'আমেরিকা ফার্স্ট' নীতিতে সমস্যায় পড়বে ভারত? ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে চ্যালেঞ্জ কী কী?
Narendra Modi Donald Trump: রাশিয়া ও ভারতের সর্ম্পকের ব্যাপারে ট্রাম্প আরও খোলামেলা হতে পারেন। তবে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য ও শুল্ক ইস্যুতে কঠোর অবস্থান নিতে পারেন
আমেরিকায় সদ্য নির্বাচিত হয়ে হোয়াইট হাউজে ফিরেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। চার বছর আগে ক্ষমতা ছাড়ার পর গুরুত্ব কমেছিল ট্রাম্পের। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্তও হয়েছিলেন। দীর্ঘ টানাপড়েনের পর ফের আমেরিকায় ট্রাম্পের জয়। প্রাথমিক ফলাফলে জয়ের আভাস পেতেই বিজয়-ভাষণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। ট্রাম্পের জয়ের পর তাঁকে শুভেচ্ছা জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টার্মার, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ প্রমুখ। ট্রাম্পের জয়ে ভারতের খুশি হওয়ার একাধিক কারণ আছে কিন্তু তেমনই রয়ে গিয়েছে কিছু আশঙ্কাও। ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে কী কী সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে ভারত?
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সম্পর্ক জোরালো। ট্রাম্প নিজে তাঁদের বন্ধুত্বের সম্পর্কের কথাও বলেছিলেন। এবারের নির্বাচনী প্রচারে একাধিকবার মোদির নামও নিয়েছেন তিনি। তবে মনে রাখা দরকার, ভারতের নীতিকে আক্রমণও করেছিলেন ট্রাম্প। ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচার থেকেই 'আমেরিকা ফার্স্ট' স্লোগান দিয়ে আসছেন। প্রথম মেয়াদেও অর্থনৈতিক নীতিতে আমেরিকার শিল্প সংরক্ষণের নীতিকেই প্রাধান্য দিয়েছিলেন তিনি। সে সময় ট্রাম্প চিন ও ভারতের মতো আরও কিছু দেশে আমদানির উপর চড়া শুল্ক আরোপ করেছিলেন। তাই কিছু খটকা থাকছেই। আবার প্রশ্ন এও উঠছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের ক্ষেত্রে বাইডেনের প্রশাসনের যে নীতি ছিল তা পরিবর্তন করবেন কিনা?
এর আগে ২০১৭ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্পের নীতি বিশ্বের কাছে নতুন নয়। ভারত সরকার একধিক বিষয়ে তাঁর সঙ্গে কাজ করেছে, তাই ভারতেরও অভিজ্ঞতা আছেই। ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদে অর্থনৈতিক নীতি 'আমেরিকা ফার্স্ট'-কে গুরুত্ব দিতে গিয়ে ভারতের উপরেও চড়া শুল্ক আরোপ করেছিলেন। যেমন, ভারত সরকারকে বলা হয়েছিল, আমেরিকান হার্লে ডেভিডসন মোটরসাইকেলের থেকে শুল্ক কমাতে। অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা করছেন, আমেরিকার পণ্য আমদানিতে যে দেশগুলি চড়া শুল্ক রাখে তাদের বিরুদ্ধে ট্রাম্প কোনও অবস্থান নিলেও নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে ভারতও যে এই তালিকার বাইরে থাকবে না, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
আরও পড়ুন- আমেরিকাকে আমূল বদলে দেবে ‘অ্যাজেন্ডা-৪৭’? কী পরিকল্পনা আঁটছেন ট্রাম্প?
