পাক এজেন্টের প্রেমে পড়ে গুপ্তচর! ভারতের এই কূটনীতিকের কী পরিণতি হয়েছিল?

Spy Madhuri Gupta: সেই সময় মাধুরীর বয়স ৫২। বছর ৩০-এর জামশেদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লেন মাধুরী৷ আসলে প্রেম নয়, প্রেমের ফাঁদ।

কিছুদিন আগেই, পাকিস্তানের হয়ে কাজ করা ভারতীয় ইউটিউবার জ্যোতি মালহোত্রার নাম প্রকাশ্যে এসেছে। তাঁকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্তের পর যে সব তথ্য জানা গিয়েছে, তা স্পষ্ট যে পাকিস্তানের হাই কমিশনের যোগাযোগের সূত্রেই সেই দেশের প্রশাসনিক স্তরের নানা মানুষের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ তৈরি হয়। সেখান থেকেই ধীরে ধীরে গুপ্তচর হয়ে ওঠার পথে এগোতে থাকেন জ্যোতি। সাধারণত কোনও না কোনও অন্য মানুষের হাত ধরেই আরেক মানুষ অপরাধের পথে এসে পড়েন। নেপথ্যে থাকে নানা কারণ, অর্থলোভ, খ্যাতি, কোনও না কোনও বিশেষ সুবিধা পাওয়া এমনকী প্রেমও! প্রেমে পড়ে দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করার নজির নতুন নয়। এর আগেও ভারতীয় কূটনীতিক পাকিস্তানের গুপ্তচর হয়ে উঠেছিলেন স্রেফ পাক এজেন্টের প্রেমে পড়ে! জ্যোতি মালহোত্রার ছায়া ধরে উঠে এসেছে ১৫ বছর আগে ধৃত এক পাক গুপ্তচর, মাধুরী গুপ্তর কাহিনি।

২৬/১১ মুম্বই হামলার ১৮ মাস পর ২০১০ সালে সামনে আসে পাকিস্তানের চর মাধুরী গুপ্তর নাম। ইসলামাবাদে ভারতীয় দূতাবাসে কূটনীতিক হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন তিনি। মাধুরী বিদেশ মন্ত্রকের হয়ে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। বহু দেশে কাজ করেছেন ভারতের হয়ে। তবে পাকিস্তানের ক্ষেত্রে গল্পটা আর নিছক কাজে থেমে থাকেনি। তা গড়িয়ে যায় প্রেমের সম্পর্কে। সেখান থেকেই জল গড়ায় দেশদ্রোহিতার দিকে।

১৯৮০-র দশকে ভারতের বিদেশ মন্ত্রকে যোগ দেন দিল্লিবাসী মাধুরী। তিনি উর্দু ভাষায় দক্ষ ছিলেন এবং ইরাক, লাইবেরিয়া, মালয়েশিয়া ও ক্রোয়েশিয়ায় কাজ করেছেন। ২০০৭ সালে, ইসলামাবাদে ভারতীয় হাই কমিশনে প্রেস ও ইনফরমেশন বিভাগের দ্বিতীয় সচিব হিসেবে নিয়োগ করা হয় তাঁকে।

আরও পড়ুন- বৌদ্ধ ভিক্ষুকের ছদ্মবেশে গুপ্তচর! অবাক করবে এই বাঙালির রহস্যময় জীবন

ইসলামাবাদে কর্মরত থাকাকালীনই কূটনীতিকদের একটি অনুষ্ঠানে যান মাধুরী গুপ্ত। সেখানে পাকিস্তানি সাংবাদিক জাভেদ রশিদের মাধ্যমে আইএসআই কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরিচিত হন তিনি। এর মধ্যে মুবশার রেজা রানা ও জামশেদ নামে দুই আইএসআই কর্মকর্তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে তাঁর। মাধুরী কিন্তু ততদিনে জীবনের অনেকগুলো ঘাট পেরিয়ে এসেছেন। অভিজ্ঞতা তাঁর প্রচুর। সেই সময় মাধুরীর বয়স ৫২। বছর ৩০-এর জামশেদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লেন মাধুরী৷ আসলে প্রেম নয়, প্রেমের ফাঁদ। প্রেমের আড়ালে আইএসআই যে ফাঁদ পেতেছিল, তাতে এতদিনের অভিজ্ঞ, দক্ষ কূটনীতিক মাধুরীও ধরা পড়ে গেলেন৷ সেই সম্পর্কে মাধুরী গুপ্ত নিজেকে এমনভাবে জড়িয়ে ফেলেন যে, ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে জামশেদকে বিয়ে করতেও রাজি ছিলেন৷

প্রেমের মোহেই মাধুরী গুপ্ত বিশ্বাসঘাতকতা করে বসেন নিজের দেশের সঙ্গে। ইমেলের মাধ্যমে মাধুরী ভারতের বিভিন্ন গোপন তথ্য পাঠাতে থাকেন পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের কাছে, যার মধ্যে ছিল জম্মু ও কাশ্মীরের ৩১০ মেগাওয়াটের জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের পরিকল্পনা, ভারতীয় সেনাবাহিনী ও বিদেশ মন্ত্রকের কর্মকর্তাদের পোস্টিং সংক্রান্ত তথ্য এবং তাঁদের পারিবারিক বিবরণও। এই তথ্য ফাঁসের ফলে হুমকির মুখে পড়ে ভারতের নিরাপত্তা।

এই বিষয়ে ভারতীয় গোয়েন্দারা জানতে পারলে ২০১০ সালের এপ্রিল মাসে, দিল্লিতে একটি বৈঠকের অজুহাতে ডেকে পাঠানো হয় মাধুরীকে। এরপর ২২ এপ্রিল, দক্ষিণ ব্লকে এসে পৌঁছলেই গ্রেফতার করা হয় মাধুরীকে। তদন্তে জানা যায়, তিনি ৭৩টি ইমেল আদান-প্রদান করেছেন, যার মধ্যে ৫৪টি মেল তিনি পাঠিয়েছিলেন এবং ১৯টি মেল পেয়েছিলেন। ২০১৮ সালে, অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের ৩ এবং ৫ ধারায় মামলা হয় তাঁর বিরুদ্ধে। এই মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে ২১ মাস তিহাড় জেলে কাটান তিনি। ২০২১ সালের অক্টোবরে ৬৪ বছর বয়সে মারা যান মাধুরী। 

ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও পেশাগত দায়িত্বের মাঝে ভারসাম্য রক্ষা যে কতখানি গুরুত্বপূর্ণ তার এক বাস্তব উদাহরণ মাধুরী গুপ্তর জীবন। একজন কূটনীতিকের কাছ থেকে দেশ সর্বোচ্চ সততা ও বিশ্বস্ততা প্রত্যাশা করে। কিন্তু নিজের কর্তব্য পালনে ব্যর্থ হয়েছিলেন মাধুরী গুপ্ত। প্রেমের ফাঁদ আর দেশের নিরাপত্তার মধ্যেকার সেতু নড়ে গিয়েছিল এক নিপাট ছলনায়। 

More Articles