এ কলকাতার মধ্যে আছে চৈনিক কলকাতা

Kolkata China Town: চিনা সম্প্রদায়ের দু'টি পুরনো প্যাগোডা কলকাতায় বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে। একটি উত্তর কলকাতার দমদম অঞ্চলে, লেকটাউন সংলগ্ন নস্কর পাড়ায়।

কলকাতার চিনে পাড়া বলতে মূলত দুটো। একটা বৌ বাজারের ফিয়ারস্‌ লেন সংলগ্ন অঞ্চল। মুখে-মুখে আমরা যাকে বলি ছাতাওলা গলি। এখানে অবশ্য ইদানীং চিনা নারী পুরুষের সংখ্যা অনেকটাই কমে গেছে। এই রাস্তা এঁকেবেঁকে চলে গেছে টেরেটি বাজারের দিকে। আমাদের অল্প বয়সে ফিয়ারস্‌ লেনের কাছে দু'টি বিখ্যাত রেস্তোরাঁ ছিল। একটি চিনা খাবারের। নাম ছিল নানকিং। আর অন্যটি ছিল টিবেটিয়ান। তার নাম কুং-গা। একটু বাঁ-দিকে ঘুরে লালবাজার অঞ্চল। সেখানে এখনও বেশ কয়েকটি চিনে মালিকানার জুতোর দোকান দেখা যাবে, যা প্রায় ধর্মতলা মোড় পর্যন্ত বিচ্ছিন্নভাবে চলছে। তবে, দ্বিতীয় আর একটি অঞ্চল আছে চিনা নাগরিকদের। কলকাতার সেই তল্লাটের নামই হল চায়না টাউন। যেমন, বৌবাজার অঞ্চলের একটু আগেই আছে চিনে বাজার। চায়না টাউন ভোজন রসিক বাঙালির এক প্রিয় এলাকা। সারি-সারি উপাদেয় রেস্তোরাঁ। মুখরোচক খাবার এবং আওতার মধ্যে থাকা দামের কারণে এখানে মধ্যবিত্তের নিয়মিত আনাগোনা। 'বেদিং' 'বিগ বস্‌' 'কাফুলোক' 'কিম লিং' এমন অসংখ্য সুস্বাদু খাদ্য বিপণি! ট্যাংরার এই অঞ্চল খুব ঘিঞ্জি, গলিঘুঁজি অপ্রসর, ভিড় এবং অপরিচ্ছন্ন। চায়না টাউন অংশটি তুলনায় খানিকটা পরিষ্কার। তবে, এখনও এই অঞ্চলে গেলে মনে হয়, কলকাতার মধ্যে আমরা নেই। তবে, এর একটা উল্টোদিকও আছে। বাংলা কিশোর-সাহিত্যে আমরা বারংবার দেখতে পাব, চিনে-পল্লীতে নেশা আর অপরাধের আড়ত। একে স্পষ্টতই বিশ-শতকের বাঙালি ভদ্রলোকের 'অপর' নির্মাণ হিসেবেই দেখতে চাইব আমরা। 

যাকে আমি বলছি অপরিচয়, সেই অপরিচিতিতে কল্পনা এবং ঈপ্সার যথেচ্ছ মিশ্রণে তৈরি হয় আজগুবি ঔপনিবেশিক নির্মাণ। এই রোমহর্ষক গল্পগাছা তৈরি করতে না-পারলে আশ্চর্য ঘটনাবলি দাঁড়ায় না। ফলে নীহাররঞ্জন গুপ্ত, স্বপন কুমার, হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ লেখকবৃন্দ চিনে পাড়ার নানা রহস্যে 'রোমাঞ্চ' নির্মাণ করতে সচেষ্ট হলেন। 