শুল্কবিধি বাস্তবায়িত হলে ভারত কী সমস্যায় পড়বে এই নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষণকারী শশাঙ্ক মট্টু এক্সে লিখেছেন, "কিছু অর্থনীতিবিদ মনে করেন, ট্রাম্পের শুল্কবিধি আরোপ করা হলে ২০১৮ সালের মধ্যে ভারতের জিডিপি ০.১% কমতে পারে।" আমেরিকার সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য ২০ হাজার কোটি ডলারের। ট্রাম্প যদি শুল্কের হার আরও বাড়িয়ে দেন, তাহলে ভারতের অনেকটাই ক্ষতি হবে। পর্যবেক্ষকদের কথায়, ট্রাম্পের 'আমেরিকা ফার্স্ট' নীতির কারণে ভারতে মুদ্রাস্ফীতির হার বেড়ে যাবে এবং সুদের হার কমানোর ক্ষেত্রেও সমস্যা হতে পারে। এই নীতি ভারতের আমদানিকে ব্যয়বহুল করে তুলতে পারে বলে অনেক বিশেষজ্ঞই মনে করছেন। স্বাভাবিকভাবেই এতে ইএমআই-এর পরিমাণ অনেকটাই বেড়ে যাবে এবং সমস্যায় পড়বেন মধ্যবিত্ত গ্রাহকরা।
Some economists estimate that India's GDP could shrink by 0.1% by 2028 if Trump's tariffs get implemented
— Shashank Mattoo (@MattooShashank) November 6, 2024
Trump has also proposed a 60% tariff on Chinese goods - which could spark a destabilising global trade war
India would prefer to avoid that
অন্যদিকে, পাকিস্তান নিয়ে আমেরিকার অবস্থান ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৯ সালে যখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান আমেরিকা গিয়েছিলেন, সেই সময় কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে মধ্যস্থতার প্রস্তাব করেছিলেন ট্রাম্প। ট্রাম্প দাবি করে বসেন, মোদিও নাকি কাশ্মীর নিয়ে মধ্যস্থতা করতে চান। ভারত এই দাবি প্রত্যাখ্যান তো করেইছিল, পাশাপাশি এও জানিয়ে দিয়েছিল যে, পাকিস্তান নিয়ে ভারত কোনও মধ্যস্থতা মেনে নেবে না। বলে রাখা দরকার, কয়েক দশক পর কোনও আমেরিকার প্রেসিডেন্ট কাশ্মীর নিয়ে মধ্যস্থতার কথা বলেছিলেন।
পাকিস্তানের সিনেটর মুশাহিদ হুসেন 'দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট উর্দু'- কে বলেছেন, "আমার মনে হয়, ট্রাম্পের জয় পাকিস্তানের জন্য ভালো। ইজরায়েল নিয়ে কিছু যায় আসে না। ট্রাম্প নতুনভাবে কোনও যুদ্ধ শুরু করবেন না।" তাঁর কথায়, "আফগানিস্তান থেকে নিজেদের সেনাবাহিনী ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। ওবামা বা বাইডেন কেউই এটা করতে পারতেন না। ইউক্রেন যুদ্ধেরও অবসান ঘটাবেন ট্রাম্প। গত ২৫ বছরে ট্রাম্পই প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট যিনি কাশ্মীর নিয়ে মধ্যস্থতার কথা বলেছেন। এর আগে বিল ক্লিন্টন কাশ্মীরের প্রসঙ্গ এনেছিলেন।" তিনি আরও বলেন, "অতীতেও রিপাবলিকান পার্টির সঙ্গে পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠতা ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রিপাবলিকান পার্টির সরকার বরাবরই পাকিস্তানের পাশে ছিল। ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশকে পৃথক করার পর পাকিস্তানকে আক্রমণ করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু প্রেসিডেন্ট নিক্সন তা হতে দেননি।"
আরও পড়ুন- এবার বাংলাদেশকে ‘কালো তালিকায়’ ফেলবেন ট্রাম্প? কীভাবে সামলাবেন ইউনূস?
