জানেন, এত ঢ্যাঙা গলা নিয়ে কীভাবে ঘুমোয় জিরাফরা?

How Do Giraffes Sleep: এখন বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া জিরাফ ডিসকোকেরিক্স সিয়েঝি তার মাথা ব্যবহার করে মেষের মতো লড়াই করত।

অনেক উঁচু থেকে তাকিয়ে নীচে দেখতে হয়। সুবিধা আছে, অসুবিধা আছে ততোধিক। জিরাফ অবধি যেতে হবে কেন, মানুষের কথাই ধরা যাক। ঠ্যাং লম্বা হলে বিছানাতে আঁটে না। সার্বিক লম্বা হলে তাও একখানা ভারসাম্য মেলে। কিন্তু ধরুন, দেহের কোনও বিশেষ অঙ্গ অস্বাভাবিক লম্বা হয়ে গেল! তাহলে? এবার জিরাফে ফেরা যাক। ওই লম্বা গলা নিয়ে পাতা খেতে যতই সুবিধা হোক না কেন, ঘুমাতে বিস্তর সমস্যায় পড়ে জিরাফরা। বেশিরভাগ জিরাফই শিকারি প্রাণীদের থেকে বাঁচতে দাঁড়িয়ে ঘুমায়। হ্যাঁ, ঘোড়ার মতোই। কিন্তু জিরাফের ঘুম অত্যন্ত কম। অল্প ঘুমই আসলে জঙ্গলে তাদের তুলনামূলকভাবে নিরাপদ রাখে। তবে এই অল্প ঘুমের নানা পর্যায়ে জিরাফরা তাদের সেই ঢ্যাঙা গলা নিয়ে কী কী করে, তা বেশ মজার।

জিরাফের উচ্চতা ৪.৮ থেকে ৫.৫ মিটার! মানে প্রায় ১৬ থেকে ১৮ ফুট। এতখানি উচ্চতা থাকা সত্ত্বেও সিংহর থেকে সুরক্ষিত নয় জিরাফরা। সারাক্ষণ ভয়, কখন এসে লাফ দেয় পশুরাজ! এই ভয়ের মোকাবিলা করার জন্য জিরাফরা কম ঘুমে অভিযোজিত করে ফেলেছে নিজেদের। জিরাফরা অত্যন্ত কম তো ঘুমায় বটেই, এমন একটি অবস্থানে ঘুমোয় যাতে প্রয়োজন হলে পালাতে পারে দ্রুত।

how do giraffes sleep

আসলে, জিরাফরা খুব একটা ঘুমায়ই না। দিনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মোটে ৪ ঘণ্টা ঘুমায়। এই ঘুমটিও খুব অল্প সময় মেপে মেপে হয়। একটানা পাঁচ মিনিট স্থায়ী হয় জিরাফের ঘুম। জিরাফ তো বেচারা শিকার, শিকার যদি নাক ডাকিয়ে মানুষের মতো ৮ ঘণ্টা ঘুমোয়, তাহলে বিশ্ব থেকে প্রজাতিটাই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।

আরও পড়ুন- নারীদের গলা জিরাফের মতো! সম্মান পেতে গলায় বেড়ি পরতে হয় এই মহিলাদের

ঘোড়াদের ক্ষেত্রেও বিষয়টা সত্য। বেশিরভাগ ঘোড়াই দাঁড়িয়ে ঘুমায়। তবে যখন এই প্রাণীরা র‍্যাপিড আই মুভমেন্ট (REM) পর্যায়ের ঘুমে পৌঁছয় তখন বিষয়টা বদলে যায়। র‍্যাপিড আই মুভমেন্ট ঘুমের এমন একটি পর্যায় যা স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং পাখিদের ক্ষেত্রে ঘটে বলে মনে করা হয়েছিল কিন্তু তারপর মাকড়সা এবং সম্ভবত সরীসৃপের মধ্যেও ঘটতে দেখা গিয়েছে।

জিরাফরা দাঁড়িয়ে ঘুমায় কারণ এটিই সবচেয়ে নিরাপদ পদ্ধতি। তবে, মাঝে মাঝে তারা বসেও ঘুমায়। জিরাফ যখন REM পর্যায়ের ঘুমে প্রবেশ করে, যদিও জিরাফের ক্ষেত্রের ব্যাপারটা মাত্র এক মিনিট স্থায়ী হয়, তখন কখনও কখনও নিজেদের মাথাকে আর ধরে রাখতে পারে না জিরাফরা। র‍্যাপিড আই মুভমেন্ট পর্যায়ে মাঝে মাঝে জিরাফরা তাদের মাথা পিঠের উপর রেখে বিশ্রাম নেয় বা কখনও কখনও মাথা একপাশে ঝুলে থাকে যার ফলে তাদের ওই লম্বা গলাকে ইংরেজির 'এস' অক্ষরের মতো দেখায়। জিরাফরা এই অত্যন্ত ক্ষণস্থায়ী গভীর ঘুমের সময় তাদের মাথা এক জায়গায় রাখার জন্য বালিশের মতো নিজেদের পশ্চাদংশ ব্যবহার করে। 

এত লম্বা গলা নিয়ে ১০ বার দাঁড়ানো, বসা বেজায় পরিশ্রমের কাজ। তাই মাটিতে ঘুমানো শুধুমাত্র ঘুমের একটি নির্দিষ্ট পর্যায়েই সীমাবদ্ধ। বলা হয়, প্রতিযোগী প্রজাতির চেয়ে আরও উচ্চতায় গিয়ে গাছের পাতা খাওয়ার জন্য লম্বা গলা অভিযোজিত হয়েছে। তবে গবেষণায় দেখা গিয়েছে, এমন চরম দৈর্ঘ্যের পিছনে রয়েছে আরও এক অন্য কারণ।

এখন বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া জিরাফ ডিসকোকেরিক্স সিয়েঝি তার মাথা ব্যবহার করে মেষের মতো লড়াই করত। এই ঢুঁসোঢুঁসির ফলে জিরাফের ঘাড় অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে ওঠে এবং লম্বা গলার বিবর্তন দেখা দেয়। এখন যদি কোনও জিরাফ লড়াই করে, এই ঢুঁসিয়ে দেওয়ার ভাবটুকু বেশ দেখা যায়। পুরুষরা যখন জননসঙ্গীর খোঁজে প্রতিযোগিতায় নামে, দেখা যায় তারা একে অপরের দিকে মাথা দোলাচ্ছে।

More Articles