কলকাতার চিনে পট্টি নিয়ে প্রশ্ন অনেক। কবে থেকে চিন দেশের নাগরিকবৃন্দ কলকাতায় এসেছেন? এ বিষয়ে অনেক মত আছে। বৌদ্ধ যুগ থেকেই চিনা শ্রমণদের পদচিহ্ন বাংলায় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। হুয়ান চোয়াং, ইৎ সিঙ, সেঙচি — আরও বেশ কয়েকজন। ফা-হিয়েন এবং হুয়ান চোয়াং এই বাংলার তাম্রলিপ্ত বন্দর থেকেই স্বদেশ অভিমুখে যাত্রা করেছিলেন। ইৎ সিঙ বাংলাদেশে আগত ছাপ্পান্নজন চিনা পরিব্রাজকের নাম করেছেন। খ্রিস্টিয় চতুর্থ শতকের গোড়া থেকেই এদের যাতায়াত ছিল। বিনয় ঘোষ জানাচ্ছেন, কলকাতার পুলিশ সুপারিন্টেডেন্ট ১৮৩৭ সালে যে জনগণনা করেন সেখানে শহরের প্রায় সওয়া দু-লক্ষ বসবাসকারীর মধ্যে ৩৬২ জন চিনা নাগরিক ছিলেন। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, চিনা নাগরিকদের যাতায়াত বা বসবাস এ দেশে বা এই শহরে অষ্টাদশ শতক থেকে আজ পর্যন্ত বহমান, কিন্তু কখনই উপনিবেশে বা ক্ষমতাতন্ত্রে তাঁদের স্পৃহা বা অভিনিবেশ লক্ষ করা যায়নি। বরং একটা শান্তিময় সহাবস্থান এবং আত্মপ্রতিষ্ঠাই তাঁদের লক্ষ্য ছিল। ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি 'চিনা বাণিজ্য অধিকার সনদ' প্রাপ্তির ফলে চিনাদের সঙ্গে বন্দরের মাধ্যমে এ শহরের যোগাযোগ তৈরি হয়েছিল। তখন বহু জাহাজ কলকাতায় নানা প্রান্ত থেকে কলকাতায় উপনীত হতো। এইসব জাহাজের খালাসি এবং নাবিকরা অনেকেই ছিল চিনদেশীয়। ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ, লর্ড বেন্টিঙ্কের আমলে, চিনা বসতি দ্রুত বাড়তে থাকে। চা, রেশম, চামড়া প্রভৃতি কারবারে এদের দেখা যেত। পরবর্তীকালে দাঁতের চিকিৎসক, সেলুন, লন্ড্রি প্রভৃতি বিচিত্র ক্ষেত্রে এদের দেখা যায়। বিশ শতকের, চার-এর দশকে কলকাতায়, স্বাধীনতার পূর্ববর্তী বছরে প্রায় পঞ্চাশ হাজার চিনা নাগরিকের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। নানা টানাপোড়েন এবং অর্থনৈতিক মন্দায় সাত-এর দশকের আগেই প্রায় বাইশ হাজার চিনা মানুষ কলকাতা ত্যাগ করেন। একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, ১৯৭১-এর জনগণনা অনুযায়ী এবং পরবর্তীকালে প্রায় চল্লিশ হাজার চিনা ভাষী এই কলকাতায় রয়েছেন। 

চিনাদের নিজস্ব চার্চ, নিজস্ব স্কুল যেমন আছে, তার সঙ্গে বিশ শতকের শেষদিক পর্যন্ত চালু ছিল অন্তত তিনটি দৈনিক পত্রিকা! মুরগি শুয়োরের পোলট্রি, চশমার দোকান, আসবাবের দোকান, সস্‌-নুডলস্‌-মশলার সম্ভার, রুটি-কেকের বেকারি এবং রেস্টুরেন্টের মাধ্যমে কলকাতার চিনাদের আমরা চিনতে শিখেছি। চিনাদের মধ্যে সিংহভাগই বৌদ্ধ। তাঁদের অধিকাংশ আবার মহাযানী। বাকিদের মধ্যে রয়েছেন কন্‌ফুসিয়াসপন্থী, খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী এবং ইসলাম ধর্ম দীক্ষিতেরা। 