তবে বলে রাখা ভালো, ট্রাম্প প্রথম মেয়াদে আমেরিকার মিত্রদের সঙ্গে লড়াই করেছিলেন। দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের সঙ্গেও একটা টানাপড়েন তৈরি হয়েছিল। এই সম্পর্কগুলোর প্রভাব ভারতের উপর পড়তে পারে বলে মনে করছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। শশাঙ্ক মট্টু লিখেছেন, "যেহেতু ট্রাম্প চিনের বিপক্ষে গিয়ে তাইওয়ানকে রক্ষা করবেন কিনা তা স্পষ্ট নয়, তাই এতে এশিয়া আমেরিকার সম্পর্ক দুর্বল হতে পারে। এর ফলে চিনের অবস্থান জোরদার হলেও হতে পারে, যা ভারতের জন্য সমস্যার কারণ হবে।" ইন্দো-স্প্যাসিফিক নীতিতে পাকিস্তান নিয়ে আমেরিকা বিভ্রান্তিতে রয়েছে বলে এক্সে লিখেছেন দ্য উইলসন সেন্টার থিঙ্ক ট্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান। তাঁর কথায়, মার্কিন কর্মকর্তারা এ বিষয়ে বিভ্রান্ত। আমেরিকার ইন্দো-স্প্যাসিফিক নীতিতে পাকিস্তানের অবস্থান কোথায়? পাকিস্তান চিনের বন্ধু। আফগানিস্তানকে এখন তাদের কৌশলের অংশ মনে করে না মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কারণ সেখানে তালিবান রয়েছে। ভারত-রাশিয়া সম্পর্ক বিষয়ে আমেরিকার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তিনি বিবিসিকে বলেন, "রাশিয়া ও ভারতের সর্ম্পকের ব্যাপারে ট্রাম্প আরও খোলামেলা হতে পারেন। তবে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য ও শুল্ক ইস্যুতে কঠোর অবস্থান নিতে পারেন।"
US officials are ambiguous about Pakistan’s place in the Indo Pacific strategy, because of its alliance with China, and US doesn’t consider Afghanistan a part of the strategy, because the Taliban (and location). All other South Asian states viewed as a part of the strategy. https://t.co/33W8OWFH7n
— Michael Kugelman (@MichaelKugelman) November 5, 2024
উল্লেখ্য, ট্রাম্প প্রথম মেয়াদেই কোয়াডকে শক্তিশালী করতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। কোয়াড হলো- এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও জাপানের জোট। ভারতের মতো ট্রাম্পও চিনের কট্টর বিরোধী। প্রথম মেয়াদে চিনের সঙ্গে ট্রাম্পের সর্ম্পক তলানিতে গিয়েছিল। এইসব দিক বিবেচনা করে বলা যায়, ভারতের সঙ্গে আমেরিকার প্রতিরক্ষার সম্পর্ক আরও মজবুত হবে। অস্ত্র রফতানি, যৌথ সামরিক মহড়া ও প্রযুক্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে দুই দেশের সম্পর্ক আরও জোরদার হতে পারে। এতে চিন ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের অবস্থান আরও শক্তিশালী হতে পারে। মার্কিন থিঙ্ক ট্যাঙ্ক 'র্যান্ড কর্পোরেশন'-এর ইন্দো-স্প্যাসিফিক বিশ্লেষক ডেরেক গ্রসম্যান এক্স-এ লিখেছেন, "ট্রাম্পের জয় ভারত ও আমেরিকার বর্তমান কৌশল টিকিয়ে রাখবে। মূল্যবোধকে প্রাধান্য না দিয়ে ভারত-আমেরিকার কৌশলগত দিক বজায় থাকবে বলে অনুমান করা যায়। মোটের উপর ট্রাম্পের জয়ে ভারত লাভবান হবে।" তবে, আমেরিকা ফার্স্ট নীতি, পাকিস্তান নিয়ে ট্রাম্পের অবস্থান এগুলো সমস্যার সৃষ্টি করলে ভারতে এগুলো থেকে কীভাবে বেরিয়ে আসবে তাই এখন দেখার।
"As India looks ahead to President-elect Donald Trump taking charge in Washington, there is optimism the strategic relationship built by the two countries in recent years will strengthen...[but] New Delhi also is bracing for turbulence in trade ties..."https://t.co/9hxgFVx2cU
— Derek J. Grossman (@DerekJGrossman) November 8, 2024