সামনে এল কয়েক কোটি বছরের লুকোনো ইতিহাস, কোথায় রয়েছে ভারতের তৃতীয় ক্রেটার?

'Ramgarh Crater' in Rajasthan : ভারতীয় পর্যটনের নতুন নাম - রাজস্থানের 'রামগড় ক্রেটার'

মহারাষ্ট্রের লুনার ক্রেটার এবং অন্যটি মধ্যপ্রদেশের ধালা ক্রেটারের পর এবার দেশের তৃতীয় ক্রেটারকে ঘিরে গড়ে উঠছে পর্যটন কেন্দ্র। ইতোমধ্যেই এর জন্য সরকারি ভাবে শুরু হয়ে গিয়েছে বিশেষ উদ্যোগ। প্রায় ৫৭.২২ কোটি টাকা ব্যয়ে জায়গাটিকে সাজিয়ে তোলার কাজ শুরুও হয়ে গিয়েছে। ফলে খুব কমদিনের মধ্যেই ভারতের পর্যটন মানচিত্রে তৃতীয় ক্রেটার হিসেবে জায়গা পাকা করতে চলেছে এটি। প্রায় ৬০০ মিলিয়ন বছর আগের কথা। মহাকাশ থেকে ছিটকে আসা এক বিশাল উল্কাপিন্ড আছড়ে পড়েই নাকি সৃষ্টি হয়েছিল এই বিশাল গর্ত। পরবর্তীকালে কালের স্রোতে এই গর্তেই বৃষ্টির জল জমতে শুরু করে। বর্তমানে এটিই অতিকায় একটি প্রাকৃতিক জলাধার। যার ব্যাস প্রায় তিন কিলোমিটার সমান। রাজস্থানের বারান জেলায় অবস্থিত এই রামগড় ক্রেটার হল ভারতের তৃতীয় ক্রেটার। কোটি কোটি বছর ধরে যা রয়েছে ঠিকই অথচ এতদিন পর্যটন আকর্ষণ হিসেবে জায়গা করে নিতে পারেনি। এবার তাই সরকারি ভাবে শুরু হল উদ্যোগ। ভবিষ্যতে মহারাষ্ট্র এবং মধ্যপ্রদেশের মতো রাজস্থানের ক্রেটারটিও যে পর্যটকের বিশেষ আকর্ষণের জায়গা হয়ে উঠবে তা নিয়ে আশাবাদী দেশের পর্যটন বিভাগও।

এই বিশেষ পরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত হওয়ার পরে, রাজস্থান পর্যটন বিভাগ আশা করে যে, প্রতি বছর প্রায় ত্রিশ থেকে চল্লিশ হাজার পর্যটক বছরের বিভিন্ন সময়ে এই সাইটটি পরিদর্শন করতে আসবেন। প্রায় ৫৭ কোটি টাকা ব্যয়ে এই বিশেষ উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে ক্রেটার লেকের সৌন্দর্যায়ন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং সাইটের চারপাশে অন্যান্য সাজসজ্জার কাজও।রাজস্থানের রামগড় ক্রেটারের কর্মকর্তারা বলেছেন, ভারতের পর্যটন বিভাগ এখানে একটি উচ্চমানের রাস্তা, একটি তথ্য কেন্দ্র, একটি জ্ঞান কেন্দ্র এবং একটি ক্যাফেটেরিয়া নির্মাণ করার কাজ শুরু করে দিয়েছে ইতোমধ্যেই।পাশাপাশি বাগান ও সবুজ এলাকা উন্নয়ন, ঘাট নির্মাণ, প্রবেশদ্বার ও সাইনবোর্ড স্থাপন এবং ড্রিপ ইরিগেশনের প্রস্তাবও করা হয়েছে বলে জানান তারা। ভারতের পর্যটন, বন বিভাগ এবং গণপূর্ত বিভাগ এই এলাকার উন্নয়নে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছে।

দ্য সোসাইটি অফ আর্থ সায়েন্টিস্টের সাধারণ সম্পাদক সতীশ ত্রিপাঠী বলেন, বরান জেলার মাংগ্রোল তহসিল থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই গর্তটি ১৮৬৯ সালে আবিষ্কৃত হয়েছিল। ধারণা করা হয় যে ৩.৫ কিলোমিটার ব্যাস বিশিষ্ট এই অতিকায় গর্তটি একটি উল্কাপিণ্ডের পরেই তৈরি হয়েছিল। যা আজ থেকে প্রায় ৬০০ মিলিয়ন বছর আগে মহাকাশ থেকে ছিটকে পড়েছিল বলেই ভূতত্ত্ববিদদের ধারণা। জানা যায়, এই রামগড় গর্তটি বিশ্ব ভূ-ঐতিহ্যের ২০০তম গর্ত হিসাবে স্বীকৃত হয়েছে। সতীশ ত্রিপাঠী আরও বলেন যে, এই অঞ্চলের গর্তটি যে উল্কা পড়েই সৃষ্টি হয়েছিল তা বৈজ্ঞানিকভাবেও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কারণ উল্কাপাতের প্রভাবে উৎপাদিত শক্তিতে বালি গলে যায় এবং কাঁচে পরিণত হয়। যার প্রমাণ মেলে এখানে। এছাড়াও গর্তটিতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পরিমাণে লোহা, নিকেল এবং কোবাল্ট পাওয়া গেছে। মহাকাশের অনেক গ্রহাণুতেই এই উপাদানগুলো বেশি পরিমাণে থাকে, ফলে এটিও উল্কাপাতের ঘটনার সত্যতা প্রমাণ করে।

জানা গিয়েছে, খাজুরাহো শৈলীর একটি দশ ​​শতকের শিব মন্দির রামগড় গর্তের সীমানায় অবস্থিত, যা 'মিনি খাজুরাহো' নামে পরিচিত। এই কাঠামোর ভিতরে দুটি হ্রদ অবস্থিত যা অনেক পরিযায়ী পাখির প্রাকৃতিক আবাসস্থল। এছাড়াও এখানে রয়েছে প্রায় ৯৫০ বছরের পুরানো দেবীর প্রাচীন মন্দির এবং কেলপুরি সমাধি স্থল। এছাড়া চিতল হরিণ এবং বুনো শুয়োরও পাওয়া যায় এখানে। ফলে এক যোগে এই ভ্রমণে মিতে পারে বহু আলাদা আলাদা স্বাদ গ্রহণের অনুভূতি। একদিকে অতিকায় জলাধারের মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ, অন্যদিকে ইতিহাস এবং স্থাপত্যের মিশেল। এছাড়া প্রাচীন মন্দিরের ঐতিহ্য তো আছেই। আর সব শেষে জঙ্গলের স্বাদ এবং পশু পাখির সঙ্গে মুলাকাত, সব মিলিয়ে বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে ভ্রমণের স্বাদকে।

More Articles