চিনা সম্প্রদায়ের দু'টি পুরনো প্যাগোডা কলকাতায় বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে। একটি উত্তর কলকাতার দমদম অঞ্চলে, লেকটাউন সংলগ্ন নস্কর পাড়ায়। এর বয়স দেড়শোরও বেশি। এর পাশেই আছে 'কলকাতার চিনা বৌদ্ধ সমিতি' কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত চৈনিক মন্দির। অন্যদিকে, তুলনায় সমকালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ট্যাংরার মাঠপুকুরের বিশাল প্যাগোডা। তার ড্রাগন ফটকটি দৃষ্টিনন্দন। সেই ফটকে নানা কারুকার্য, ছবি এবং চিনা ভাষায় লেখা ত্রিপিটকের বাণী। ছবিগুলি দেখে অনেকেই বলেছেন, এগুলি জাতকের নানা কাহিনি অবলম্বন করে আঁকা হয়েছে। এই প্যাগোডা দু'টিতে রবিবার উপাসনার জন্য বহু মানুষ এসে জড়ো হন। 

চিনে পাড়ার দুটি দুর্দান্ত উৎসব হল চান্দ্র নববর্ষ আহ্বান এবং চিনা নববর্ষ উৎসব। প্রথমটি হয় অগাস্ট মাসে এবং দ্বিতীয়টি ফেব্রুয়ারি মাসে। আনন্দ এবং হইচইতে মুখরিত তখন চিনে পাড়া। বিশেষত চায়না টাউনে এই উৎসব বেশ জাঁকজমকের সঙ্গে পালিত হয়। নতুন সাজ পোশাক, বাহারি আলোর রোশনাই, ড্রাগন নাচ-গান, রঙিন মুখোশ, আতশবাজি, রং বেরঙের রাংতা আর ধোঁয়া — সব মিলিয়ে এক অত্যাশ্চর্য পরবপার্বণ! তার সঙ্গে মিশে যায় বাঙালিদের মতোই পিঠে-পায়েস-কেক এবং মিষ্টির জমাটি আয়োজন! চিনা সম্প্রদায় সম্পর্কে যেটুকু বুঝতে পেরেছি, এরা হলেন প্রধানত জাতীয়তাবাদী। 

এতক্ষণ নানা ধরনের তথ্যমূলক আলোচনা করেছি। এবার দু-একটা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলি। বছর দশ-বারো আগে বিবেকানন্দ রোড YMCA-তে আমার পুত্রের টেবিল-টেনিস কোচ ছিলেন আমাদের সময়ের প্রখ্যাত খেলোয়াড় টমাস লি। টমাসের সঙ্গে আটের দশকে সামান্য পরিচয় এবং বন্ধুত্ব হয়েছিল টেবিল টেনিস খেলার সূত্রেই। বহু বছর পরে তাকে দেখলাম নতুন ভূমিকায়। অত্যন্ত অমায়িক এবং উজ্জ্বল এই মানুষটি ভাঙা-ভাঙা বাংলায় এবং প্রধানত ইংরেজিতে চমৎকার প্রশিক্ষণ দিত টমাস। খুবই পরিতাপের বিষয় হল, কিছুদিনের মধ্যেই শুনলাম টমাস লি প্রয়াত। তৎকালে কিশোর, আমার পুত্র শোকে কেঁদে ফেলেছিল। এতটাই স্নেহের বন্ধনে তাকে বেঁধে নিয়েছিল টমাস। 

দু'টি-তিনটি অন্য প্রসঙ্গের কথাও এখানে উল্লেখ করাও জরুরি। চিনের সঙ্গে বাংলার সাহিত্য সংস্কৃতির এক ভাঙাচোরা সেতু একসময় গড়ে উঠেছিল। যথারীতি তার একটি সূত্র ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তাঁর যত্নে এবং আগ্রহে স্থাপিত হয়েছিল বিশ্বভারতীর 'চিনা ভবন'। এছাড়া তান-ওয়েন ছাত্রাবাস এবং চিনের গ্রন্থাদি নির্ভর বিদ্যা ভবনের চর্চাও এক্ষেত্রে স্মরণীয়। ১৯৩৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এই ভবনটি। রবীন্দ্রনাথ এবং তান-উন-শান-এর যৌথ উদ্যোগে এটি তৈরি হয়। তান-উন-শান-এর কন্যা তান ওয়েন বিশ্বভারতী বাংলা বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়েছিলেন। তান ওয়েন-এর শ্রমে এবং অনুরোধে অজস্র গ্রন্থ এবং পুঁথি বিশ্বভারতীতে সংগৃহীত হয়। দুই দেশের শিক্ষা সংস্কৃতি সাহিত্য শিল্পের ক্ষেত্রে এক গভীর সমন্বয়ই ছিল প্রায় নব্বই বছর আগে রবীন্দ্রনাথের সংকল্প। 

