এই মুহূর্তে কেমন আছে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা?

Bangladeshi Hindu Minorities: গোবিন্দ বলছেন, ভারতের কিছু সংবাদমাধ্যম ও রাজনৈতিক নেতারাই গুজব ছড়িয়ে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদেরই ক্ষতি করছেন।

অশান্ত বাংলাদেশে যে আন্দোলন ছাত্রদের মধ্যে দিয়ে শুরু হয়েছিল তা অবশেষে ছাত্রদের হাত থেকে বেরিয়ে গিয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই। শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর গণভবন দখল করে যে ভাংচুর, লুঠপাট চলেছে তাতে স্তম্ভিত বিশ্ব। বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তিও। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এই আন্দোলনে মিলে গিয়েছে আওয়ামী লীগ বিরোধী বিএনপি ও জামাত-এ-ইসলামীও। এবার এই আবহে গোটা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন উড়ো খবরও আসছে। এই আন্দোলনে, বিএনপি-জামাতের প্রভাব বাড়ায় নাকি বিপদের মুখে পড়তে চলেছে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা! ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, বাংলাদেশে হিন্দুদের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৮ শতাংশে। বিএনপির শাসনামলে বারবারই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের অভিযোগ সামনে এসেছে। এবারও কি তেমনটাই ঘটছে নাকি শুধুই গুজব ছড়ানো হচ্ছে?

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা ঠিক কেমন আছেন? পরিসংখ্যান বলছে, গত পঞ্চাশ বছরে বাংলাদেশের জনসংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। কিন্তু হিন্দুদের সংখ্যা কমেছে প্রায় ৫ শতাংশের বেশি। স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম জনগণনা হয় ১৯৭৪ সালে। সেই সময় মোট জনসংখ্যা ছিল ৭ কোটি ৬৩ লাখ ৯৮ হাজার। তার মধ্যে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ ছিলেন ১ কোটি ৩ লাখ ১৩ হাজার, যা মোট জনসংখ্যার ১৩.৫ শতাংশ। ১৯৬৪ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে প্রায় ১ কোটি ১০ লক্ষ হিন্দু বাংলাদেশ ছেড়েছেন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি বছর প্রায় ২ লক্ষ ৩০ হাজার হিন্দু বাংলাদেশ ছাড়েন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ৭০ লক্ষেরও বেশি শরণার্থী ওপার বাংলা থেকে এপার বাংলায় চলে এসেছিলেন। যার ৯৫ শতাংশই ছিলেন বাঙালি হিন্দু। এবারের অশান্তির কারণে সংখ্যালঘু হিন্দুরা কি ভারতমুখী হবেন?

আরও পড়ুন- যাঁদের জন্য লেখিকাকে নির্বাসন, তাঁদের হাতেই দেশছাড়া হাসিনা! কী বলছেন তসলিমা?

পরিস্থিতি সেইদিকে যাওয়ার আগেই, বাংলাদেশে এই অশান্তির আবহে ভারতের হিন্দুত্ববাদীরা আওয়াজ তুলেছে, বাংলাদেশে 'হিন্দু খতরেঁ মে হ্যায়', বাংলাদেশ নাকি জামাতদের কবলে চলে যাচ্ছে। বিজেপির তরফে প্রচার হচ্ছে, লাখে লাখে সংখ্যালঘু হিন্দু উদ্বাস্তু হয়ে ভারতে আসবেন। সত্যিই কি এমনটা ঘটছে?

বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাসভার মহাসচিব গোবিন্দ প্রামাণিক অবশ্য বলছেন, বাংলাদেশের সংখ্যালঘু পরিস্থিতি ততটা খারাপ নয় যতটা সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রচার চলছে। তিনি বলছেন, "হাসিনার পদত্যাগের পর বাংলাদেশের হিন্দুরা মনে করেছিলেন তাঁদের উপর অত্যাচার হবে, লুঠপাট চলবে, অগ্নিসংযোগ হবে। কিন্তু সোমবার বিএনপি ও জামাতের নেতারা তাঁদের নেতৃবৃন্দের নির্দেশ দেন যাতে হিন্দুদের বাড়িতে অত্যাচার, লুটপাট অগ্নিসংযোগ না হয়, প্রত্যেক মন্দিরে যাতে পাহারা দেওয়া হয়।"

আরও পড়ুন- “পরবর্তী পাকিস্তান হবে বাংলাদেশ”, কেন বলছেন শেখ হাসিনার পুত্র জয়?

বাংলাদেশে হিন্দুদের অন্যতম প্রধান মুখ, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের বাংলাদেশ শাখার অন্যতম সংগঠক গোবিন্দ বলছেন, "জামাত-বিএনপির লোকেরাও মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা পাহারা দিয়েছে। যা হামলা হয়েছে, মূলত আওয়ামী লীগের নেতাদের ওপর, যাঁদের মধ্যে কেউ কেউ হিন্দু। সাধারণ হিন্দুদের ওপর হামলা হয়নি। কিছু দুষ্কৃতী কোনও ঘটনা ঘটালেও সেগুলি ব্যাতিক্রম।" গোবিন্দ বলছেন, ভারতের কিছু সংবাদমাধ্যম ও রাজনৈতিক নেতারাই গুজব ছড়িয়ে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদেরই ক্ষতি করছেন।

তবে গোবিন্দ প্রামাণিকের এই বক্তব্যের সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি কি একেবারেই মিলে যাচ্ছে? বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম 'প্রথম আলো' জানাচ্ছে, সেই দেশের ২৯টি জেলায় সংখ্যালঘু হিন্দুদের বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলা যুব ঐক্য পরিষদের সভাপতির বাড়িতে, খুলনা জেলা ঐক্য পরিষদের সভাপতি বিমান বিহারী অমিত ও যুব ঐক্য পরিষদের সভাপতি অনিমেষ সরকার রিন্টুর বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ। সাতক্ষীরায় জেলা ঐক্য পরিষদের সভাপতি বিশ্বজিৎ সাধু এবং ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক সুব্রত ঘোষের বাড়িতেও হামলা হয় বলে খবর। বিভিন্ন দুর্গামন্দিরে হামলা, কালীমন্দিরে ভাঙচুর, রামকৃষ্ণ মিশন ও ইসকন মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে। একদিকে যেমন মন্দির পাহারা চলছে তেমনই ভাংচুরও ঘটছে! 

তাই সবটা মিলে ভারতের কেন্দ্র সরকার সীমান্তের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। সংখ্যালঘু হিন্দু ও শরণার্থী সমস্যা চিরকালই বিজেপি সরকারের ইস্যু, তাই এবারের অশান্তির প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ থেকে সংখ্যালঘুদের ভারতে আসার আশঙ্কা উড়িয়ে দিতে পারছে না ভারত। হাসিনা সরকারের পতনে ভারতের সীমান্তে বিপদ বাড়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। হাসিনা ভারতে এসে পৌঁছতেই বাংলাদেশ ও ভারতের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির জরুরি বৈঠক ডাকেন এদেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সোমবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে ডাকা ওই বৈঠকে হাজির ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ, ক্যাবিনেট সচিব রাজীব গৌবা, প্রধানমন্ত্রীর দফতরের প্রিন্সিপাল সচিব পিকে মিশ্র, ‘র’-এর প্রধান রবি সিন্‌হা এবং গোয়েন্দা বিভাগের (আইবি)-র ডিরেক্টর তপন ডেকা।

 

More Articles