ঘরে বসে চাকরিতে বিপুল আয়- মেসেজ পাচ্ছেন রোজ? কীভাবে ধরবেন প্রতারণার ফাঁদ?

Online Job Scams : এই প্রতারকরা চাকরির ভুয়ো ওয়েবসাইটও তৈরি করে এবং সেখানে ভুয়ো চাকরির শূন্যপদ পোস্ট করে।

"নমস্কার। আমি এবিসি এইচআর থেকে বলছি। আপনার জন্য উপরি উপার্জনের ব্যাপক সুযোগ! কথা বলা যাবে?”

হালে এই মেসেজ হোয়াটস্যাপে আপনাদের অনেকের মোবাইলেই এসেছে। এমন তো কত 'ফ্রড কেস' আজকাল ঘটেই থাকে। সোশ্যাল মিডিয়ার মারফৎ এমন ঘটনার বিরুদ্ধে সতর্কতাও প্রচার হচ্ছে কত। আসলে শুনতে যত সহজ মনে হচ্ছে, ঘটনাটা তেমন নয়। এমন মেসেজে সাড়া দিয়েই পুনের একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা তাঁর জীবনের সমস্ত সঞ্চয় হারিয়েছেন। সারা পরিবার অনিশ্চয়তার চরম সীমায়। শেষ অবলম্বন হিসাবে সাহায্য চেয়ে দ্বারস্থ হয়েছেন পুলিশের। এমন মানুষের সংখ্যা কিন্তু নেহাত কম না। কিন্তু কীভাবে আপনার হোয়াটস্যাপে যোগাযোগ করছে এই প্রতারকরা? আপনি সাড়া দিলেই বা কী ঘটবে? কোন উপরি আয়ের লোভ দেখানো হচ্ছে?

তদন্তকারীরা বলছেন এটি আসলে 'মানি ফল লাইকস' কেলেঙ্কারি! এটি একটি নতুন ধরনের প্রতারণা, যাতে আপনাকে বলা হবে YouTube ভিডিওতে প্রতিটি লাইকের জন্য ভালো রকমের আর্থিক পুরস্কার পাবেন আপনি৷ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের একটি প্রতিবেদন বলছে, পুনের ওই বছর ৬৫-র প্রবীণ দুই সপ্তাহের মধ্যে বেশ কয়েকটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে জড়িত ধারাবাহিক লেনদেনে ১.১ কোটি টাকা খুইয়েছেন। পুলিশ জানাচ্ছে, প্রতারকরা প্রতি ভিডিওতে লাইকের জন্য অবিলম্বে টাকা পাঠিয়ে দিয়ে বয়স্ক ব্যক্তির বিশ্বাস জিতে নেয় প্রথমেই। তারপরে তারা তাঁকে একটি ভিআইপি গ্রুপে রেজিস্ট্রেশনের জন্য প্ররোচিত করে। এই গ্রুপে বিনিয়োগ করলে অত্যধিক রিটার্নের লোভ দেখানো হয়। এই লোভেই পা দেন বৃদ্ধ। ব্যাস! সমস্ত টাকাই চলে যায় প্রতারকদের হাতে।

আরও পড়ুন- অনলাইন ব্যাঙ্ক জালিয়াতি থেকে সতর্ক থাকার উপায়

এই ধরনের অনলাইন প্রতারণা নতুন কিছু নয়। ফোনে ওটিপি, সিভিভি চেয়ে টাকা হাতানোর গল্পে কম বেশি সকলেই সজাগ এখন। তাই নিত্য নতুন উপায় খুঁজে বের করছে প্রতারকরা। চাকরি দেওয়ার নামে এই অনলাইন স্ক্যামগুলি ক্রমেই বাড়ছে। অনলাইনে চাকরিপ্রার্থীরাই অপরাধীদের নিশানায় রয়েছে সবচেয়ে বেশি। সাম্প্রতিক সময়ে ভারতে এবং বিদেশে অনেক কোম্পানিই ব্যাপক ছাঁটাই করেছে। চাকরির বাজারের সংকট দিন দিন অত্যন্ত বেড়ে যাচ্ছে। এরই মাঝে চাকরি হারানো, চাকরি না পাওয়া মানুষদের লোভ দেখানো যে সোজা তা বুদ্ধিমান প্রতারকরা জানে। অনেকেই যে এই টোপে পা দেবেন তা অনুমান করাও সহজ।

কীভাবে বুঝবেন আপনার সঙ্গে প্রতারকরা যোগাযোগ করছেন বা এই ধরনের ফাঁদ পাতা হচ্ছে? কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখলে সহজেই তা ধরতে পারবেন।

