিনজনই স্ন্যাপচ্যাট এবং ইনস্টাগ্রামের মতো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলির মাধ্যমে ঘন ঘন যোগাযোগ করত।
উল্লেখ্য, শুভম লোনকারকে এর আগে জানুয়ারিতে মহারাষ্ট্রের আকোলা জেলায় অস্ত্র আইনে গ্রেফতার হয়েছিল। সেবারই দশটিরও বেশি আগ্নেয়াস্ত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়।