আমার মনে পড়ে গেল, 'লাও-ৎস কথিত জীবনবাদ' অর্থাৎ 'তাও-তে-চিং'-এর আংশিক অনুবাদ করেছিলেন সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, 'প্রবাসী' পত্রিকায় ১৩১৭ বঙ্গাব্দের আষাঢ় সংখ্যায়। হিসেব করে দেখলে ১৯১০ সালে! পরবর্তীকালে, বিশিষ্ট চিনা ভাষাবিদ অমিতেন্দ্রনাথ ঠাকুর, এই 'তাও-তে-চিং' বাংলায় অনুবাদ করেন। ভূমিকাসহ এই অনুবাদে তাও ধর্মমতের অন্তরাত্মা চমৎকার ধরা পড়েছে। 'সাহিত্য অকাদেমী' 'নিউ দিল্লি' এই বইটি প্রকাশ করেছিলেন ১৯৬০ সালে। 

প্রসঙ্গ থেকে অনেক দূরে চলে এসেছি। কথাটা ছিল, চিনা শন্দের বাংলা ভাষায় অনুপ্রবেশ। এই যে 'দিবে আর নিবে/ মেলাবে মিলিবে/ যাবে না ফিরে' পরিস্থিতি, এ হল মহানগরের অবিচ্ছেদ্য সংস্কৃতি। বিশ শতকের প্রথম তিন দশকে, এমনকী স্বাধীনতার সময়ও, বাঙালির রসনায় সেভাবে চিনা খাদ্য জাঁকিয়ে বসেনি। আজকের পার্ক স্ট্রিট বা গড়িয়াহাট-গোলপার্ক-নিউটাউন-সল্টলেক কিংবা গড়িয়া-বেহালা-বাইপাস সর্বত্র কতশত চিনা রেস্তোরাঁ! মোগলাই আর চিনা, এই হল দুই প্রধান স্বাদের দ্বৈরথ। ফলে, চিনা শব্দ জিভের চর্ব্য-চোষ্য-লেহ্য-পেয় দিয়েই আসবে। তার আগে বলে রাখি — 'চা' নামক বাঙালির হৃদিকম্পন পানীয় এসেছে চিনা ভাষা থেকে। অন্যদিকে, চাউ-চাউ, চাউমিন, চপসোয়ে, পিং হোই চিকেন, কুং পাও চিকেন, মেইফুন সুপ ইত্যাদি কত শব্দ বাংলায় ঢুকে গেল। কুং-ফু বা ফেং সুই শব্দও আমদানি হয়েছে চিনা সূত্রে। 

একেবারে সাম্প্রতিককালে, গত বছর হাতে এল একটি বই, প্রায় ৩৬০ পৃষ্ঠার, যে বইয়ের নাম 'চিনা প্রবন্ধ সংকলন'। মূল চিনা থেকে বাংলায় বইটি সম্পাদনা এবং অনুবাদ করেছেন অংকন দত্ত। ৪৯টি প্রবন্ধ, ৪৯ জন লেখক। মূল চিনা ভূখণ্ডের পাশাপাশি তাইওয়ান এবং হংকং-এর চিনাভাষী লেখকবৃন্দও অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। লেখক নিজেই এ বইটির প্রকাশক। ১৯ সি ১, সেলিমপুর রোড (৯৮৩০১৫১০৪৫) থেকে মূল্যবান এই বইটি প্রকাশিত। লেখকদের মধ্যে প্রবীণতম মানুষটির জন্ম ১৮৫২ এবং নবীনতমের জন্ম ১৯৫৫! অনুবাদক নিজেই জানিয়েছেন, 'চিনের ইতিহাস, সমাজ, ধর্ম, দর্শন, শিল্প-সাহিত্য, শিক্ষা, রাজনীতি, প্রকৃতি — বিভিন্ন বিষয়ে বিদগ্ধ প্রবন্ধকারদের রচনা উপস্থিত করা হয়েছে। এত যত্নে এবং মননে বইটি গড়ে তুলেছেন অনুবাদক যে, তারিফ করতেই হবে। স্বছন্দ তরজমা, চমৎকার মসৃণ বাক্যে বিষয়বস্তু ধরা আছে। কত ধরনের অবস্থানের হদিশ পাওয়া যাচ্ছে প্রবন্ধগুলিতে। চিরাচরিত মার্কসবাদী ক্ষীণ দৃষ্টি চর্চার বাইরে বইটি যেতে চেয়েছে। কয়েকটি পীড়াদায়ক বানান ভুল অবশ্য আছে। বর্জনীয়। এই বইটির কথা বিশেষভাবে বললাম যাতে বোঝা যায়, বাঙালির সারস্বত চিনা ভাষা-সাহিত্য চর্চায় কোথাও ছেদ পড়ে নি। 