ভাষার প্রয়োগ: অনেক সময়ই এই প্রতারকদের মেসেজের ভাষা ঠিকঠাক থাকে না। যারা প্রকৃত এবং বৈধভাবে চাকরি দেবেন তারা সবসময়ই মেল বা মেসেজে ঠিকঠাক ভাষা লেখেন, ব্যাকরণ মেনেই চলেন, তা সে অনলাইন চাকরি হোক বা অফলাইন। এই প্রতারকদের মেসেজ খতিয়ে দেখুন। ভুল বানান বা ব্যাকরণগত ভুল দেখলে সতর্ক হন।

ওয়ার্ক-ফ্রম-হোম বা ভুয়ো চাকরি: মহামারী চলাকালীন বাড়ি থেকে কাজ করার বিকল্পটিই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বহু সংস্থা মহামারী কেটে যাওয়ার পরেও ওয়ার্ক ফ্রম হোম ধারাতেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। বাড়ি থেকে কাজের এই টোপটি প্রতারকরা ব্যবহার করছে। এই ধরনের প্রস্তাবে চাকরি সংক্রান্ত তথ্য পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেওয়া হচ্ছে না, ফলে তা পরীক্ষা করার জায়গাও থাকছে না। প্রতারকরা এই ওয়ার্ক ফ্রম হোম ব্যবস্থার পিছিনে থাকা আমাদের মানসিকতার সুবিধাই নেয় এবং বিজ্ঞাপন দিয়ে চাকরিপ্রার্থীদের প্রলুব্ধ করে। অত্যন্ত কম সময়ের কাজ, বাড়িতে থেকে কাজ, সামান্য পরিশ্রমে বেশি আয়ের অফার আমাদের টানে।

আরও পড়ুন- অচেনা ভিডিও কলে যৌন হাতছানি, সাড়া দিলেই বিপদ! কীভাবে সতর্ক হবেন, জেনে নিন

কখনও কখনও, এই প্রতারকরা চাকরির ভুয়ো ওয়েবসাইটও তৈরি করে এবং সেখানে ভুয়ো চাকরির শূন্যপদ পোস্ট করে। আবেদন এবং ইন্টারভিউ পরিচালনা করার জন্য, বিষয়টিকে আরও বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য আপনার ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে। অবশ্যই এক্ষেত্রে আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে এবং বিশদ তথ্যগুলি ভালোভাবে খতিয়ে দেখতে হবে।

কখনই অগ্রিম ফি দেবেন না: প্রশিক্ষণ সহ যেকোনও কিছুর জন্যই অগ্রিম অর্থ একেবারেই দেবেন না। কোম্পানির বিষয়ে গবেষণা না করে এবং বিশদ পরীক্ষা না করে কোনও রকমের টাকা দেবেন না। কোম্পানির ঠিকানা এবং যোগাযোগের সঠিক তথ্য যদি না থাকে তবে জানবেন বিষয়টা সুবিধার না।

অযাচিত ইমেল এবং মেসেজ: আজকাল একজনের কাছে একাধিক ফোন আসে। চাকরির জন্য বেশ কিছু ইমেল আসে আপনার কাছে, যেগুলির জন্য আপনি কখনই আবেদন করেননি। গ্যারান্টিযুক্ত আয় এবং অল্প সময়ের কাজের চাকরি দিতে চেয়ে কল ব্যাক করার জন্য লিঙ্ক এবং ফোন নম্বর সহ নানা হোয়াটস্যাপ মেসেজও পেতে পারেন। এই ধরনের মেসেজ থেকে সতর্ক থাকতে হবে কারণ এর মাধ্যমেই আপনার ব্যক্তিগত তথ্য খুঁজে বের করে প্রতারকরা।

যদি প্রতারিত হন তবে কী করা উচিত?

সদ্য স্নাতক হওয়া পড়ুয়া, গৃহিণী এবং অবসরপ্রাপ্ত মানুষ প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার ততটা জানেন না। এই কারণে সহজেই তারা প্রতারকদের শিকার হতে পারেন। আপনি যদি প্রতারিত হন তবে অবিলম্বে পুলিশ বা সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেলকে জানাতে হবে। অনলাইন বা অফলাইন প্রতারণা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ন্যূনতম নিরাপত্তা ব্যবস্থাগুলি জেনে রাখা উচিত৷ চাকরির প্রয়োজন অবশ্যই। তবে প্রকৃত চাকরি খুঁজুন। অল্প পরিশ্রমে অধিক আয় লোভ, এভাবে কোথাওই কোনও চাকরি হয় না অন্তত। অনলাইনে তথ্য দেওয়ার সময় সতর্ক থাকুন। নাহলে, লোভে পড়ে সর্বস্ব খোয়াতেই পারেন আপনি।

 

More Articles