মহানগর কলকাতায় এই বিপুল বহু শরিকের জনস্রোত বিশ শতকের দু-দুটো বিশ্বযুদ্ধের সময় তুঙ্গে ওঠে। কত ধরনের কত পেশার মানুষ শহরে ঠাঁই গেড়েছিল, তার হিসেব রাখা দুষ্কর। পুরনো নথিপত্র থেকে জানা যাচ্ছে, ১৬৯০ খ্রিস্টাব্দের পরবর্তীকালে পর্তুগিজ, জার্মান, গ্রিক, ইহুদি, আফ্রিকান, আর্মেনিয়ান প্রভৃতি জাতির মানুষ কলকাতায় বসবাস শুরু করেছিল। ১৬৩০ খ্রিস্টাব্দের ১১ জুলাই তারিখটি খোদিত আছে এক আর্মেনীয় মহিলার স্মৃতিস্তম্ভে। আর্মেনীয় গোরস্থানে। লঙ-এর বিবরণ থেকে জানা যায়, 'আর্মানিদের মধ্যে কেউ কেউ পারস্য উপসাগর দিয়ে ভারতবর্ষে আসে, আবার কেউ কেউ খোরাসন, কান্দাহার ও কাবুল হয়ে দিল্লিতে এবং অন্যত্র বসতি স্থাপন করেন। ... ১৬২৫ খ্রিস্টাব্দে ওলন্দাজরা চুঁচুড়ায় উপনিবেশ স্থাপন করে।' 

১৮৩৭ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পুলিশ সুপার ক্যাপ্টেন বর্ব কলকাতার জনসংখ্যা এবং গৃহাদির বিবরণ প্রকাশ করেন। এই তালিকাটি এক চমকপ্রদ দস্তাবেজ। সে যুগের কলকাতার বহুস্তরিক বাস্তবতা এবং বহুস্বরের সমবেত সংগীত যেন এই বিবরণে ধরা পড়ে।  

কলিকাতা ১ জানুয়ারি

১৮৩৭ সাল স্ত্রী-পুরুষ

ইংল্যান্ডজাত ৩১৩৮ 

স্টিন্ডিয়ান ৪৭৪৬ 

পোর্তগাল জাত ৩১৮১

ফ্রান্সদেশীয় ১৬০

চিন দেশীয় ৩৬২ 

আরমানি ৬৩৬

য়িহুদি ৩৬০ 

পশ্চিমদেশীয় মোসলমান ১৬৬৭৭ 

বঙ্গদেশীয় মোসলমান ৪৫৬৭ 

পশ্চিমা হিন্দু ১৭৩৩৩ 

বাঙালি হিন্দু ১২৩৩১৮

মোগল ৫২৭

পারসি জাতি ৪০

আরব ৩৫১ 

মোগ ৬৮৩

বাঙালি খ্রিস্টিয়ান ৪৯

নীচ জাতি ১৯০৮৪

                 ২২৯৭১৪

আপাতত, এই পর্বে কোনও মন্তব্য করছি না! তবে কয়েকটি কথা তো পরের কিস্তিতে বলবই।

More Articles